বিধান পরিষদের প্রস্তাব ধ্বনি ভোটে পাশ হল । সরকার পক্ষের ১৯৬ জনের সমর্থনে, বিরোধী পক্ষের ৬৯ এর বিরোধিতায় ।
পাশ তো হল । লাভ কি হল ? বিধান পরিষদের সদস্য থাকতে পারবেন সর্বোচ্চ ৯৮ জন ।
মমতা এটা কেন করলেন ? এটাকে আসলে একটা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার করলেন । ধরুন প্রণব পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে দলে নিলেন । লোকটিকে কাছ থেকে দেখেছি । অপদার্থ বললে কম বলা হয় । কোন কাজে লাগবে না । লোকসভা, রাজ্যসভায় তৃণমূল পাঠালে তাদের ক্ষতি । কিন্তু প্রণব পুত্র বলে কথা । বাবার নামে আলোকিত । মমতা একে হয়তো বিধান পরিষদের একটা সদস্য পদ দিয়ে দেবেন । ব্যাস আর দেখে কে ! নীল আলো জ্বালানো গাড়ি নিয়ে ঘুরবেন । পেছনে দুটো পুলিশ জীপ, সামনে দুটো এসকর্ট ভ্যান । ভালো মাইনে, বড় অফিস, ট্রাভেলিং এলাউএন্স, ১২ জন দিবা রাত্র সিকিওরিটি, দেখে কে ?
কি যজ্ঞে লাগবেন এঁরা ? বিধান পরিষদ আসলে একটা সো কেস । এঁদের না থাকবে কোন আইন পাশ করানোর ক্ষমতা, না থাকবে এক্সিকিউটিভ পাওয়ার । যা থাকবে তা হল মুকুট পরে আলো করে বসে থাকার ক্ষমতা ।
এঁদের পুষতে কিরকম খরচা হবে ? আমার পরিচিত এক প্রাক্তন আমলা বলছিলেন প্রত্যেকের পেছনে মাসে প্রায় ২৫ লাখের গল্প থাকবে । কি ভাবে ? এঁদের সুযোগ সুবিধে থাকবে রাজার মত । এঁদের জন্য যে অফিস থাকবে তার ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে এঁদের বিমান সফর, হেলিকপ্টার সফর, চিকিৎসা খরচ সব মিলিয়ে বছরে ন্যূনতম ১২০০ কোটির ইনভেস্টমেন্ট ।
খুব দরকার ছিল ? রাজ্যের এখন আর্থিক অবস্থাটা কি ?
পশ্চিমবঙ্গে এখন সাড়ে পাঁচ লক্ষ সরকারি পদ অবলুপ্ত । স্কুল শিক্ষকের পদ ৮৭ হাজার অপূর্ণ । কলকাতা পুলিশে ভেকেন্সি ৪৫ হাজার, রাজ্য পুলিশে সংখ্যাটা ৭৫ হাজার । তিন হাজার ৭০০ টি লাইব্রেরিয়ান পোস্ট ভেকেন্ট । দমকলে ভেকেন্সি প্রায় ৬ হাজার ৩০০ জন । অধিকাংশ সরকারি অফিসে কনট্র্যাক্টচুয়ালে ভর্তি । প্রাপ্য ডি এ থেকে বঞ্চিত সরকারি কর্মীরা । স্কুলে কলেজে লাইব্রেরিয়ান পদ খালি পড়ে রয়েছে । গ্রুপ ডি তে ১ লক্ষ ৩০ হাজার পদ ফাঁকা । কনস্টেবল না নিয়ে বিনা এপয়েন্টমেন্ট লেটারে ১ লাখ ৩৯ হাজার সিভিক পুলিশকে দিয়ে গতরে খাটানো হচ্ছে । খাদ্য দফতরে বারো হাজার পদে লোক নেই । হাসপাতাল গুলোতে প্রায় ২৩ হাজার স্থায়ী নার্সিং স্টাফ নেই ।
এই এত নেইয়ের কারণ আসলে সরকারের হাতে টাকা নেই । বাজারে এই মুহূর্তে চার লক্ষ ৮০ হাজার কোটির দেনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের । এ রাজ্যে প্রত্যেক নবজাতক জন্মাচ্ছে মাথায় ৬০ হাজারের দেনা নিয়ে ।
তবু বিধান পরিষদটা ভীষণ দরকার । কারণ তাঁর “ইচ্ছে হয়েছে” একটা রিহ্যাবিলিটেশন কেন্দ্র খোলার । তাই খুলছেন । তাতে বাংলার বেকাররা কেমন থাকল তার বয়েই গেল ।
আমার মেসেঞ্জারে এক চাষীর ছেলে সম্প্রতি লিখেছে – স্কলারশিপ নিয়ে এম এস সি ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে শেষ করলাম । গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলাম চাকরি নেই বলে । বাবার বয়স হয়েছে । আর সংসার টানতে পারছেন না । চাষ বাসে বাবাকে সাহায্য করব । আমিও এখন থেকে মাঠে যাব । চাষ বাস শিখে সংসারটা চালাতে চাই, বৃদ্ধ বাবাকে একটু বিশ্রাম দেব ।
এই চাষীর ছেলের কাছে এই বিধান পরিষদ কি বার্তা পাঠাবে কেউ ভেবেছেন ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)