গাড়ি শিল্পকে যে মন্দা ক্রমশ গ্রাস করছে তা গত কয়েক মাসে উৎপাদন ও বিক্রির ছবিতেই স্পষ্ট ধরা পড়ছিল।
বুধবার সকালে মারুতির নতুন ঘোষণা কার্যত তামাম শিল্পমহলে হইচই ফেলে দিল। এ দিন সকালে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে মারুতি জানিয়ে দিল, আগামী ৭ ও ৯ সেপ্টেম্বর গুরুগ্রাম ও মানেসরে তাদের দুটি প্ল্যান্টে কোনও কাজই হবে না। এই দুদিন ‘অনুৎপাদক দিন’ বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ ওই দিন কোনও গাড়ি তৈরি হবে না।
সংস্থার তরফে এর অতিরিক্ত কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু শিল্প মহলের কর্তারা মনে করছেন, এর বার্তা পরিষ্কার। জুলাই মাসেই গাড়ি ব্রিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। অগস্ট মাসের পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ। প্যাসেঞ্জার করা তথা সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহারের জন্য গাড়ি এবং ট্রাক বিক্রি দুই কমেছে। সামগ্রিক ভাবে প্যাসেঞ্জার কার বিক্রি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ট্রাক বিক্রি কমেছে ৬০ শতাংশ।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাক বিক্রি কমে যাওয়া অর্থনীতির বড় সূচক। এর মানে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের গতি শ্লথ হচ্ছে। দেশের দুটি প্রধান ট্রাক নির্মাতা সংস্থা অশোক লেল্যান্ড এবং টাটা মোটরসের ট্রাক বিক্রি কমেছে যথাক্রমে ৭০ শতাংশ এবং ৫৮ শতাংশ।
মারুতির গাড়ি বিক্রিও কমছে হু হু করে। এমনিতেই অগস্ট মাসে গাড়ি উৎপাদন ৩৩.৯৯ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। জুলাইতে তারা উৎপাদন কমিয়েছিল ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রমশ উৎপাদন কমানো হচ্ছে। ১ সেপ্টেম্বর মারুতির তরফে জানানো হয়েছে, তাদের গাড়ি বিক্রি কমে গিয়েছে ৩৩ শতাংশ। গত বছর অগস্ট মাসে ১ লক্ষ ৫৮ হাজার গাড়ি বিক্রি হয়েছিল। সেই তুলনায় এ বছর অগস্ট মাসে তাদের গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৪১৩টি।
অল্টো, ওয়াগন-আর, সেলেরিও, ইগনিস, সুইফট, ব্যালেনো এবং ডিজায়ার মিলিয়ে গত বছর অগস্টে ১ লক্ষ ২২ হাজার গাড়ি তৈরি হয়েছিল। তা কমে এ বার হয়েছে ৮০ হাজার ৯০৯। অর্থাৎ এই গাড়িগুলোর উৎপাদন ৩৪ শতাংশ কমেছে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, গাড়ি শিল্পের এই সংকটের পরিস্থিতি দেখে একগুচ্ছ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি দফতরগুলি এ বার গাড়ি কিনবে। তাদের উপর থেকে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে গাড়ি শিল্পে বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। অনেকের মতে, প্রায় দশ লক্ষ কর্মী ছাঁটাই হতে পারে এই শিল্পে। মারুতির এ দিনের ঘোষণা তাই তাঁরা অশনিসংকেত হিসাবেই দেখছেন।