ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী বারবার কূটনীতির দৌড়ে এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্বের তাবড় নেতাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় মেতে ওঠার ছবি হয়ত অমলিন থেকে যাবে ভারতবাসীর কাছে। ওবামা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তখন তাঁকে বন্ধুত্বের সুরে ‘বারাক’ বলে ডাকতে শোনা গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীকে। ভারতে অতিথি করে এনেছিলেন ওবামাকে। এমনকি TIMES ম্যাগাজিনে মোদীর সম্পর্কে কলমও ধরেছিলেন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সেই রাষ্ট্রনেতা।
বদলেছে প্রশাসন। ক্ষমতায় এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একটু খামখেয়ালি সেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কটা এগোবে তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। আর ভারত-পাক ইস্যু নিয়ে সেই আমেরিকার সদ্য পারদ চড়েছিল খানিকটা।
মূলে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে ফিরে ভারতের বিরুদ্ধে বারবার আক্রমণও করতে শোনা যাচ্ছিল পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। কিন্তু, সোমবার প্যারিসে যে ছবি দেখা গেল, তা বোধহয় কাশ্মীরের থেকে বড় ধাক্কা হতে চলেছে ইমরান খানের জন্য।
প্রায় ১৯ মিনিট যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন মোদী ও ট্রাম্প। কয়েক মিটার দূরত্বে বসে বিশ্বের তাবড় মিডিয়ার মিডিয়ার সামনে কথা বললেন দু’জনে। একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিলেন তাঁরা। স্বভাবসিদ্ধভাবেই স্পষ্ট ও শুদ্ধ হিন্দিতে কথা বললেন নরেন্দ্র মোদী। বিষয়টা নতুন নয়। যে কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে এভাবেই হিন্দিতে কথা বলে থাকেন তিনি। সম্প্রতি ডিসকভারি চ্যানেলে বেয়ার গ্রিলসের অনুষ্ঠানে গিয়েও মোদীকে হিন্দিতে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। সুষমা স্বরাজও রাষ্ট্রসংঘে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট হিন্দিতেই বক্তব্য রাখতেন। তবে তার মানে এই নয় যে মোদী ইংরেজি বলতে পারেন না। আর সেই ধারনা ভেঙে দিলেন খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সাংবাদিক বৈঠকের শেষের দিকে দেখা গেল দুই নেতার মধ্যে আড্ডার মেজাজ। পদ কিংবা প্রোটোকল নয়- একেবারে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্পষ্ট ছবি ধরা পড়ল সব সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। দেখা গেল সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প বলছেন, ‘মোদী কিন্তু খুব ভালো ইংরেজি বলেন। শুধু বলতে চান না এই যা।’ এই কথা বলাতেই হাসিতে ফেটে পড়েন মোদী। ঠিক যেন বহ পুরনো বন্ধু। অনেকদিনের চেনা কোনও ব্যক্তির সম্পর্কে মন্তব্য করছেন ট্রাম্প। দু’জনেই হাত বাড়িয়ে দেন একে অপরের দিকে। মুহূর্তে বেড়ে যায় ক্যামেরার ফ্ল্যাশ। সেই কয়েক সেকেন্ড আপাতত ভাইরাল।
আর যত ছড়িয়ে পড়ছে সেই ভিডিও, দৃশ্যটা যে তত বেশি করে ইমরান খানকে আঘাত করতে চলেছে, সেটা বেশ অনুমানযোগ্য।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, কিছুদিন আগেই আমেরিকায় গিয়েছিলেন ইমরান খান। সেই সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আমার সাহায্য চেয়েছেন৷ এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারলে আমি খুবই খুশি হব। আমি দুই দেশের মধ্যস্থতাকারী হতে রাজি।” সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। সোমবার ট্রাম্পের পাশে বসে জোর গলায় সেই দাবি আরও একবার উড়িয়ে দিয়েছেন মোদী। বলেছেন, ”আমরা তৃতীয় কোনও দেশকে বরদাস্ত করব না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করব।” মোদীর এই অবস্থানও যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক জয়, তা বলা বাহুল্য।