আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! আমাদের দেশ এই সময় একদিকে যেমন বর্ষা ঋতুর আনন্দ অনুভব করছে অন্যদিকে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে কোনো না কোনো উৎসব, মেলার আয়োজন করা হচ্ছে আর দীপাবলি পর্যন্ত এই রকমই চলবে। হয়তো আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের ঋতুচক্র, অর্থনৈতিক বিন্যাস, সামাজিক ব্যবস্থা এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যাতে কোনো অবস্থাতেই সমাজজীবনে শিথিলতা না আসে। গত কয়েকদিনে আমরা বেশ কিছু উৎসব পালন করলাম। গতকাল সমগ্র ভারতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব মহা সমারোহে পালিত হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণ এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি এত হাজার বছর পরেও প্রতিটি উৎসবে নূতনত্ব, নব প্রেরণা, নূতন শক্তি সৃষ্টি করেন যা কিনা আমাদের কল্পনারও অতীত। তিনি আজও যে কোনও সমস্যার সমাধানে উদাহরণ হয়ে উঠতে পারেন, প্রেরণা দিতে পারেন। যে কোনো ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের জীবন থেকে যে কোনো বর্তমান সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে পারে। এত শক্তিমান হওয়া সত্বেও তিনি রাসের উৎসবে বিলীন হয়ে যেতেন। কখনও গোরুদের মধ্যে, কখনও গোয়ালাদের সঙ্গে মিশে যেতেন। কখনো খেলাধূলায় মত্ত তো কখনো বাঁশি বাজানোয় নিমগ্ন। এত বিবিধতাপূর্ণ, মহাশক্তিমান কিন্তু তিনি সামাজিক শক্তির প্রতি সমর্পিত, লোকশক্তির প্রতি সমর্পিত এবং লোক-একজোট করার ক্ষেত্রে নূতন নিদর্শন স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব। বন্ধুত্ব কেমন হওয়া উচিত এজন্য সুদামার ঘটনাকে কি কেউ ভুলতে পারে! অপরদিকে এমন মহান ব্যক্তিত্ব সত্বেও রণভূমিতে সারথীর কাজ করতে রাজি হওয়ার কথাও বলা যেতে পারে। কখনও পাহাড় ওঠান তো কখনও খাবারের এঁটো থালা তোলেন — সব ব্যাপারেই যেন নূতনত্ব অনুভব করা যায়।
আজ আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন দুই মোহনের দিকে আমার মন চলে যাচ্ছে। একজন সুদর্শনচক্রধারী মোহন, অন্যজন চরকাধারী মোহন। সুদর্শনচক্রধারী মোহন যমুনা নদীর তীর ছেড়ে গুজরাটের সমুদ্রতীরে দ্বারকা শহরে গিয়ে অবস্থান করেন আর সমুদ্রতীরে জন্মানো মোহন যমুনার তীরে দিল্লিতে জীবনের অন্তিম দিন অতিবাহিত করেন। ঐ সময়ের পরিস্থিতিতে আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে সুদর্শনচক্রধারী মোহন যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিজ বুদ্ধি, কর্তব্য, সাহস এবং চিন্তাশক্তির উপযোগ করেছিলেন। চরকাধারী মোহনও স্বাধীনতার জন্য, মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত রাখতে, ব্যক্তিত্বের মূল তত্বকে সুদৃঢ় করতে এমন একটি রাস্তা নেন, স্বাধীনতার যুদ্ধকে এমন একটি রূপ দেন, এমন পরিবর্তন আনেন যা পুরো বিশ্বের কাছে অভিনব। আজও অভিনব পন্থা। নিস্বার্থ সেবা, জ্ঞান বা জীবনের সকল উত্থান-পতনে হাসতে হাসতে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বকে আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ থেকে শিখতে পারি।
এই কারণেই শ্রীকৃষ্ণকে জগতগুরু রূপে মানা হয়। “কৃষ্ণ বন্দে জগতগুরুম।” আজ আমরা যখন উৎসব নিয়ে আলোচনা করছি তখন ভারত এক বড়ো উৎসব পালনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমনকি পুরো বিশ্বেই এই উৎসবের আলোচনা চলছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি মহাত্মা গান্ধীর ১৫০-তম জন্মজয়ন্তীর কথা বলছি। পোরবন্দর সমুদ্রতীরে, যাকে আজ আমরা কীর্তিমন্দির বলি সেই ছোটো ঘরে ১৮৬৯ সালের ২-রা অক্টোবর একজন ব্যক্তিমাত্রই নয় এক যুগের জন্ম হয়েছিল, যিনি মানব ইতিহাসকে এক নূতন পথ দেখিয়েছিলেন, নূতন উৎকর্ষ স্থাপন করেছিলেন। সেবা, সেবাভাব, সেবার প্রতি কর্তব্যপরায়ণতা মহাত্মা গান্ধির জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল। তাঁর জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল।
আমরা যদি তাঁর পুরো জীবনকালটা দেখি, তাহলে দেখতে পাই দক্ষিণ আফ্রিকাতে তিনি সেই সম্প্রদায়ের মানুষের সেবা করেছেন যাঁরা বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। সেই সময়ে এটা কিন্তু একটা সামান্য কাজ ছিল না, তিনি সেই কৃষকদের সেবা করেছেন চম্পারণে যাদের সঙ্গে বিরূপ ব্যবহার করা হচ্ছিল। মিলের মজদুর — যাঁদের প্রাপ্য পারশ্রমিক দেওয়া হত না, তিনি তাদের সেবা করেছেন। গরীব, অসহায়, রুগ্ন, ক্ষুধার্ত মানুষের সেবা করাকে তিনি জীবনের অন্যতম কর্তব্য বলে মানতেন। কুষ্ঠ রোগ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারণা ছিল সেগুলিকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য তিনি নিজে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের সেবা করতেন যাতে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়। ‘সেবা’ কথাটি তিনি কেবলমাত্র একটি শব্দে নয়, কর্মের মধ্যে দিয়ে শিখিয়েছিলেন। ‘সত্য’র সঙ্গে গান্ধীজীর যেমন অটুট সম্পর্ক ছিল, ‘সেবা’র সঙ্গেও তাঁর তেমনই দৃঢ় সংযোগ ছিল। যে কোনও ব্যক্তি যেখানেই হোক, যখনই হোক বিপদে পড়লে তাঁকে সাহায্য করার জন্য মহাত্মা গান্ধী ছুটে যেতেন। তিনি শুধু সেবার কথায় জোর দিতেন না, সেবায় যে আত্মতৃপ্তি তার গুরুত্বও জানতেন। ‘সেবা’ শব্দটার সার্থকতা তখনই ঘটে যদি তা আনন্দের সঙ্গে করা হয়। তবেই ‘সেবা পরম ধর্ম’ হয়ে ওঠে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত আনন্দ ‘স্বান্ত সুখায়’ — এই ভাবনাও সেবা কথাটির মধ্যে অন্তর্নিহিত। এটা আমরা গান্ধীজীর জীবন পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই বুঝতে পারি। মহাত্মা গান্ধী অগণিত ভারতবাসীর স্বর হয়ে উঠেছিলেন।
বিশ্বের মানুষের মানবিক মূল্যবোধ মনুষ্যত্বের গরিমার সমবেত ধ্বনি হয়ে উঠেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর জীবনে ব্যক্তি ও সমাজ, মানব এবং মানবতাই একমাত্র চিন্তা ছিল। আফ্রিকার Phoenix Farm–এই হোক কি Tolstoy Farm, সবরমতী আশ্রম বা ওয়ার্ধা — সব জায়গাতেই এক মৌলিক ভাবনায় সমাজ বিকাশে community mobilisation-এ তিনি গুরুত্ব দিতেন। আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য পূজনীয় মহাত্মা গান্ধীজীর বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ হয়েছে। গান্ধীজী সেবা ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক শক্তির প্রতিও গুরুত্ব দিতেন। সমাজসেবা এবং সামাজিক সংহতি, community service এবং community mobilisation — এই দুই ভাবনা আমরা ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে চাইছি। প্রকৃত অর্থে এই ভাবনা প্রয়োগেই মহাত্মা গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিও জানানো যায়, কাজের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয়। এমন অনেক উপলক্ষ আসে, আমরা যে বার্ষিকী / দিবস পালন করে থাকি কিন্তু ‘গান্ধী ১৫০’! আসবে আর চলে যাবে এ-কি আমরা মেনে নিতে পারি? দেশবাসী! তা কিছুতেই হতে পারে না।
আসুন, আমরা সবাই মিলে আত্ম-অনুসন্ধান করি, নিজেরা ভাবি এবং সম্মিলিতভাবে এই নিয়ে চর্চা করি। আমরা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে, শহর-গ্রাম সব জায়গার, সব বয়সের নারী-পুরুষ — সবার সঙ্গে আলোচনা করি। আসুন, একজোটে সমাজের জন্য কি করা যায়? কোন প্রয়াসে আপনি সহযোগী হতে পারেন তা চিন্তা করি আসুন। আমি নিজে কতটা value addition করতে পারি? সম্মিলিত শক্তির নিজের একটা জোর আছে। ‘গান্ধী ১৫০’ উদ্যাপন বছরে সেবাকর্মও হোক, আবার সম্মেলক প্রয়াসের বিকাশ হোক এই উপলক্ষে। চলুন, আমরা পাড়ার সকলে একসঙ্গে বেরিয় পড়ি। ফুটবল খেলোয়াড়রা তো ফুটবল খেলবেনই, তার সঙ্গে সঙ্গে গাঁধিজীর আদর্শের কিছু কাজ করতে এগিয়ে আসুন। Ladies Club! আধুনিক মহিলাদের নিজস্ব Ladies Club হয়েছে এখন। তাঁরা সব বন্ধুরা মিলে কোনো না কোনো সমাজসেবামূলক কাজ পরিচালনা করতে পারেন। পুরোনো বই সংগ্রহ করে গরীব মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা যেতে পারে। এতে জ্ঞানের প্রসার ঘটবে। ১৩০ কোটি দেশবাসীর কাছে ১৩০ কোটি ভাবনা রয়েছে এবং সেই মত ১৩০ কোটি কর্ম-ভাবনাও রয়েছে। কোনও বাধা নেই, যার মনে যা আসবে, সদিচ্ছায়, সদ্ভাবনায় পূর্ণ আত্মসমর্পণের মানসিকতায় সে কাজ করে গেলে এক অনন্য আনন্দ অনুভূতি লাভ হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কয়েক মাস আগে আমি গুজরাটের ডান্ডি গিয়েছিলাম। স্বাধীনতা আন্দোলনে লবণ সত্যাগ্রহ, ডান্ডি এক গুরুত্বপূর্ণ turning point। মহাত্মা গান্ধীর উদ্দেশে ডান্ডিতে এক অত্যাধুনিক museum উৎসর্গ করেছি। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ এই সময়ে গান্ধীজীর স্মৃতিবিজড়িত কোনও না কোনও জায়গায় ঘুরে আসুন। সেটা যে কোনও জায়গা হতে পারে — পোরবন্দর, সবরমতী আশ্রম, চম্পারণ, ওয়ার্ধার আশ্রম বা দিল্লির যেসব জায়গায় মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেখানে গেলে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দিন, তাতে অন্যান্য মানুষও উৎসাহী হবে এবং সেই ছবির সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি দু-চার কথা লিখে দিন। আপনার ভেতরে যে ভাবনার উন্মেষ হল, কোনও বিশেষ গ্রন্থের কোনও উদ্ধৃতি লিখলে তাতে গুরুত্ব বাড়বে। এমনও হতে পারে গান্ধীজীকে নিয়ে আপনার সেই ভাবনা অন্য আরও অনেকের কাছে আজকের দিনের পক্ষে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।
আগামী দিনে অনেক কার্যক্রম, প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করা হচ্ছে। এই অবকাশে আপনাদের একটি চমৎকার খবর দিই। Venice Biennele একটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ art show। সেখানে সারা বিশ্বের সেরা চিত্রকরদের সমাবেশ ঘটে। এবারের ভেনিস বাইএনেলের India Pavilion–এ আমি গান্ধিজীর স্মৃতি বিজড়িত অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। এতে হরিপুরা প্যানেলগুলি বিশেষ ভাবে মনোগ্রাহী ছিল। আপনাদের মনে আছে গুজরাতের হরিপুরাতে কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল, যেখানে সুভাষ চন্দ্র বোসকে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘটনা ইতিহাসে নথিবদ্ধ আছে। এইসব Art Panel-গুলোর এক খুব সুন্দর অতীত রয়েছে। কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনের আগে ১৯৩৭-৩৮ সালে মহাত্মা গান্ধী শান্তিনিকেতনের কলাভবনের তখনকার অধ্যক্ষ নন্দলাল বোসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
গান্ধীজী চেয়েছিলেন ভারতে বাস করা লোকেদের জীবনশৈলীকে শিল্পকলার মাধ্যমে দেখানো হোক, আর এই Art Work অধিবেশন চলাকালীন প্রদর্শিত হোক। ইনি সেই নন্দলাল বোস যাঁর শিল্পকলা আমাদের সংবিধানের শোভা বর্ধন করে। সংবিধানকে এক নতুন পরিচয় দেয়। তাঁর শিল্পকলার এই চর্চা সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গে নন্দলাল বোসকেও অমরত্ব প্রদান করেছে। নন্দলাল বোস হরিপুরার আশেপাশের গ্রামগুলি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তারপর গ্রামীণ ভারতকে নিয়ে কিছু art canvas তৈরি করেছিলেন। এই অমূল্য শিল্পকলার খুব আলোচনা হয়েছিল ভেনিসে। আর-একবার গান্ধীজীর সার্ধশতবর্ষের অভিনন্দনের সঙ্গে প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে কিছু না কিছু সংকল্প করার আবেদন জানাচ্ছি। দেশের জন্য, সমাজের জন্য, অপরের জন্য কিছু না কিছু করা দরকার। এটাই বাপুর প্রতি আমাদের সুন্দর, সত্য ও প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে।
ভারত মায়ের সুসন্তানেরা, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বিগত কিছু বছর ধরে আমরা ২রা অক্টোবরের আগে দু-সপ্তাহ ধরে সারা দেশে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ অভিযান চালাই। এবছর এটা ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। এই সময়ে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে শ্রমদানের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাব। ঘর হোক বা গলি, চক-চৌরাস্তা হোক বা নর্দমা, স্কুল, কলেজ থেকে সমস্ত সার্বজনিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার মহা অভিযান চালাতে হবে। এই বার প্লাস্টিকের উপর বিশেষ জোর দিতে হবে। ১৫ই অগাস্ট লালকেল্লা থেকে আমি এটাই বলেছিলাম, যে উৎসাহ আর উদ্দীপনার সঙ্গে ১২৫ কোটি ভারতবাসী স্বচ্ছতার অভিযান চালিয়েছিল, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম থেকে মুক্তি পাওয়ার কাজ করেছিল, ঠিক তেমন ভাবে আমাদের একসঙ্গে single use plastic-এর ব্যবহারের অবসান করতে হবে।
এই অভিযানকে নিয়ে সমাজের সকল প্রকার মানুষের মধ্যে উৎসাহ আছে। আমার অনেক ব্যবসায়ী ভাই-বোনেরা দোকানের এক তক্তাতে placard লাগিয়ে দিয়েছে, যেখানে লেখা আছে খরিদ্দার যেন নিজের থলে সঙ্গে নিয়েই আসে। এতে পয়সাও বাঁচে আর পরিবেশকে রক্ষা করার নিজের অংশীদারিত্বও দেখাতে পারেন। এবার ২রা অক্টোবরে যখন বাপুর সার্ধশতবর্ষ পালিত হবে, তখন তাঁকে কেবল খোলা জায়গায় শৌচকর্ম মুক্ত ভারত সমর্পণ করবো না, ঐ দিন প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে এক নতুন জন আন্দোলনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে। আমি সমাজের সকল সম্প্রদায়কে, প্রত্যেক গ্রাম, মফঃস্বল আর শহরের নিবাসীদের আবেদন জানাই, হাতজোড় করে প্রার্থনা করতে চাই, এই বছরের গান্ধী জয়ন্তী এক রকম ভাবে আমাদের এই ভারতমাতাকে প্লাস্টিক জঞ্জাল থেকে মুক্তির জন্য পালন করা হোক। ২রা অক্টোবর বিশেষ দিন হিসেবে পালিত হোক। মহাত্মা গান্ধী জন্মজয়ন্তীর দিন এক বিশেষ শ্রমদানের উৎসবে পরিণত হোক।
দেশের সমস্ত Municipal Corporation, Municipality, জেলা প্রশাসন, গ্রাম-পঞ্চায়েত, সরকারি-বেসরকারী সমস্ত সংস্থা, সমস্ত সংগঠন, প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি আমার অনুরোধ, প্লাস্টিক জঞ্জালের collection এবং storage-এর সঠিক ব্যবস্থা করুন। আমি corporate sector-কেও অনুরোধ করছি, যখন এ সমস্ত বাতিল প্লাস্টিক এক জায়গায় হয়ে যাবে, এর থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য এগিয়ে আসুন এবং disposal-এর ব্যবস্থা করুন। একে recycle-ও করা যেতে পারে। একে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ভাবে দীপাবলির আগেই আমরা প্লাস্টিক জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেতে পারি। কেবল সদিচ্ছার দরকার। অনুপ্রেরণার জন্য এখানে ওখানে দেখার দরকার নেই, গান্ধীজীর থেকে বড় কেউ প্রেরণাদায়ক হতে পারে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সংস্কৃত সুভাষিত, এক রকম জ্ঞানের রত্ন। আমাদের জীবনের সমস্ত দরকারি বিষয় সবই ওখান থেকে পাওয়া যেতে পারে। আজকাল ওই ভাষার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক কমে গেছে কিন্তু আগে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আজ আমি এক সংস্কৃত সুভাষিতের দ্বারা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে স্পর্শ করতে চাই, এটা বহু পূর্বে লেখা এক বিষয়, কিন্তু আজও এর বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। এটা একটা উত্তম সুভাষিত যার অভিব্যক্তি এইরকম-
“পৃথিব্যাং ত্রীণি রত্নানি জলমন্নং সুভাষিতম্।
মূঢ়ৈঃ পাষাণখণ্ডেষু রত্নসংজ্ঞা প্রদীয়তে”
যার অর্থ, পৃথিবীতে জল, অন্ন আর সুভাষিত হলো তিন রত্ন। মূর্খরা পাথরকে রত্ন বলে। আমাদের সংস্কৃতিতে অন্নের অনেক বেশি মহিমা রয়েছে। এমনকি আমরা খাদ্যশস্য সংক্রান্ত জ্ঞানকে বিজ্ঞানে পরিবর্তন করেছি। সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার আমাদের সকলের প্রয়োজন। বিশেষ করে, মহিলা এবং নবজাতক শিশুদের জন্য। কারণ এরাই আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ ভিত্তি। ‘পোষণ অভিযান’-এর অন্তর্গত পুষ্টিকে সারা দেশে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গণ-আন্দোলনে পরিণত করা হচ্ছে। মানুষ নতুন এবং মনোরঞ্জক পদ্ধতিতে অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
এক সময়ে, আমার নজরে একটা বিষয় আনা হয়েছিল — নাসিকে ‘মুঠ্ঠি ভর ধান্য’ শীর্ষক এক বড় আন্দোলন হয়েছিল। এখানে ফসল কাটার দিনে অঙ্গণবাড়ির সেবিকারা সবার থেকে এক এক মুঠো শস্য একত্র করতো। এই খাদ্যশস্য শিশু ও মহিলাদের জন্য গরম খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হত। এর ফলে যিনি দান করছেন তিনি এক সচেতন নাগরিক ও সমাজসেবক হয়ে যান। এর পর, ঐ ব্যক্তি এই লক্ষ্যে নিজেকে সমর্পণ করেন এবং এই আন্দোলনে তিনিও একজন সৈনিক হয়ে যান।
আমরা সবাই ভারতবর্ষের প্রত্যেক জায়গায় প্রত্যেক পরিবারে অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের কথা শুনেছি। এই অনুষ্ঠান তখনই করা হয় যখন ছোটো বাচ্চাকে প্রথমবার শক্ত খাবার খাওয়ানো হয়। Liquid food নয় Solid food।
গুজরাতে ২০১০ সালে ভাবা হয়েছিল অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে বাচ্চাকে complementary food দেওয়া হোক, যাতে মানুষের মনে এ বিষয়ে সচেতনতা আসে। এটা এক খুবই মহৎ উদ্যোগ যা কিনা সর্বত্রই গ্রহণ করা যায়। অনেক রাজ্যে মানুষেরা ‘তিথি ভোজন’ অভিযান পালন করেন। যদি কোনো পরিবারে জন্মদিন, কোনো শুভদিন, কোনো স্মৃতিদিবস থাকে, তবে পরিবারের সদস্যরা সুস্বাদু, পুষ্টিকর খাবার তৈরি করে অঙ্গণবাড়ি, বিদ্যালয়ে যান এবং পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই বাচ্চাদের পরিবেশন করে খাবার খাওয়ান, নিজের আনন্দ সবার মধ্যে ভাগ করেন, যা আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এইভাবে সেবাভাব ও আনন্দভাবের এক অদ্ভুত মিলন লক্ষ করা যায়।
বন্ধুরা, এইরকম অনেক ছোটো ছোটো বিষয় আছে যেগুলির দ্বারা আমাদের দেশ অপুষ্টির বিরুদ্ধে এক ফলপ্রসূ লড়াই লড়তে পারে। আজ সচেতনতার অভাবে ‘অপুষ্টি’ গরীব এবং ধনী উভয় ব্যক্তিদের পরিবারেই প্রভাব বিস্তার করেছে।
সারা দেশে সেপ্টেম্বর মাসে ‘পোষণ অভিযান’ পালন করা হবে। আপনি অবশ্যই এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং নতুন কোনও ভাবনা যুক্ত করবেন। যদি আপনি দু-একজন ব্যক্তিকেও অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন, তার অর্থ আমাদের দেশও অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
হ্যালো স্যার, আমার নাম সৃষ্টি বিদ্যা। আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। স্যার, ১২ই অগাস্ট যে episode দেখেছিলাম, সেখানে Bear Grylls-এর সঙ্গে আপনিও উপস্থিত ছিলেন। স্যার, আপনার ওই episode দেখে আমি মুগ্ধ! প্রথমত এটা শুনে আমার খুবই ভালো লেগেছে যে আপনি আমাদের এই প্রকৃতি, বন্যপ্রাণ এবং পরিবেশ নিয়ে কত চিন্তা-ভাবনা করেন, এ সব বিষয়ে কত খেয়াল রাখেন। স্যার, আপনার এই নতুন adventurous ভাবমূর্তি আমার খুব ভালো লেগেছে।
স্যার, আমি জানতে ইচ্ছুক, এই episode তৈরি হওয়ার সময় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল।
স্যার, সবশেষে আর একটি কথা যোগ করতে চাইছি, আপনার fitness level দেখে আমাদের মতো তরুণরা অনেক বেশি প্রভাবিত এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। আপনাকে এত fit এবং fine দেখে।
সৃষ্টিজী, আপনার ফোনের জন্য ধন্যবাদ। আপনার মতই, হরিয়ানার সোহনা থেকে কে.কে. পাণ্ডে এবং সুরাতের ঐশ্বর্য শর্মার সঙ্গে আরও কয়েকজন Discovery Channel-এ দেখানো ‘Man Vs Wild’ episode-এর বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এইবার যখন ‘মন কি বাত’ নিয়ে আমি চিন্তা-ভাবনা করছি, তখনই আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছিল যে এই বিষয়ের উপর অনেক অনেক বেশি প্রশ্ন আসবে এবং তাই-ই হলো। গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ আমি যেখানেই গিয়েছি এবং যাঁদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, ‘Man Vs Wild’ প্রসঙ্গ উঠেছে। এই একটা episode-এর মাধ্যমে আমি শুধুমাত্র ভারতবর্ষই নয়, বিশ্বের সব জায়গার যুবসম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছি। আমি কখনই ভাবতে পারিনি যে যুবপ্রজন্মের মনে আমার এমন একটা জায়গা তৈরি হবে। আমি কখনও এটা চিন্তা করিনি যে আমাদের দেশের এবং বিশ্বের যুবসমাজ কত বিচিত্র বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। এটা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে কোনোদিন বিশ্বের যুবসম্প্রদায়ের হৃদয় আমি এভাবে স্পর্শ করতে পারবো, আমার জীবনে এরকম একটা সুযোগ আসবে।
গত সপ্তাহে আমি ভুটান গিয়েছিলাম। আমি দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি যখনই বিশ্বের কোনো জায়গায় গিয়েছি, কারও সঙ্গে বসে কথা বলেছি, তখনই যোগা সম্বন্ধে অন্ততঃ পাঁচ-সাত মিনিট আলোচনা হয়েছে। এই দুনিয়ায় এমন কোন বড় নেতা নেই যিনি আমার সঙ্গে যোগ বিষয়ে চর্চা করেননি। এটাই আমি অনুভব করেছি। কিন্তু আজকাল এক নতুন অনুভূতি হচ্ছে। যার সঙ্গেই সাক্ষাৎ হোক, যেখানেই কথা বলার সুযোগ আসুক, সবাই wildlife ও environment–এর বিষয়ে আলোচনা করছে। Tiger, Lion, জীব-সৃষ্টি — আমি অবাক হয়ে যাই যে লোকেদের কত রকম বিষয়ে উৎসাহ থাকতে পারে।
Discovery চ্যানেল এই অনুষ্ঠানকে ১৬৫টি দেশে স্থানীয় ভাষায় সম্প্রচার করার পরিকল্পনা করেছে। আজ যখন পরিবেশ, global warming, climate change নিয়ে বিশ্বব্যাপী চিন্তাভাবনা চলছে, আমি আশা রাখি যে এইরকম কর্মসূচিকে ভারতবর্ষের বার্তা, ভারতীয় পরম্পরায় প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা — এই সমস্ত বিষয় বিশ্বকে অবহিত করানোর জন্য Discovery চ্যানেলের এই এপিসোড খুবই সাহায্য করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভারতে climate justice ও clean environment বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপগুলি এখন লোকেরা জানতে চাইছে। কিন্তু আরেকটা কৌতুহলের বিষয় হলো কিছু লোক সংকোচের সাথে আমাকে একটা কথা অবশ্যই জিজ্ঞাসা করেন যে, মোদিজী, আপনি হিন্দি বলছেন আর বিয়ার গ্রিলস হিন্দি জানেন না! এত দ্রুতগতিতে আপনারা কি করে আলাপ করছিলেন? এটা কি পরে এডিট হয়েছে? এটা কি বার বার শুটিং করা হয়েছে? কি হয়েছিল? খুব কৌতুহলের সঙ্গে জানতে চায়।
দেখুন, এতে কোনো রহস্য নেই। কিছু লোকের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন আছে, তাই আমি এই রহস্যকে উন্মোচন করছি। আসলে এটা কোনো রহস্যই নয়। Reality এটাই যে বিয়ার গ্রিলস এর সাথে কথাবার্তায় টেকনোলজির পুরোপুরি ব্যবহার হয়েছে। যখনই আমি কিছু বলতাম তখনি দ্রুত তা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে যেত। Simultaneous interpretation অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদ হত এবং বিয়ার গ্রিলস এর কানে কর্ডলেসের মতন ছোট instrument লাগানো ছিল। আমি বলতাম হিন্দি কিন্তু উনি শুনতেন ইংরেজিতে। এই কারণেই কথাবার্তা খুব সহজ হয়ে যেত আর technology-র এটাই কামাল। এই শো-এর পরে আমি লক্ষ করেছি যে, অনেক লোক জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের বিষয়ে আলোচনা করছেন। আপনারাও nature আর wildlife — প্রকৃতি আর বন্যপ্রাণী অধ্যুষিত জায়গায় অবশ্যই যান। আমি আগেও বলেছি, আমি আবার বলছি।
আপনারা নর্থ ইস্ট অবশ্যই যান। সেখানকার প্রাকৃতিক শোভা দেখে আপনারাও মুগ্ধ হয়ে যাবেন। আপনার মন প্রসারিত হয়ে যাবে। ১৫-ই আগস্ট লালকেল্লা থেকে আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম, যে আগামী তিন বছরে কমপক্ষে ভারতের ১৫ টি জায়গা — ১০০ শতাংশ tourism এর জন্য ১৫ টি জায়গায় যান, দেখুন, চর্চা করুন, পরিবার নিয়ে যান, কিছু সময় ওখানে কাটান। বৈচিত্র্যময় দেশ আপনাকে এক শিক্ষকের মতন আপনার মধ্যেও বৈচিত্র্যে পূর্ণ করে দেবে। আপনার জীবনের, আপনার ভাবনার প্রসার ঘটবে। আমাকে ভরসা করুন, হিন্দুস্থানের ভেতরেই এমন জায়গা আছে যেখান থেকে আপনি নতুন আনন্দ, নতুন উৎসাহ, নতুন আশা, নতুন প্রেরণা সংগ্রহ করতে পারবেন। এমনও হতে পারে কিছু কিছু জায়গায় বারবার যেতে আপনার মন চাইবে, আপনার পরিবারেরও তাই হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, ভারতে পরিবেশের প্রতি care আর concern অর্থাৎ দেখভালের চিন্তা খুবই স্বাভাবিক। গতমাসে দেশে tiger census জারী করার সৌভাগ্য হয়েছিল। আপনারা কি জানেন ভারতে বাঘের সংখ্যা কত? ভারতে ২৯৬৭-টি বাঘ আছে। Two Thousand Nine Hundred Sixty Seven! কয়েক বছর আগে এর অর্ধেকও খুব কষ্টে পাওয়া যেত। বাঘেদের নিয়ে ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে ‘টাইগার সামিট’ হয়েছিল। এখানে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যার হ্রাসপ্রাপ্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটা সংকল্প নেওয়া হয়েছিল। এই সংকল্প ছিল ২০২২ সালের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। কিন্তু এটা হল ‘নিউ ইন্ডিয়া’ — ‘নতুন ভারত’, যেখানে আমরা লক্ষ্য অনেক তাড়াতাড়ি পূরণ করে ফেলেছি।
আমরা ২০১৯-এর মধ্যেই আমাদের এখানে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছি। ভারতে শুধু বাঘের সংখ্যাই নয়, ‘প্রটেক্টেড এরিয়া’ আর কমিউনিটি রিজার্ভ-এর সংখ্যাও বেড়েছে।