লোকটিকে চিনতে পারছেন ? কেউ ?
আরেকটি কুণাল ঘোষ ইন দা মেকিং ।
নাম – কৌস্তভ রায় । কলকাতা টি ভি র কর্ণধার । এখন মমতার খুব ঘনিষ্ঠ বৃত্তে তার বিচরণ । চলা ফেরা । বিকেল হলেই নবান্নে । সন্ধ্যে হলেই নবান্নের ১৪ তলায় । মমতার কাছ থেকে অনেক জটিল রাজনৈতিক কাজ নিয়ে বেরিয়ে আসেন । কি কাজ ? তাই নিয়ে লিখব অন্য কোনোদিন । দীর্ঘ কাহিনী । মিডিয়া ব্রোকার ? দালাল ? না তার থেকেও বেশী । যাঁরা তাঁকে চেনেন তাঁদের মুখেই শুনেছি, যা যা শুনেছি তাতে চমকে উঠতে হয় ।
এঁকে চিনতে পেরে কিছুদিন ধরে মাঠে নামিয়েছেন মমতা । ইলেকশনের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই । নো ভোট টু বি জে পি র অন্যতম সংগঠক । বেশ কিছু জেলায় ঘুরে নেতা ভাঙানো, নেতা কেনা, পুলিশ লেলিয়ে দেওয়ার কাজ সব কিছু করেছেন গত এক বছরে । এসব করে মমতার আস্থা অর্জনও করেছেন অত্যন্ত ক্ষিপ্রতায় । এমনকি তৃণমূলের নেতাদের, মন্ত্রীদের খবর কালেক্ট করে নিয়ম করে ১৪ তলায় পৌঁছে দিয়েছেন । আবার রাত বাড়লে অন্য দলের নেতাদের নিয়ে কালীঘাটে পৌঁছেছেন । ডিল ফাইনাল করিয়ে মাঝ রাতে বাড়ি ফিরেছেন । ডি এম, এস পি, আই এ এসদের পছন্দের পোস্টিংটাও করিয়েছেন । এভাবেই মমতার আশীর্বাদে পাওয়ার করিডোরে সুপার পাওয়ারে পরিণত হয়েছেন । কলকাতা টি ভির স্পেশ্যাল এডভাইসারকে নবান্নের মোটা মাইনের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন । নবান্নে কিম্বা জেলায় এস পি থেকে ওসি দের দেদার স্যালুটও পেয়ে গেছেন । তারাও বুঝে গেছে কে ইনি, কি তার ক্ষমতা । রোমহর্ষক, তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত এই উত্থান । মমতার ঘরের বাইরে যখন তাবড় মন্ত্রীরা অপেক্ষা করেছেন কলকাতা টি ভি র মালিক কৌস্তভ তখন একান্তে কথা বলেছেন মমতার সঙ্গে । এ দৃশ্যর বারবার সাক্ষী থেকেছে নবান্ন ।
কে এই কৌস্তভ ? শুধুই কলকাতা টি ভি র মালিক ? কিভাবে মালিক হয়েছেন তাই নিয়েই একটা বই লেখা যায় । কিভাবে টি ভি নাইনকে ল্যাং মেরে কলকাতা টি ভি র সত্ব পাওয়া সেও এক লম্বা ইতিহাস । ছিলেন বাম, উচ্চ স্তরের বৃত্তের বাম একসময় । রবীন দেব, মহম্মদ সেলিমের ঘরের ভেতরের লোক হয়ে চিরাগ কম্পিউটারের গোড়া পত্তন । আর পি ইনফো সিস্টেমকে সামনে রেখে কি না করেছেন এই মূর্তিমান ! শিবাজী পাঁজার সঙ্গে টেক্কা দিয়েছেন, কে মমতার বেশী কাছের লোক তাই নিয়ে । শিবাজী মমতার সঙ্গী হয়ে বিদেশ সফরে গেছেন, কৌস্তভ গেছেন জেলা সফরে । শেষে শিবাজী কিছুটা ছিটকে গেছেন । কৌস্তভ ঢুকে পড়েছেন ইনার সার্কিটে ।
বিনয় বাফনা, দেবনাথ পাল, শিবাজী পাঁজা র সঙ্গে আর পি ইনফো সিস্টেম করে ঘোল খাইয়েছেন ব্যাংক কর্তাদের । ২০১১ তে মমতা ক্ষমতায় এসেছেন । ২০১২ থেকে গুনীরা কীর্তির বহর বাড়িয়েছেন ব্যাপক হারে ।
কানাড়া ব্যাংকের দশটি কনসোর্টিয়ামকে জাল তথ্য দিয়ে কয়েকশো কোটি জালিয়াতি করেছেন, এমনই দাবি করে কানাড়া ব্যাংকের ডি জি এম ডি ভি প্রসাদ রাও ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সি বি আই এর কলকাতা অফিসে সরাসরি কৌস্তভের বিরুদ্ধে এফ আই আর করেন ।
অভিযোগে জানানো হয় -গেল ইন্ডিয়া লিমিটেড, ভিনসেন্ট ইলেকট্রনিক্স, সিয়েট লিমিটেডের নামে সম্পূর্ন জাল নথী ব্যাঙ্ককে জমা দিয়েছেন কৌস্তভরা । লেটার অফ ক্রেডিট নিয়েও করেছেন ব্যাপক জালিয়াতি । সবটাই নাকি ভুয়ো ।
শুধু তাই নয় । এস বি আই, স্টেট ব্যাংক অফ বিকানির এন্ড জয়পুর, ইউনিয়ন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, এলাহাবাদ ব্যাংক, ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অফ কমার্স, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, সেন্ট্রাল ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অফ পাতিয়ালা, ফেডারেল ব্যাংক ও কানাড়া ব্যাঙ্কের দশটি কনসোর্টিয়াম থেকে মোট হাতানোর পরিমাণটা শুনবেন ?
৫১৫.১৫ কোটি টাকা ।
তারপর ?
শেষে সি বি আইয়ের জালে ধরা পড়ে কৌস্তভ এবং শিবাজী । দীর্ঘদিন জেলে কাটিয়ে, জেলের ভাত খেয়ে এসে সেই কৌস্তভ এখন কলকাতা টি ভি র মালিক !! কার আশীর্বাদে এবং কিভাবে এই উত্থান এরপরও বলতে হবে ?
এই কৌস্তভ এখন মমতার ইনার সার্কিটের সুপার উস্তম । মমতাও হয়তো বুঝেছেন যে এতগুলো ব্যাঙ্ককে যে ওস্তাদ ঘোল খাওয়াতে পারে তাকে দিয়ে অনেক কুকাজ করানো যাবে । সেই অনুযায়ী দায়িত্বও পেয়ে গেছেন । এখন সকাল বিকেল কাঁথি ছুটছেন । সম্প্রতি ভগবানপুরে গিয়ে ঘেউ ঘেউ করে এসেছেন । মাইক্রোফোন ধরে বলে এসেছেন ৫ মিনিটে কাঁথির শান্তি কুঞ্জকে অশান্তি কুঞ্জ করে দেবেন নাকি “তিনি” । তিনি মানে তিনি কলকাতা টি ভির মালিক কৌস্তভ রায় । তিনি নাকি সাংবাদিক ।
বুঝলেন কিছু ? কালীঘাটের “রত্না” গুণধর রতনকে কিন্তু চিনে নিয়েছে ।
মমতার “নয়া কুণাল ঘোষ” ।। ভুল বলেছি ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)