আদালতের নির্দেশকে উপেক্ষা করে তালা ভেঙে ছট পালন সরোবরে

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল। ছট পুজোর দিন থেকে আগামিকাল অর্থাৎ রবিবার পর্যন্ত রবীন্দ্র সরোবর উদ্যান বন্ধ থাকার নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। আদালতের রায় যে তাঁরা মেনে চলবেন তা জানিয়েছিল বিহারী সমাজ। কিন্তু, শনিবার সকালে সেই নিষেধাজ্ঞাকে কার্যত ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে গেটের তালা ভেঙে রবীন্দ্র সরোবরের দখল নিল বহিরাগতরা। ঠিক এই নৈরাজ্যের ছবিই ধরা পড়ল ছট পুজোর সকালবেলা।

অভিযোগ, শনিবার সকালে প্রায় তিন থেকে চার’শ জন বহিরাগত রবীন্দ্র সরোবর গেটের সামনে জড় হয়। ছট পুজো ঘিরে কোর্টের নিষেধাজ্ঞার দরুন কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে আগেই নির্দেশিকা জারি করে মূল ফটকে ঝোলানো ছিল তালা। বাঁশ, ইট, পাথর দিয়ে সেই তালা ভেঙে ফেলেন তাঁরা। উদ্যানের ৩ নং গেট এবং মাদার ডেয়ারি গেটও ভেঙে ফেলা হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় কেএমডিএ নোটিশ।

সেই সময়ে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিলে হামলা চালানো হয় তাঁদের উপরেও। সেখানে উপস্থিত এক নিরাপত্তারক্ষীর বয়ান অনুযায়ী, ‘প্রায় চার’শ জন লোক রে রে করে তেড়ে এসে গেটের তালা ভেঙে দেয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বাধা দেওয়ার কিন্তু অত লোকের সঙ্গে আমরা পেরে উঠিনি।’

এই ‘তাণ্ডব’ চলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন প্রাতঃভ্রমণকারী। অভিযোগ, তাঁদেরকেও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় এক প্রাতঃভ্রমণকারী বলেন, ‘আমি ওদেরকে বলি, এটা কোর্টের আদেশ। পার্ক বন্ধ থাকায় আমরাও তো ভিতরে ঢুকতে পারছি না। কিন্তু, ওরা উল্টে আমাকে কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করল। আমার সৌভাগ্য যে ওরা আমার গায়ে হাত তোলেনি।’

কিন্তু এত কিছু ঘটে যাওয়ার সময় পুলিশের কোনও দেখা পাওয়া যায়নি। পুলিশ না থাকার সুযোগে প্রকাশ্য দিবালোকে রবীন্দ্র সরোবরে তাণ্ডব চালাল বহিরাগতরা। তবে, স্থানীয়দের দাবি গতকাল রাত পর্যন্ত পুলিশ বেষ্টনী ছিল রবীন্দ্র সরোবরের মূল ফটকে। কিন্তু শনিবার সকালে পুলিশ সরে যায়। তাই এই হামলা পরিকল্পনা মাফিক নয়ত? উঠে আসছে এমন প্রশ্নও।

এ দিন রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় ইতিমধ্যেই পুজোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সরোবরের বিভিন্ন ঘাট ধুয়ে সেখানে পুজোর বেদি স্থাপন হয়ে গিয়েছে। এমনকি দড়ি দিয়ে পুজোর স্থান ভাগাভাগিও হয়ে গিয়েছে।

রবীন্দ্র সরোবরে বেড়ে চলা দূষণ রোধে ছট পুজোয় সরোবর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেইমত উদ্যান বন্ধের নির্দেশিকাও জারি করে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু, সরোবরে ছট পুজোর দিন সকালে আদপে সে ছবি ধরা পড়ল না। বিশৃঙ্খলা,নৈরাজ্য আর গা জোয়ারির কাছে হার মানলেন স্থানীয় মানুষ, পরিবেশকর্মীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.