যাক বাবা বাঁচা গেল ।
মমতার পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জাতীয় সঙ্গীতটা শেষ পর্যন্ত শেষ করেছেন । ঘামতে ঘামতে, হাঁপাতে হাঁপাতে জয় হে জয় হে, জয় হে করতে করতে পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছেছেন । লাইভ দেখেছে বাঙালি সব চ্যানেলে ।
যদি না শেষ করতে পারতেন কি হত ? সোমবার কলমের খোঁচায় মন্ত্রিত্ব যেত ? জানিনা । ২০১২ সালে কলেজে কলেজে অন লাইন অ্যাডমিশন হবে এই ঘোষণা মমতাকে না জানিয়ে করায় শিক্ষা মন্ত্রীর চাকরি খুইয়েছিলেন ব্রাত্য, সেটা ইতিহাস । আর আজ জাতীয় সঙ্গীত ভুল গাইলে বা শেষ না করতে পারলে তার জন্য চাকরি খোয়ালে ব্যাপারটা আরো নাটকীয় হত । হোঁচট খেয়ে মমতার চোখের ধমকানি খেয়েও যে শেষ করেছেন জাতীয় সঙ্গীত তার জন্য তারিফ পাওয়া উচিত তাঁর । অর্থাৎ ব্রাত্য বসুর । শিক্ষা দফতরটা যিনি এ রাজ্যে মাঝে মধ্যে ত্রিপুরা থেকে এসে সামলে যান ।
মমতার ২৮ আগস্টের ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এছাড়াও অনেক নাটকীয় উপাদান ছিল । মমতা বলেছেন কয়লা চুরির জন্য শুধু তৃণমূলকেই ধরা হবে কেন ? মানে যা দাঁড়ায় অন্যদেরও ধরুন । আমরা করেছি, ধরেছেন, বলতে বোঝায় আসলে স্বীকারোক্তি । ভেতরের থেকে বেরোনো এই কথাটা বেশ কানে লাগলো ।
মনে হল, তাহলে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মাঝে মাঝে ভুল করে হলেও সত্যিটা বলে ফেলেন । ঠিক না ?
আজ যেমন বললেন, আমি একদমই ভিন্ডিকটিভ নই । মানে, যদি ভুল না করি, দাঁড়ায় – আমি প্রতিশোধপরায়ণ নই । তাই তো ?
মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন ভাষণ শুনে মাথায় বন বন করে ঘুরে ফিরে আসছিল কিছু ঘটনা ।
২০১২ র ১৩ এপ্রিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার করেছিলেন কে, কেন ?
২০১৩ র ১৭ই জুন । তৃণমূল দুষ্কৃতীরা এক ছাত্রীকে কামদুনিতে ধর্ষণ করে খুন করার পর মমতা সেখানে যেতে মৌসুমী, টুম্পা কয়ালরা মমতার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন । প্রকাশ্যে ” চোপ, তোমরা মাওবাদী ” বলে ধমকে চোখ রাঙিয়ে ছিলেন কে, কেন ?
২০১২র ৮ আগস্ট, বেলপাহাড়ির সভায় সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করায় শিলাদিত্য চৌধুরীকে মাওবাদী বলে গারদে ঢুকিয়েছিলেন কে, কেন ?
২০১২র ২০ মে একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলের সভায় প্রশ্ন করায় প্রেসিডেন্সির ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজকে প্রকাশ্যে ধমকে মাওবাদী বলে আখ্যায়িত করে সভা ছেড়ে বেরিয়ে এসছিলেন কে, কেন ?
তালিকা দীর্ঘ । কয়েক হাজার । শিক্ষক, পুলিশ, সরকারি কর্মচারী কে নেই সেই তালিকায় ?
২০১৯ এর ৩০ নভেম্বর ডি এ নিয়ে নবান্নে কথা বলতে গিয়ে সরকারি কর্মচারীদের ১৫ জনকে ৩০০, ৪০০ কিলোমিটার দূরে প্রান্তিক এলাকায় বদলি করে দেওয়া হয়েছিল । সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় শঙ্কর সিনহাকে পাঠানো হয়েছিল নেপাল সীমান্তে বিজনবাড়িতে । আজও তাঁরা প্রান্তিক এলাকায় জীবন কাটাচ্ছেন ।
ডা: অরুণাচল দত্ত চৌধুরী একটি ফেস বুক পোস্টিংএ কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে ২ বছর বিচারহীন সাসপেন্ড, তারপর অবসরের ৪ মাস আগে কালিম্পং এ বদলি । মৃত্যু শয্যায় প্যারালিটিক মা কে রেখে দার্জিলিং এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন ।
কিছু সত্যি কথা পরামর্শ দেওয়ার অপরাধে প্রখ্যাত ডা: শ্যামাপদ গড়াই সাসপেন্ডেড হন । চাকরি ছেড়ে অবসরের পর তাঁকে বকেয়া আদায় করতে শেষে হাইকোর্ট থেকে রায় আনতে হয় ।
ডা: অরুণ সিংহ, এশিয়া বিখ্যাত শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ মন জোগাতে পারেননি বলে পি জি থেকে সাগর দত্ততে নির্বাসিত হয়ে শেষে রাজ্য ছেড়েছিলেন ।
সাম্প্রতিক কালে প্রথমে ১৭ জন, পরে আরো দশ জন এস এস কে, এম এস কে শিক্ষক, নবান্নে গিয়েছিলেন কথা বলতে, তাই, কয়েকশো কিলো মিটার দূরে বদলি হলেন । শেষে বিষ পান করে জীবনের পাঞ্জা লড়ছেন এন আর এস, আর জি করে । সুস্থ হলেই জামিন অযোগ্য মামলায় যাবেন হাসপাতাল থেকে জেলে ।
ইতিহাস লম্বা । আরো দীর্ঘ । লিখলে শেষ হবে না । শুধু প্রশ্ন – এ গুলো প্রতিহিংসা নয় ? এ গুলোকে vindictive attitude বলা যাবে না ? কি বলেন ? আজ সাধু সাজার মমতার বক্তৃতায় বিমুগ্ধ বাঙালি একবারও কি ফিরে তাকাবে যা লিখলাম সেই ইতিহাসে ?
জানিনা । সত্যি জানিনা ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)