স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পরেই নরেন্দ্র মোদীর গুরুত্বপূর্ণ সফর শুরু হচ্ছে। ফলে আগামী ১৭-১৮ অগস্ট পুরো ভুটান জুড়ে বিশেষ নিরাপত্তার নির্দেশ জারি হয়েছে। বিখ্যাত ভুটান গেট বন্ধ থাকবে। সীমান্তের দুই পারেই বাণিজ্য হবে না।
১৭ অগস্ট দিনটি উত্তরবঙ্গে এমনিতেই নিরাপত্তা থাকে। এর কারণ, ২০০২ সালের ভয়াবহ সেই ধূপগুড়ি হামলা ও গণহত্যা। কামতাপুর লিবারেশন আর্মির জঙ্গিরা (কেএলও) এই দিনেই ভুটানের গোপন শিবির থেকে ধূপগুড়িতে ঢুকে স্থানীয় সিপিএম কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছিল। তাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়। সীমান্ত পারের এই জঙ্গি হামলার পর অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। প্রথম সারির কেএলও জঙ্গিরা পরে ধরা পড়লেও তাদের অনেকই এখনও নিখোঁজ। দলনেতা জীবন সিংহের বিষয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে বিস্তর।
এমন দিনে আলিপুরদুয়ার,জলপাইগুড়ি জেলায় সতর্কতা থাকেই। ভুটানি শহর ফুন্টশোলিং হল ভারতের আলিপুরদুয়ার জেলার লাগোয়া। দুই পারের জীবন রেখা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সড়ক পথ। মোদীর সফর উপলক্ষে সেই সড়কের শূন্য রেখায় দক্ষিণ এশিয়ার বিখ্যাত বাণিজ্যিক চেকপোস্ট বন্ধ থাকছে।
এর ফলে স্থানীয় ব্যবসাদার ও ছোট দোকানদার, হোটেল মালিকরা চিন্তিত। কারণ দু দিনের বাণিজ্য বন্ধ থাকার ধাক্কা। জনচঞ্চল জয়গাঁ দিয়েই ভুটানের ভিতর ঢুকে যায় মালবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস। সীমান্ত ফটক বন্ধ থাকায় সেই যাতায়াত হবে না। ভারতীয় ও ভুটানিরা সীমান্ত পার হওয়ার ক্ষেত্রেও থাকছে বিধি নিষেধ।
১৯৪৯ সালের ভারত-ভুটান বন্ধুত্বের চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় সেনা মোতায়েন থাকে প্রতিবেশী দেশটিতে। প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে যেমন রয়্যাল ভুটান আর্মি কড়া নিরাপত্তা দিচ্ছে, তেমনই অবস্থান ভারতীয় সেনার।
ফুন্টশোলিং সীমান্ত শহরেই জানলাম, রাজধানী থিম্পুতে ইতিমধ্যেই বিশেষ তল্লাশি শুরু হয়েছে। রাজা জিগমে খেসর নামগিয়াল ওয়াংচুক দেশটির সর্বচ্চো ক্ষমতার অধিকারী। মোদীকে রাজ পরিবার ও সরকারের তরফে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী ড. লোটে শোরিং ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ভুটান হল চিনের প্রতিবেশী দেশ। বলা ভালো, চিন ও ভারতের মাঝে থাকা একখণ্ড সবুজ ভূমি। ছোট হলেও ভুটানের কূটনৈতিক ভূমিকা অপরিসীম। কারণ দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মাঝে এর ভৌগোলিক অবস্থান। চিনা ড্রাগনের হাতছানিতে কি বজ্রড্রাগনের দেশ সাড়া দেবে ? কূটনৈতিক এই প্রশ্ন গত কয়েকবছর ধরে আন্তর্জাতিক মহল ভাবিত।
তবে ভুটান সরকারের অবস্থান এখনও পর্যন্ত ভারতের দিকেই। রাজধানী থিম্পুতে দূতাবাস খুলতে মরিয়া চিন। অন্যান্য দেশের দূতাবাস থাকলেও চিনের ডাকে এখনও সাড়া দেয়নি ভুটানের ওয়াংচুক রাজপরিবার। রাজা নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক দেশের এই অবস্থানে স্বস্তি পায় নয়াদিল্লি।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চিন যে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের বাণিজ্যিক চাল চেলেছে তার থেকে অদূর ভবিষ্যতে ভুটান কতটা দূরে সরে থাকবে এটাই আলোচনার বিষয় আন্তর্জাতিক মহলে।
ভারত-ভুটান-চিনের সীমান্ত যেখানে মিশছে সেই একখণ্ড ডোকলাম উপত্যকা নিয়ে উত্তেজনার পর প্রথমবার ভুটান সফরে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। আগামী ১৭-১৮ অগস্ট তাঁর সুরক্ষায় দেশটির সর্বত্র জারি নিরাপত্তা।