লাল্টুর ঠাকুর্দা একবস্ত্রে ঠাকুমাকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে আসে। বাঘা যতীনের এক রিফিউজি ক্যাম্পে আশ্রয় পাওয়ার দশ মাস পর লাল্টুর বাবার জন্ম। পাশের বাড়ির আব্দুলভাই অবশ্য চলে আসার আগে চোখ মুছতে মুছতে তাদের নৌকায় তুলে দিয়েছিল। চলে আসার দুইদিন আগেই আব্দুল, রহমত, মনসুর আর আরো কয়েকজন নদীতে চান করতে যাওয়ার সময় ঠাকুমার ওপর চড়াও হয়েছিল। স্বামীকে এই কথা বলতে স্বামী মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলে ,” এক্কেরে চুপ কইরা থাক। জানোস না অরা আমার ভাইয়ের মত।”
লাল্টুর বাবার চেহারার সঙ্গে মনসুর না আব্দুল ,কার বেশী মিল এই নিয়ে ওর ঠাকুমার সংশয় ছিল অনেকদিনের। কিন্তু লাল্টুর জন্মের পর ওর ঠাকুমার বুকটা ধক্ করে উঠেছিল, পুরো মনসুরের মুখটা বসানো।
পঞ্চাশের দশকের শুরুতে লাল্টুর ঠাকুর্দা তখনকার অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেয়। শ্যামাপ্রসাদবাবুর মৃত্যুর পর যে ট্রামভাড়া বাড়ানোর জন্যে যে আন্দোলন হয়, তাতে লাল্টুর ঠাকুর্দাও যোগ দিয়েছিল।
লাল্টুর বাবা ছিল চারু মজুমদারের ভক্ত। দুইজন শ্রেণীশক্রকে খতম করেছিল, প্রথমজন একজন স্কুল টিচার , দ্বিতীয়জন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের উকিল।
সাতাত্তরে বামফ্রন্ট আসার আগেই লাল্টুর বাবা হাওয়া বুঝতে পেরে সিপিএমে যোগ দেয়। পার্টির দাদাদের বদান্যতায় প্রাইমারী টিচারের একটা চাকরী জুটে যায়। পাসকোর্সের বি এ র জন্য সেটাই অনেক।
লাল্টু অবশ্য উচ্চমাধ্যমিকে সাদামাটা ফার্স্ট ডিভিশন পেলেও যাদবপুরে বাংলা অনার্স পেতে অসুবিধা হয়নি। লাল্টু কট্টর এস এফ আইয়ের সমর্থকঅবশ্য নিন্দুকে বলে ক্লাসের থেকে ক্যান্টিন, মিছিল, গাঁজার ঠেকে আর ফাঁকা ফ্ল্যাটে লেনিন বোঝাতে ওকে বেশী দেখা যেত।
লাল্টুর বাবা প্রথমে বুর্জোয়া রাষ্ট্র তারপর কংগ্রেসের কালো হাত গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করে গিয়েছে। কিন্তু এখন শুরু হয়েছে একটা নতুন উৎপাত। ফ্যাসিস্ট চাড্ডিরা এখন শ্যামাপোকার মত একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিকে পশ্চিমবঙ্গের জন্মদাতা বলতে চায়,কি নাচানাচি লোকটাকে নিয়ে। হোয়াটসঅ্যাপ থেকে লাল্টু জেনেছে শ্যামাপোকা ব্রিটিশদের দালাল ছিল, ছাত্রদের পুলিশ দিয়ে চাবুকপেটা করেছিল। লোকটা মুসলিম লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। সুভাষচন্দ্র লোকটাকে থাপ্পড় মেরেছিল। আজকাল পন্ডিত টাকলামাকান এটাও আবিষ্কার করেছেন লোকটা ত্রাণের সময় চাল চুরি করেছিল। কিন্তু মুশকিলটা হল এগুলো ফেসবুকে ছাড়লেই কোথা থেকে কতগুলো অশিক্ষিত চাড্ডি বইয়ের পাতার ছবি দিয়ে প্রমাণ করে দেয় পি সি জোশি সমেত সব কমরেড ব্রিটিশদের ব্লো জ ব দিয়েছে, নেতাজিকে বিশ্বাসঘাতক বলে কার্টুন ছাপিয়েছে ,শ্যামাপ্রসাদ মুসলিম লীগ নয় কৃষক প্রজা পার্টির ফজলুল হকের সঙ্গে কোয়ালিশন করেছিলেন, মুসলিম লীগের শয্যাসঙ্গী আর পাকিস্তান আন্দোলনের সমর্থক ছিল কমিউনিস্ট পার্টি এইসব। এইগুলো মিথ্যা আর ফটোশপের কারসাজি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য লাল্টুর কিছু যায় আসে না। বইপত্র এমনিতেই পড়ার সময় হয় না, ফ্যাসিস্ট চাড্ডিদের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতেই সময় কেটে যায়।লকডাউনে লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকার দেওয়ার ফলে ট্রেনের দেওয়ালে গু প্ত রোগের বিজ্ঞাপন সাঁটানোর চাকরিটা গিয়েছে। এখন সারাদিন ফেসবুকের গ্রুপে আর ওয়ালে মিম সাঁটাতেই চলে যায়, বাকিটা গাঁজা আর বাংলার ঠেকে। লেনিন শেখানোর মত সঙ্গিনীর বড় অভাব আজকাল।
“অষ্টম bumফ্রন্ট ” , ” রেজাল্ট বেরোলে পা ছা লাল” এইসব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে প্রচুর মিম ছেড়েছে।আজ লোকটার জন্মদিন। লাল্টু আজ গাঁজার ঠেকে পাঁচ মিনিট কম থাকবে। শ্যামাপোকার বাপের নাম ভুলিয়ে ছাড়বে। লাল্টু আজ প্রমাণ করবেই ও একজন আদর্শ কমিউনিস্ট। গত বছর এক চাড্ডি বইয়ের ছবি দেখিয়েছিল সরোজ মুখার্জি আর হীরেন মুখার্জি নাকি শ্যামাপোকার প্রশংসা করেছিল। এগুলো মিথ্যা সন্দেহ নেই ,কেননা এত বড় কমিউনিস্টদের নাম লাল্টু জানল না আর এই চাড্ডিরা জেনে গেল?
পিনাকী