সমগ্র দুনিয়া এখন করোনার অতিমারীর সম্মুখীন হয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে। সেই অবস্থায় ভারত সংযম, সহযোগ পালন করে নিজেকে করোনা মহামারীর হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে এই সফলতা প্রাপ্ত হওয়া সম্ভবপর হয়েছে।
সম্পূর্ণ ভারতের প্রতিটি প্রদেশ করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। দীর্ঘ সময় লকডাউন থাকার ফলে লোকজীবনে আর্থিক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ভারত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই উন্নয়ন একেবারে নিম্ন স্তর থেকে সূচিত হয়। গ্রামীন জীবনের উন্নয়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন জড়িত থাকে। তাই বিশ্বনাথ মন্দিরের কয়েকটন ফুল প্রতিদিন নিকটবর্তী গ্রামে যায় তা থেকে আতর, ধূপ ইত্যাদি প্রস্তুত করার জন্য। আমাদের দেশ অতিপ্রাচীন কাল থেকে সুগন্ধী নির্মাণের জন্য সুবিদিত। তবে আমরা কেন সেই সুগন্ধী শিল্পকে নিজেদের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করব না? তাই আজ বিশ্বনাথ মন্দিরের ফুলের উপর ১১৬ টি গ্রাম্য পরিবারের সুস্থ জীবনধারন সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভিয়েতনামের মুখাপেক্ষিতার দিন শেষ হতে চলেছে।
হ্যাঁ , বিজনেস ম্যানেজমেন্ট-এ একটি কথা খুব গুরুত্ব দিয়ে বোঝানো হয় যে, সফল ব্যবস্থাপক হলেন তিনি, যিনি সমস্যার মধ্যেও সুযোগ তৈরি করেন।
আজ অর্থাৎ ২৪/০৫/২০ তারিখে পাঞ্চজন্য ও অর্গানাইজার পত্রিকার ব্যবস্থাপনায় উত্তরপ্রদেশের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজির সঙ্গে দেশের অন্যতম বড় সংবাদ সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা মিলিত হয়েছিলেন। সেই আলোচনা সূত্রে যোগীজীর মধ্যেও এই ধরনের নেতৃত্ববোধের ঝলক দেখা গেল।
‘ওয়েবনার’-এর মূল বিষয় ছিল–সজাগ থেকে সাফল্য.. প্রসঙ্গ করোনা পরিস্থিতি। এই আন্তর্জালোচনায় (ওয়েবনার) পশ্চিমবঙ্গ থেকে যোগ দিয়েছিলেন তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব –বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, অধ্যাপক দেবযানী ভট্টাচার্য এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।
রন্তিদেববাবু প্রশ্ন করেন এত বিশাল সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক এবং নুয়ে পড়া অর্থনীতি নিয়ে যোগীজি কী ভাবছেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে যোগীজি বেশকিছু মূল্যবান তথ্য এবং এক নতুন দিকনির্দেশনার অবতারণা করেন।
তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক উত্তরপ্রদেশে ফেরত এলে প্রথম কাজ যেটা ত়াঁর সরকার করেছেন তা হল, সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দক্ষতার পরিসংখ্যান তৈরি করা। তার ভাষায়.. একইসাথে health screening এবং skill mapping.
স্ক্রিনিং এবং কোয়ারেন্টাইন করার পরে তাঁদের পুরো পরিবারের ১৫ দিনের রেশনসহ বাড়িতে রেখে আসা যেমন হয়েছে, তেমনি রাজ্যের ৭৫ টি জেলাস্তরে তাঁদের দক্ষতা অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাসও করে রাখা হয়েছে।
একদিকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রতিটি জেলায় কোভিড রোগী সনাক্তকরণ, পৃথকীকরণ, কোভিড লেভেল ১, ২ এবং ৩ চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, উপযুক্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা, ২৩ কোটি রাজ্যবাসীকে ৫ বার খাদ্যসামগ্রী বণ্টনের জন্য দায়িত্ব ভাগ করে বিভিন্ন মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে । তেমনি তার সঙ্গেই আলাদা কমিটিও তৈরি করা হয়েছে যারা প্রতিটি জেলা এবং ব্লকস্তরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠিগুলির অর্থনৈতিক বিকাশ, আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প তৈরি করা শুরু করেছে।
ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে কথা বলে ব্যাঙ্কিং করোসপন্ডেন্স ‘সখী’ বলে একটি কর্মসংস্থানের প্রকল্পের সৃষ্টি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদেরও ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা যায়। তেমনি বিভিন্ন FPO গুলোকেও নানা ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে যাতে এদের মাধ্যমে কৃষকেরা তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রতিটি জেলার প্রাকৃতিক সম্পদভিত্তিক ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় দক্ষ প্রবাসী শ্রমিকদের শিক্ষিত করা চলছে।
এই কর্মোদ্যোগের ফলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ২৪ ঘন্টা পরেই উত্তরপ্রদেশ সরকার এমন ৫৭০০০ কুটিরশিল্প গড়ে তোলার আর্থিক সঙ্গতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপারিশ পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
প্রসঙ্গত তিনি আরও জানান, এক জার্মান কোম্পানি যারা বর্তমানে চিন থেকে তাদের ফ্যাক্টরি ভারতে সরিয়ে আনতে চান, তাদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা চূড়ান্তের পথে। মূলত জুতো বানানোয় সুপ্রসিদ্ধ এই কোম্পানি আগ্রায় বছরে ২৫-৩০ লাখ জুতো তৈরি করবে।
প্রবাসী দক্ষ শ্রমিকদের সাহায্যে স্থানীয় সম্পদভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তিনি আশার কথা শুনিয়েছেন।
পোশাক শিল্প ঘিরে ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর সরকারের করা স্কিল ম্যাপিং-এ ধরা পড়েছে, উত্তরপ্রদেশে অনেক জেলায় প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক এসেছেন যারা সূচীশিল্পে দক্ষ। তাদের হাত ধরে উত্তরপ্রদেশ তথা ভারত পোশাকশিল্পে প্রভূত উন্নতি করতে পারবে।
দেবযানী ভট্টাচার্য যোগীজির কাছে পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ দিয়ে জানতে চান, ইচ্ছাকৃতভাবে লকডাউন অমান্য করে করোনা সংক্রমণ আটকানোর প্রচেষ্টা তাঁর রাজ্যে হলে তিনি কীভাবে তার প্রতিবিধান করতেন।
এর উত্তরে যোগীজি বলেন, তিনি মর্যাদাপুরোত্তম শ্রীরামের পথ অনুসরণ করেছেন এবং করতেন। শ্রী রাম বলেছেন, সুজনের সঙ্গে শাস্ত্রের ব্যবহার এবং দুর্জনের সাথে শস্ত্রের ব্যবহার সর্বদাই বাঞ্ছনীয়। তিনি বলেন, তাঁর রাজ্যের ২৩ কোটি মানুষ লকডাউনের বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ পালন করছেন, যার জন্য এত বিপুল সংখ্যক স্থানীয় এবং প্রায় সমসংখ্যক অন্য রাজ্যের প্রবাসী মানুষকে সম্পূর্ণ মানবিক সাহায্য প্রদান করার পরেও তাঁর রাজ্যে করোনা সংক্রমণ হয়েছে ৬০০০ জনের এবং যার অর্ধেক রোগমুক্ত হয়েছেন। এখন সরকারের ৭৫ হাজার লোক কেবলমাত্র স্ক্রিনিংয়ের কাজ করছেন। এর ফলে করোনা সংক্রমণকে অনেকটাই প্রতিহত করা গেছে।
রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে প্রশ্ন করেন যে, বামপন্থী ও তথাকথিত লিবেরালরা বলে থাকেন যে, যোগীজি রাম নিয়েই পড়ে থাকেন এবং ভীষণ পরিস্থিতিতেও অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর করোনা নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই, এই সমালোচকদের তিনি কী বলতে চান।
এর উত্তরে যোগীজি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেন, কে কী বলল তাতে তাঁর কিছু এসে যায় না। তিনি রাম আর রুটি এই দুটোকে নিয়েই এগিয়ে চলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশ তার ২৩ কোটির মতো বিপুল সংখ্যক রাজ্যবাসীর কাছে ধর্ম জাতপাত নির্বিশেষে এখনও অবধি ৫ বার পারিবারপিছু প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। জুনের প্রথমেই আরও একবার পৌঁছনো হবে। জাতপাত ধর্মমত নির্বিশেষে ৩২ লাখ মানুষকে মাসিক ভাতা দিয়েছে। করোনাকালীন পেনশন পৌঁছে দিয়েছে ৮৬ লাখ লোককে। ১৬০০০ স্পেশাল বাসের ব্যবস্থা করে ভিন রাজ্যে আটকে থাকা উত্তরপ্রদেশের শ্রমিক শুধু নয়, দিল্লী মহারাষ্ট্র থেকে একপ্রকার গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া কয়েক লাখ বাংলা ও বিহার রাজ্যের শ্রমিককেও সমগ্র যাত্রাপথে খাবার জল, খাদ্য, বিশ্রাম এবং সম্ভব হলে যানবাহনের ব্যবস্থাও তাঁরা করেছেন , কারণ তিনি পরম প্রজাপালক শ্রীরাজারামের অনুসারী।
এরপর তিনি কটাক্ষ করে বলেন যে, অপরদিকে যাঁরা রামনাম ছেড়েছেন, মানুষকে রামনামে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের নিজেদের রাজ্যে মানুষ দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে।
গোটা দেশের লোক দেখছে ঐ রাজ্যের লিবেরাল নেতৃত্ব বিশেষ শ্রেণীকে তোষণ করতে গিয়ে সারা রাজ্যবাসীকে কেমনভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।
প্রবাসী শ্রমিকরা আর কোনওদিন উত্তর প্রদেশের বাইরে যাবেন না।
যোগীজি এদিন বলেন, প্রবাসী শ্রমিক যাঁরা ফিরে আসছেন, বা অন্য রাজ্যের যে-সব শ্রমিক এরাজ্যে আছেন, তাঁদের জন্য তাঁর সরকার এমন পরিকল্পনা নিচ্ছেন যাতে তাঁরা আর কোনোদিন উত্তরপ্রদেশের বাইরে যাওয়ার কথা ভাববেন না। তাঁদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার অঙ্গ হিসাবে বিমা প্রকল্পের ঘোষণা করে তিনি বলেন, প্রত্যেকের দক্ষতা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করা হবে। করোনা-পরবর্তী আর্থিক পুনর্গঠনে ক্ষুদ্র, মাঝারি (এম এস এম ই) শিল্পকে ব্যাপকভাবে ঋণ দেওয়ার যে প্রকল্প কেন্দ্র ঘোষণা করেছে তার প্রথম দিনেই উত্তরপ্রদেশ ৫৭ লক্ষ লোককে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এই এমএসএমই-তেই প্রবাসী শ্রমিকদের সম্মানের সঙ্গে নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে যোগী সরকারের।