অনেকে প্রশ্ন তোলেন কোলকাতার সুশীল সমাজ কেন আর সমাজের শত অপরাধ, চুরি-দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা দেখেও মুখ খোলে না, নাটক করে না, গান বাঁধে না?

অনেকে প্রশ্ন তোলেন কোলকাতার সুশীল সমাজ কেন আর সমাজের শত অপরাধ, চুরি-দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা দেখেও মুখ খোলে না, নাটক করে না, গান বাঁধে না?
এই প্রসঙ্গে আমাদের কীইবা বলার আছে। আর বললেই বা শুনছে কে! একটা গল্প মনে পড়ে, সেটাই বরং বলি।-

+++

তানসেনের এক পুত্রের নাম ছিল বিলাস খান। পিতার মতো ইনিও মুঘল রাজদরবারে জাহাঙ্গীরের সভা গায়ক ছিলেন।
বাদশাহ জাহাঙ্গীর পিতা আকবরের মতো সংযমী ছিলেন না। শিল্প সংগীতের অনুরাগী হলেও মাতাল প্রকৃতির ছিলেন। রোজ সকাল বেলাতেই দু পুড়িয়া করে আফিন গলাধঃকরণ করতেন।
তো একদিন সকালেবেলা বিলাস খানের ডাক পড়েছে রাজদরবারে। আফিনের নেশায় বাদশাহের সঙ্গীত প্রীতি চাগান দিয়েছে।
বিলাস খান বাদশাহের সামনে ফরাসে বসে সঙ্গীতের আয়োজন করছেন। দরবারের আমীর ওমারাহ আমাত্যরাও চারিদিকে অপেক্ষা করছে সঙ্গীত সুধার।
বাদশাহ ঘোর ঘোর চোখে তাকিয়ে বললেন, ওস্তাদ, টোড়ী ধরো, টোড়ী।
বিলাসখান চুপচাপ বসে রইলেন। বোঝাই যাচ্ছে তাঁর টোড়ী গাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই। কিন্তু বাদশাহের দরবারে শিল্পীর ইচ্ছে আবার কী? বাদশাহ যা গাইতে বলবেন, যা আঁকতে বলবেন, যা লিখতে বলবেন তাই হল শিল্লীর ইচ্ছে।
বাদশাহ জাহাঙ্গীর বিলাসখানের অনিচ্ছায় বিরক্ত হয়ে উঠলেন, কী হলো ওস্তাদ, গাও।
বিলাসখান এবার ওঠে দাঁড়িয়ে করুণ আবেদন করলেন, গোস্তাকি মাফ করবেন জাঁহাপন, টোড়ী আমি গাইতে পারবো না, আমাকে অন্য রাগ গাইতে ফরমাইস করুন হুজুর-ই-আজম।
সবাই শিহরিত হয়ে উঠল, হায় হায়, বিলাসখান করে কী! বাদশাহের মুখের উপর না করছে, এক্ষুনি গর্দান গেল বুঝি!
বাদশাহ রাগত স্বরে বললেন, কেন টোড়ী গায়তে পারবে না শুনি?
বিলাসখান অধবদনে বললেন, বাজারে বহুত দেনা হয়ে গেছে হুজুর।
বাদশাহ আশ্চর্য হয়ে বললেন, তোমার দেনা না হয় আমি মিটিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু দেনার সাথে টোড়ী রাগ না গাওয়ার কী সম্পর্ক?
বিলাসখান হাত জোড় করে বললেন, আমি এক শ্রেষ্ঠীর কাছে আমার টোড়ী রাগখানা বন্ধক রেখে কর্জ করেছি হুজুর। কর্জের সব তঙ্খা শোধ না হলে আমি টোড়ী রাগ গাইতে পারবো না, জাঁহাপনা!

রাগ বন্ধক রেখে উপার্জন? এ তো বড় অদ্ভুত কথা! বাদশাহ হো হো করে হেসে উঠলেন।

+++

তা, যা বলছিলাম, কলকাতার সুশীল সমাজ তো বিলাস খানেরই উত্তরসূরী। তাঁরাও এখন মানবতা বন্ধকীতে রেখে ভাতা ভিক্ষা উপার্জন করছেন। বন্ধকী রাখা সততা ও মানবতার পক্ষে এখন তাঁরা কীভাবে কণ্ঠ ছাড়বেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.