শহীদ স্বয়ংসেবক — লও প্রণাম

বর্তমানের কেন্দ্র সরকার এবারের স্বাধীনতা দিবসকে “অমৃত মহোৎসব” আখ্যায়িত করেছে।কেন না,এ-বছরই ভারতীয় স্বাধীনতার ৭৫-তম বর্ষ পূর্ণ হবে।সেই উপলক্ষ্যে স্বাধীনতার বার্তা প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে,দেশের নাগরিকদের কাছে ভারত সরকার আবেদন রেখেছে–প্রত্যেক ঘরেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার জন্য।সমস্ত সরকারি ও অ-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কাছেও আবেদন করা হয়েছে–সমাজের সর্বস্তরে সংশ্লিষ্ট বার্তাটি পৌঁছে দেবার জন্য।দেশবাসীকে উৎসাহিত করার জন্য।
এই প্রসঙ্গেই উঠে আসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কথা।১৯২৫ সালে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে ছিল।বহু আন্দোলন করেছেন সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকরা।অনেকে প্রাণও দিয়েছেন ব্রিটিশের গুলিতে বা ফাঁসির দড়িতে !
বিভিন্ন সময়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য,স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে অনেক স্বয়ংসেবক প্রাণ দিয়েছেন।আসন্ন স্বাধীনতা উৎসবের প্রাক্কালে তাঁদের সশ্রদ্ধ-চিত্তে স্মরণ করার সময়।
ব্রিটিশ এবং কংগ্রেস–যেন একই মুদ্রার দুই পিঠ!সঙ্গে দোসর ভারতীয় কমরেডরা! স্বয়ংসেবকদের প্রতি এদের নিষ্ঠুরতা যে-কোনো সভ্য সমাজের কাছেই অতীব লজ্জাকর!স্বয়ংসেবকদের বিরুদ্ধে যে-কোনো পদক্ষেপ নিতে কংগ্রেস-কমেরা কোনোদিন দুই বার ভাবে নি!বারবারই সঙ্ঘের বিরুদ্ধে এরা দেশদ্রোহীতার অভিযোগ আনে।অথচ কং-কম পরস্পরের দিকে কখনও অভিযোগের আঙুল তোলে না ! যদিও নিজেদের ঘোষিত রাজনৈতিক আদর্শের দিক থেকে কং-কম বিপরীত মুখী।কিন্তু নিজ স্বার্থ পূরণের সময় উভয়ই তুতো ভাই !

কংগ্রেসের দ্বিচারিতার কারণে শোলাপুরের কংগ্রেস নেতা গণেশ বাপুজি শিনকর ১৯৪২ সালেই কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেন।এবং আর.এস.এস.-এর সাথে মিলিত হয়ে একযোগে দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

দেশ বিভাজনের সময়,হিন্দু নিধন কালে,আর.এস.এস.কাশ্মীর-পাঞ্জাব-সিন্ধ অঞ্চলে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে।যাঁরা সহায়-সম্পদ ত্যাগ করে এক বস্ত্রে পিতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি আর.এস.এস.-এর প্রত্যেকটি শাখায় স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়েছিল।উল্লেখ্য যে, আর.এস.এস.-এর শাখা হল–প্রতিদিন সকাল বেলায় একটা খোলা জায়গায় স্থানীয় স্বয়ংসেবকরা মিলিত হন এক ঘন্টার জন্য।সেখানে কিছু শরীর চর্চা,যোগাসন,খেলা,সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা,দেশাত্মবোধন গান ইত্যাদি অভ্যাস করা হয়।

১৯৪২ সালে অস্তিতে সঙ্ঘকর্তা বাপুজি রাইপুরকরকে জাতীয় পতাকা তোলার জন্য ব্রিটিশ গুলি করে হত্যা করে। ওই বছরেরই চিমুর আন্দোলনে যুক্ত থাকার জন্য দাদা নায়েককে ব্রিটিশ ফাঁসির আদেশ দেয়।পরে অবশ্য তাঁর আমৃত্যু জেলের সাজা হয়।১০০০ স্বয়ংসেবককে জেল দেওয়া হয়।একই সালে পাটনার ব্রিটিশ প্রশাসনিক ভবনের চূড়ায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অপরাধে বাল-স্বয়ংসেবক দেবীপদ চৌধুরী ও জগৎপতি কুমারকে ব্রিটিশ পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে।সিন্ধের স্বয়ংসেবক হিমু কালানিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় ওই একই অপরাধে !

প্রত্যেকেই জানেন যে ভারত ১৯৪৭-এ স্বাধীন হয়। কিন্তু পোর্তুগীজদের অধীনে থাকা গোয়া-দমন দিউ-দাদরা নগর হাভেলি তখনও স্বাধীন হয় নি।তখনকার প্রধানমন্ত্রী জওহর লালের এ-ব্যাপারে আগ্রহও ছিল না ! আর.এস.এস.নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে পোর্তুগীজদের পিছু হটতে বাধ্য করে।হাজার হাজার স্বয়ংসেবকের প্রচেষ্টা-মরণপণ সংগ্রামে ১৯৫৪ সালে ঐ অঞ্চলগুলি স্বাধীন করা হল।এবং ভারত সরকারের হাতে তুলে দেয় আর.এস.এস.।সঙ্ঘকর্তা রাজাবাবু মহাকালকে পোর্তুগীজরা চোখে গুলি করে হত্যা করে।আশ্চর্যের বিষয় হল গোয়াকে স্বাধীন করে ভারতের হাতে তুলে দিলেও,এই আন্দোলনে যুক্ত থাকা মোহন রানাডে-কে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার জেল-বন্দি করে রাখে।অবশেষে,সঙ্ঘকর্তা ও প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সুধীর ফাঁড়কে-র হস্তক্ষেপে রানাডে মুক্তি পান।

মার্জনা ভিক্ষা :-
আয়ত্ত্বের মধ্যে উপযুক্ত সংখ্যক তথ্যাদি না-থাকার জন্য,অগণিত শহীদ স্বয়ংসেবক-দেশপ্রেমীদের নাম উল্লেখ করা গেল না।তাঁদের প্রত্যেককে কৃতজ্ঞ-চিত্তে স্মরণ করি।অন্তঃস্থলের শ্রদ্ধা জানাই।

      : : সুজিত চক্রবর্তী : :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.