মহাত্মা গান্ধীর গ্রাম স্বরাজের নীতি করোনার পরে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) রাষ্ট্রীয় কলা কেন্দ্রের সভাপতি ও প্রখ্যাত সাংবাদিক রাম বাহাদুর (Ram Bahadur) রাই।
শনিবার ভারতীয় শিক্ষণ মন্ডলের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে পদ্মশ্রী প্রাপ্ত বর্ষীয়ান এই সাংবাদিক জানিয়েছেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা একটা বৃহৎ উপন্যাসের মতো যেখানে অনেকগুলো চরিত্র রয়েছে। বহু ছোট ছোট গল্প রয়েছে। সমাজের চিত্র যেরকম উপন্যাস থেকে পাওয়া যায়। তেমনি রাষ্ট্রের চিত্র সমাজ নির্ভর। রাষ্ট্র পূনর্গঠনের ভাবনা স্বাধীনতার আগে ১৯২৩ সালে প্রথমবার উত্থাপন করেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এবং ভগবান দাস। এই ভগবান দাস এর সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাম বাহাদুর রাই জানিয়েছেন ভারতবর্ষে প্রথম ভারত মাতার মন্দির এই ব্যক্তি তৈরি করেছিলেন বারাণসীতে। করোনা পরিস্থিতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে এই সময় দাঁড়িয়ে তার মোকাবিলা করাটা প্রয়োজন। ফল এই সময়টা বিরোধ, প্রতিরোধ নয়। সমালোচনার সময় এটি।রাষ্ট্র পুনঃগঠনের দুটি দিক রয়েছে। একটি আন্তরিক। অপরটি বাহ্যিক। রাজ্য পুনর্গঠন এর এই আন্তরিকতা মূল দিকটি আমাদের ধরতে হবে।মহাত্মা গান্ধীর গ্রাম স্বরাজ ভাবনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালের ৫ অক্টোবর পন্ডিত জহরলাল নেহেরুকে উদ্দেশ্য করে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি গ্রাম স্বরাজের বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন।
মহাত্মা গান্ধীর কল্পনায় গ্রাম স্বরাজ ছিল এমন একটা পরিসর যেখানে সমস্ত ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে যে রকম পোস্ট অফিস, রেল স্টেশন, টেলিগ্রাফ পোস্ট, নারী ও পুরুষের সমান অধিকার। কিন্তু এর পরিপন্থী ভাবধারা মেনে চলতেন পন্ডিত নেহেরু। তাইতো স্বাধীনতার পর প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তিনি সোভিয়েত রাশিয়ার অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ অনুসরণ করেন।যা পাঁচ বছর পর মুখ থুবড়ে পড়ে ও চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়। তখন তিনি বলবন্ত রায় মেহেতা কমিটি গঠন করেন। যা পরবর্তী কালে ভারতের পঞ্চায়েতের ব্যবস্থার একটা ভাবনা তৈরি করে। সরকার ও পঞ্চায়েতের সাথে একটা ব্যবধান থেকেই যায়। আসলে পন্ডিত নেহেরু মনে করতেন যে গ্রামগুলি বৌদ্ধিক এবং সংস্কারের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। কিন্তু রামায়ণ, মহাভারত, মৌর্য, গুপ্ত যুগে থেকে ভারতে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চলে এসেছে। সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই ব্যবস্থা ছিল।সেই সময় বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অংশীদারী ছিল ২৩ থেকে ২৭ শতাংশ। প্রতিটি গ্রাম স্বাবলম্বী ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা এসে যে পঞ্চায়েতের মডেল তৈরি করল তাতে তারা শুধু গ্রামকে কর আদায়ের কেন্দ্র হিসেবে দেখতো। ফলে স্বাধীনতার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অংশীদারিত্ব কমে দাঁড়ায় মাত্র তিন শতাংশ।এদিন তিনি বলেন, বর্তমানে মহাত্মা গান্ধীর গ্রাম স্বরাজ এর ভাবনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সম্প্রতি বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানদের সাথে তিনি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আলাপচারিতাও করেছেন। এছাড়াও একাধিক প্রকল্প তিনি গ্রহণ করেছেন। বিশ্ব ও ভারতের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার তুলনা ১৯৪৫ সালের সঙ্গে করা যেতে পারে। ভারতের সংবিধানে একাধিক সংশোধন করে গ্রামের অধিকার ও পঞ্চায়েতকে শক্তিশালী করা হয়েছে। ১৯৯৩ সালে সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪ তম সংশোধনী করে দেশে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কায়েম করা হয় এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নারাসিমহা রাও, ছাড়াও প্রশাসনিক আমলা বিনোদ পান্ডে । সংবিধান তৈরি করার প্রথম দিকে পঞ্চায়েতকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কিন্তু পরবর্তীকালে ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাঁর পরামর্শ, বর্তমান ভারতে পঞ্চায়েতকে আগে শক্তিশালী করতে হবে তার জন্য পঞ্চায়েত কর্মীদের প্রশিক্ষণ করতে হবে। রাজ্য সরকার ও পঞ্চায়েতের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করতে হবে। গ্রামীণ পঞ্চায়েতে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।গোটা দেশের পঞ্চায়েতি রাজের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য এবং পঞ্চায়েত কর্মীদের প্রশিক্ষিত করার জন্য ভারতীয় পঞ্চায়েত প্রবন্ধন কমিটি গাড়তে হবে। পঞ্চায়েতের বিকেন্দ্রীকরণ একান্তভাবে প্রয়োজন। পঞ্চায়েতিরাজের ২৪৩ জি অনুচ্ছেদকে বিশেষভাবে কার্যকর করতে হবে।