বাংলাদেশের খুলনায় হিন্দুদের উপর বর্বরোচিত হামলার প্রসঙ্গে ক্ষোভ ব্যক্ত করতে গিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রখ্যাত কবিয়াল ও বিধায়ক অসীম সরকার জনবিনিময়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন যা তাঁর মতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নিপীড়িত হিন্দুদের জন্য “সবচাইতে বড়ো সুরক্ষা কবচ” হতে পারে।
বাংলা তথা ভারতের রাজনীতির নিরিখে তাঁর এই মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন ধরনের জল্পনা উস্কে দিতে পারে বলে মনে করা যেতে পারে।
যখন CAA ও NRC নিয়ে কেন্দ্র সরকার বিরোধীদের চাপে পরে অনেকটাই পিছু হঠছে, তখন বিজেপি বিধায়কের এই জনবিন্যাসের সপক্ষে সওয়াল যথেষ্ট্যই তাৎপর্য্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক সরকার তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন। এই ঘটনার জন্য তিনি বাংলাদেশকে হুঁশিয়ার করে বলেন এই ধরণের অত্যাচার ভারতের হিন্দুরা বরদাস্ত করবেন না।
“বাংলাদেশ কি ভুলে গেছে ওই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস? ভারতের অবদান এতো তাড়াতাড়ি কি করে ভুলতে পারেন তাঁরা? ভারত থেকে কোরোনার ভেকসিন নিয়ে ভারতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ ও হিন্দুদের উপর অত্যাচার। অনেক হয়েছে, এবার এর একটা বিহিত করতে হবে । অনেক হয়েছে বাংলাদেশে হিন্দু নিধন, এবার হোক জনবিনিময়,” সরকার বলেন।
এরই মাঝে তাঁর ইউটিউব চেনেলের মাধ্যমে ও এই প্রসঙ্গে বার্তা দেন। আবেগপূর্ণ কন্ঠে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান হিন্দুদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে।
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যেশ্যে তিনি বলেন মোদির কাছে তাঁর বিনম্র নিবেদন তিনি যেন ভারতের মুসলমানদের বাংলাদেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করেন ও ওখানকার নিপীড়িত হিন্দুদের অবিলম্বে ভারতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন।
“বাংলাদেশে প্রত্যেকটা হিন্দুর সুরক্ষা আমাদের কর্তব্য, কার ভরসায় থাকবে আমাদের ভাইরা? ওঁরা তো আমাদের দিকেই তাকিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমার বিনম্র ও কাতর অনুরোধ দয়া করে বাংলাদেশের ২ কোটি হিন্দুকে অবিলম্বে ভারতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন আর এখন থেকে মুসলমানদের ওই দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করুন, কারণ তা না হলে হিন্দুদের নিস্তার নেই,” সরকার বলেন।
এই বিষয়ে সরকারকে পূর্ণ্য সমর্থন করেন হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য্য। এই ব্যাপারটাকে আরো স্পষ্ট ও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে ভট্টাচার্য্য বলেন, “পাঞ্জাবে স্বাধীনতার সময় নেয়া জনবিন্যাসের পদক্ষেপ ছিল সময়োপযোগী ও অত্যন্ত কার্যকরী। ইতিহাস তা দেখিয়ে দিয়েছে। সঙ্গত কারণে মাননীয় বিধায়ক শ্রী সরকার এর সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন এবং আমি তাঁর বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন করি। বাংলায় ও হোক জনবিন্যাস, অসুবিধে কি আছে তাতে?” দেবতনুবাবু বলেন।
উলেখ্য, গত শনিবার বাংলাদেশের খুলনা জেলায় সাম্প্রদায়িক হিংসায় উন্মত্ত জনতার হাতে হিন্দুদের উপর হামলা ও পরবর্তী সময়ে পলায়নকৃত হিন্দুদের নিরাপত্তা বিষয়টি ভাবাচ্ছে পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া অসংখ্য দেবদেবীর ভাঙা মূর্তির ছবি ও কান্নারত বিপন্ন হিন্দু পুরুষ ও মহিলাদের ছবি ও ভিডিও জানান দিচ্ছে ঘটনার ভয়াবহতার।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান হিন্দুদের উপর আক্রমণ, হত্যা, নারী ধর্ষণ ও ধর্মস্থান অপবিত্রকরণ যখন প্রাত্যহিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তখনই প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশে দুকোটি হিন্দুর নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে এই হামলার পর বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা রক্ষার ব্যাপারে মোদির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। ওই হামলায় ৪ টি মন্দির আক্রান্ত হয় ও ১০ টি মূর্তি ভাঙা হয়। বাংলাদেশে বসবাসরত মতুয়ারাও আক্রান্ত হন।