জন সাধারণের দরবারে পৌঁছাতে ‘জন আশীর্বাদ যাত্রা” শুরু করছে মোদী সরকার, তৈরি হল মাস্টার প্ল্যান

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই মোদী সরকারের ক্যাবিনেট সম্প্রসারণ হয়। সংসদে অধিবেশনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে নতুন মন্ত্রীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি এবার সেই কাজ করতে পারেননি বিরোধীদের বাধায়। সেই কারণে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, তিনদিনের জন আশীর্বাদ যাত্রার মাধ্যমে সাধারণ জণগণের সঙ্গে নতুন মন্ত্রীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। ১৬ অগাস্ট থেকে ১৯ টি রাজ্যে সেই যাত্রা শুরু হবে।

বিজেপি নেতৃত্বের ভাবনা চিন্তা অনুযায়ী, এই জন আশীর্বাদ যাত্রায় উপস্থিত থাকবেন মোট ৪৩ জন মন্ত্রী। প্রত্যেকে নিজেদের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কিমি দূরে যাত্রার সূচনা করবেন। তিনদিন ধরে তাঁরা উপস্থিত থাকবেন খোলা ভ্যানে। নিজের জেলায় পৌঁছনোর আগে অবধি তাঁদের সকলকে তিন থেকে চারটি সংসদীয় কেন্দ্রে ঘুরতেই হবে। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, এই যাত্রার মাধ্যমে বিজেপি দেশের মোট ১৫০ টি কেন্দ্রের প্রায় ১৫ হাজার কিমি পথে প্রচারকার্য চালাতে পারবে। এই যাত্রার হাত ধরে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং মনিপুরের ভোটের প্রচারে বেশি পরিমাণে গতি আনা যাবে বলেই আশা করছে গেরুয়া শিবির।


শক্তিমন্ত্রী আরকে সিংকে তাঁর নিজের কেন্দ্র আরায় যেতে হলে গয়া থেকে যাত্রার শুভারম্ভ করতে হবে। অন্যদিকে আলোয়ার থেকে শুরু করে শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব পৌঁছাবেন রাজস্থানে। প্রতিটি মন্ত্রী রাত কাটাবেন গ্রামে কিংবা ছোট শহরে, যা তাঁদের যাতায়াতের রাস্তাতেই পড়বে। এই যাত্রার মাধ্যমেই তাঁরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হবেন।

উল্টোদিকে সমস্ত বিজেপি সাংসদদের ১৬ অগাস্ট থেকে নিজের কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিশেষত যে সময় জন আশীর্বাদ যাত্রা নিজেদের কেন্দ্রের ওপর দিয়ে যাবে, সেই সময়। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভার প্রত্যেক মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ যেন থাকে, সেদিকে নজর দেন।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, এই প্রথম বহু ওবিসি, পিছিয়ে পড়া শ্রেণী এবং ধর্মের মানুষদের স্থান দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যে, তাদের তরফ থেকে একজন প্রতিনিধিকে মন্ত্রিসভায় বিশেষ স্থান দেওয়া হয়েছে।জন আশীর্বাদ যাত্রার মাধ্যমে সমাজের সপিছিয়ে পড়া মানুষজনের থেকে আশীর্বাদ চাওয়া হবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে।

যে ১৯ রাজ্যজুড়ে জন আশীর্বাদ যাত্রা সংগঠিত করা হবে, সেই তালিকায় রয়েছে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, গুজরাত, অরুণাচল প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, মনিপুর, মহারাষ্ট্র, অসম, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা এবং কর্নাটক। নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই জন আশীর্বাদ যাত্রাকে দুর্দান্ত, আকর্ষণীয় এবং সাধারণ মানুষের কাছাকাছি পৌঁছনোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি করোনাবিধি মেনে সব কাজ করার জন্য কঠোর নির্দেশিকা বাধ্যতামূলক দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যে পথে এই জন আশীর্বাদ যাত্রা যাবে, সেই রাস্তায় কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প, উন্নয়নমূলক কাজ, প্রধানমন্ত্রী কাটআউট এবং বিজেপির পদ্ম চিহ্নে ভরিয়ে তোলার ব্যাপারেও নজর দিতে বলা হয়েছে। এমনকি পুরনোদের পাশাপাশি দলের নতুন সদস্যদের‌ও এই যাত্রায় রাখার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় এব্যাপারে অভিনব প্রচারের জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.