উত্তরপ্রদেশ। ৮০ আসনের এই রাজ্য বরাবরই জাতীয় রাজনীতির নির্ণায়কের ভূমিকা নিয়েছে। রাজনীতিতে তাই প্রাচীন প্রবাদ— উত্তরপ্রদেশ যার, দেশ তার। উত্তরপ্রদেশের দখল নিতে পারলেই দিল্লি দখলের পথ মসৃণ। ভারতের ইতিহাসে সব থেকে বেশি সংখ্যক প্রধানমন্ত্রী উপহার দিয়েছে এই রাজ্যই। নেহরু থেকে চন্দ্রশেখর, ইন্দিরা থেকে রাজীব— সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। গুজরাটের নরেন্দ্র মোদীও এখন উত্তরপ্রদেশের সাংসদ। গত লোকসভা নির্বাচনে তবু দ্বিতীয় কেন্দ্র বেছেছিলেন নিজের রাজ্য থেকে কিন্তু এবার তিনি শুধুই বারাণসীর।
২০১৪ লোকসভাতেও উত্তরপ্রদেশ দু’হাত ভরে আসন দিয়েছিল মোদী-শাহ জুটিকে। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব হাতে নিয়ে এই রাজ্যে গেরুয়া ঝড় তুলেছিলেন মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ। ৮০টি আসনের লড়াইতে রাজ্যকে কার্যত বিরোধীশূন্য করে ৭৩টি আসন তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা। এর পরে উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতাও বিপুল আসন নিয়ে দখল করে বিজেপি।
২০১৯-এর নির্বাচনেও দেশের নজর ছিল যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশের দিকেই। শাসক এনডিএ কিংবা বিরোধীরা সবারই তৎপরতা ছিল একেবারে গোড়া থেকে। ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও রামমন্দির তৈরি করতে না পারা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গোরক্ষকদের তাণ্ডব, লভ জিহাদ, কোনও ইস্যুই হাতছাড়া করেনি বিরোধীরা। জাতপাতের সমীকরণ দিয়ে ভোটের বাক্সের হিসাব উল্টে দেওয়ার অঙ্কও ছিল। সেই লক্ষ্যেই কাজটা জোট গড়েছিলেন অখিলেশ যাদব। উত্তরপ্রদেশের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী আর মুলায়মের দীর্ঘ দিনের শত্রুতার ইতি ঘটিয়ে সমাজবাদী পার্টি আর বহুজন সমাজ পার্টিকে এক জায়গায় এনেছিলেন তিনি।
বিজেপির ভাষায় জন্ম নিয়েছিল পিসি-ভাইপো জোট (বুয়া-বাবুয়া গটবন্ধন)। সামিল হয়েছিল অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোক দলও। এই জোটের লক্ষ্যই ছিল যাদব-দলিত-মুসলিম-জাঠ ভোটব্যাঙ্ককে এককাট্টা করা। কিন্তু এত করেও মোদী-শাহর অশ্বমেধের ঘোড়ার পথ আটকানো গেল না। ২০১৪ আর ২০১৯ এর ফলাফলে বিশেষ ফারাক দেখা গেল না। বিজেপির গতবারের তুলনায় আসন সংখ্যা কমেছে এটা ঠিক কিন্তু যতটা খারাপ আশা করা হয়েছিল তা হয়নি।
আর কংগ্রেস সভাপতি তো নিজের গড় রক্ষাই করতে পারলেন না। চিরদিনের কংগ্রেস গড়ে পরাজিত খোদ রাহুল গান্ধী। রায়বেরিলি থেকে সনিয়া গান্ধী জিতলেও ব্যবধান কমেছে। এটাও বিজেপির বড় জয়।