হিমালয় পর্বতের কাশ্মীর উপত্যকাকে ছাড়িয়ে লাদাখ অঞ্চল, যার উত্তর দিকে কারাকোরাম গিরিশৃঙ্গ এবং দক্ষিণ দিক জান্সকার গিরিশৃঙ্গ-বেষ্টিত এবং পাকিস্তান ও চিনের সীমান্তও বটে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কৌশলগতভাবে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দেশভাগের সময়ে জম্মু ও কাশ্মীরের একটি ভাগ হিসেবেই লাদাখ ভারতের সঙ্গে জুড়েছিল ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে যখন পাকিস্তানের মদতপুষ্ট একটি উপজাতি এই রাজ্যটির উপর হামলা চালায়। এই অঞ্চলের একটি বড় অংশ, কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ গিলগিট অঞ্চল যার অন্তর্ভুক্ত এবং মহারাজার শাসনকালে যেটিকে সীমান্ত জেলা ও এলাকা হিসেবে দেখা হত, আজও অবৈধভাবে পাকিস্তানের দখলে রয়েছে। পাকিস্তান এই এলাকাটিকে গিলগিট-বালতিস্তান হিসেবে দেখে এবং পাক অধ্যুষিত জম্মু কাশ্মীর থেকে এই অঞ্চলকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এই গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলটি সরাসরি পাকিস্তান সরকারের শাসনাধীন রয়েছে। এর মধ্যে একটি অঞ্চল আবার পাকিস্তান অবৈধ ভাবে চিনের হাতে তুলে দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে।আকসাই চিন। চিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত উদ্যোগ, ‘চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর’ও পাকিস্তানের দখলিকৃত অঞ্চলের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয়েছে। এই অঞ্চলটি স্থলবেষ্টিত , যার মধ্যে রয়েছে জান্সকার রেঞ্জ, লাদাখ রেঞ্জ প্যাংগং রেঞ্জ এবং কারাকোরাম রেঞ্জ। এই অঞ্চলের জনসংখ্যার বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তবে কার্গিলের সুরু এবং শঙ্কু উপত্যকাতে বাল্টি জাতিভুক্ত শিয়া মুসলমানদের প্রাধান্য রয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমি সাল্টোরো রিজ-সহ বিশ্বের সর্বোচ্চ রণক্ষেত্র ‘সিয়াচেন হিমবাহ’ এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এই কারণেই কৌশলগতভাবে এলাকাটির বাড়তি গুরুত্ব। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য সিয়াচেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থান। কারাকোরাম রেঞ্জের সম্প্রসারণ এই সাল্টোরো রিজ-এর আধিপত্যাধীন এই এলাকা পুরোপুরি ভারতীয় সেনার দখলে। বহু চেষ্টা করেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই রিজ-এ সামান্যতমও দাঁত ফোটাতে পারেনি। ভারতীয় সেনার এই দখলের জন্যই চিন-পাক বেল্ট রোড (সি পি ই সি) প্রকল্পের ওপরে ভারত এখনও প্রাধান্য রাখতে সক্ষম হচ্ছে। চিন ও পাকিস্তানের কৌশলগত ও সামরিক সুযোগ-সুবিধা হাতানোর এই প্রকল্পটি ভারতের কাছে যথেষ্টই উদ্বেগের। এই এলাকার ওপরে দখল থাকার কারণে পাকিস্তান এবং চিনের মিলিত সামরিক শক্তির হামলা আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে, যাদের মূল লক্ষ্য হল নুবরা উপত্যকাকে বিচ্ছিন্ন করে লাদাখ দখল করা। কার্গিল অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব দেশের মানুষের কাছে অজানা নয়, কেননা সেইখানে তারা প্রথম একটি বড় রকমের সংঘর্ষ ঘটতেও দেখেছে। কার্গিল যুদ্ধের দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে এই জুলাইয়েই।
লাদাখিরা অত্যন্ত জাত্যাভিমানী এবং জাতীয়তাবাদী হওয়ার জন্য তাঁরা গৌরববোধ করেন। তাঁরা নিজেদেরকে ভারতের উত্তর সীমান্তের রক্ষক হিসেবেই দেখেন। সেই ১৯৪৯ সালে যখন মহারাজার হাত থেকে শাসনভার গেল শেখ আব্দুল্লার হাতে, তখন থেকেই লাদাখিরা কাশ্মীরি কর্তৃত্ব থেকে নিজেদেরকে পৃথক করার চেষ্টা করে গেছেন। লাদাখকে কাশ্মীরের একটি জেলা হিসেবে রেখে, তাদের জাতিগত, ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে প্রথম যখন রাজ্যটি পুনর্গঠন করা হল, তখন লাদাখিদের মনে হল, তাদেরকে শুধু কেবল কাশ্মীরের একটি উপাঙ্গ করেই রাখা হয়েছে, যা ধীরে ধীরে সত্য প্রমাণিতও হচ্ছিল। আবদুল্লার প্রথম মন্ত্রিসভায় লাদাখ থেকে কোনও প্রতিনিধি রাখা হল না। বিরোধিতা একেবারেই না-পসন্দ্ ছিল শেখসাহেবের এবং সেই জন্য তাঁর ন্যাশনাল কনফারেন্সই ছিল একমাত্র রাজনৈতিক দল আর তার মধ্যে বেশিরভাগই কাশ্মীরি মুসলমান। বিধান সভায় লাদাখ থেকে মাত্র দুটি আসন ছিল। সুতরাং, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন’ হয়ে দাঁড়াল কার্যত ‘কাশ্মীরি শাসন’। শেখের শুরু করা “ভূমি সংস্কার“-এ গোম্ফাগুলিকে বাদ দেওয়া হল না এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এর তীব্র বিরোধিতা করলেন, তাঁদের যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তিও ছিল। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত গোম্ফাগুলিকে ভূমি সংস্কার আইনের আওতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অবস্থা আরও খারাপের দিকে বাঁক নেয় যখন লাদাখিদের জন্যও উর্দু ভাষা বাধ্যতামূলক করা হয়। শিয়া, বৌদ্ধ এবং সুন্নিদের পরিচালিত তিনটি প্রাইমারি স্কুলের জন্য নির্দ্দিষ্ট ডোগরা রাজাদের সহায়ক অনুদান একতরফা ভাবে ফিরিয়ে নিল সরকার। বার্ষিক বাজেটে লাদাখের জন্য কোনও রকম অর্থ বরাদ্দ করা হল না। বস্তুত, ১৯৬১ সালেই প্রথমবার এই অঞ্চলের জন্য আলাদা ভাবে আর্থিক বরাদ্দ করা শুরু হয়। কাশ্মীরি নেতাদের এই ধরনের একচোখামি এবং পক্ষপাতমূলক নীতি লাদাখিদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করেছিল। তখন তারা তাদের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলির উন্নয়ন এবং তাদের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে কাশ্মীর থেকে পৃথক হওয়ার দাবি শুরু করলেন।
লাদাখ অঞ্চলের উন্নয়ন না হওয়ার প্রধান কারণ নেহেরু সরকারের একটি ভ্রান্ত নীতি, যার দরুণ ‘সীমান্ত (border) অঞ্চল’গুলিকে ফ্রন্টিয়ার (frontier) এলাকা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। সেই সময়ের সরকার এই দুটোর মধ্যে মূল ফারাক বুঝতে অক্ষম ছিল। ফ্রন্টিয়ার এলাকা পাকাপাকি হয় না, তা সরে যেতে পারে, এবং একটি বাফার জোন হিসেবে রাখা হয় যা আদান প্রদান করা যেতে পারে, কিন্তু সীমান্ত অঞ্চলের একটি অনড়, অলঙ্ঘনীয় রেখা আছে যা দিয়ে সীমান্ত বা বর্ডারকে নির্ধারণ করা হয়। বর্ডার এলাকার দৃষ্টি থাকে ভিতরের দিকে, ফ্রন্টিয়ার থাকে বাইরের দিকে। যেহেতু ভারতের আগ্রাসনের কোনও পরিকল্পনা নেই এবং কোনদিনও ছিল না, তাই বর্ডার অঞ্চলগুলির উপর জোর দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তা না করে জায়গাগুললিকে অনুন্নত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। ছেঁদো যুক্তি খাড়া করা হয় যে, জায়গাগুললিকে উন্নত করলে, রাস্তাঘাট তৈরি করলে বিদেশী শক্তির সম্ভাব্য হামলার পথ সুগম করে দেওয়া হবে। সেই জন্যই না রাজ্য সরকার না কেন্দ্রীয় সরকার, কেউই এই অঞ্চলগুলিতে প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট তৈরির কোনও চেষ্টা করেনি, যার ফলে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ এবং বিচ্ছিন্নতারবোধ বাড়তে থাকে।
বাড়তে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদের কারণে প্রাথমিকভাবে একজন কেন্দ্রীয় প্রশাসক নিয়োগের দাবি উঠে আসে এবং পর্যায়ক্রমে তা অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং সরাসরি কেন্দ্রীয় প্রশাসন দাবির রূপ নেয়, যা ১৯৬২ সালের পর এক বছরের জন্য তা করাও হয়েছিল এবং স্বাভাবিকভাবেই এই দাবি কেন্দ্রীভূত হয় একটি আলাদা অঞ্চল তৈরির দিকে। কাশ্মীর উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাদাখিরা আবার বিপদের ঘন্টা শুনতে পায় এবং ৮০র দশকের শেষাশেষি লাদাখকে একটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জোরদার হয়। এর নেতৃত্ব দেয় লাদাখ বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। দার্জিলিং হিল কাউন্সিলের মতোই লাদাখেও একটি স্বায়িত্তশাসিত হিল কাউন্সিল গঠনের জন্য ১৯৮৯ সালের অক্টোবরে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কাশ্মীর-কেন্দ্রিক রাজ্য প্রশাসন এই কাউন্সিলের পক্ষে একেবারেই ছিলেন না। বহু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অবশেষে ১৯৯৫ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় সরকার ‘লাদাখ অটোনমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল অ্যাক্ট’ কার্যকর করে যার মাধ্যমে লেহ এবং কার্গিলকে দুটি আলাদা ‘অটোনমাস হিল কাউন্সিল’-এর সুযোগ দেওয়া হয়।
কিন্তু হিল কাউন্সিল গঠন হবার পরেই তাদের হাতে সেই ধরনের ক্ষমতা না দেওয়া নিয়ে লাদাখি এবং পরবর্তীকালের কাশ্মীর-কেন্দ্রিক রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে চাপান উতোর চলতেই থাকে। কাশ্মীরি নেতাদের অভিসন্ধি নিয়ে সন্দিহান হওয়ায় লাদাখ বুদ্ধিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ফের আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তোলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় জানস্কার অঞ্চলের বাড়তে থাকা ক্ষোভ। কার্গিল জেলা প্রশাসনের বিমাতৃসুলভ আচরণ এবং জানস্কার বিধানসভাক্ষেত্রকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টার কারণেই জানস্কারবাসীদের মনে এই ক্ষোভ দানা বাঁধে।
মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি একেবারেই বদলে যায়। এই সরকারের কৃতিত্ব এখানেই যে, ‘অটোনমাস হিল কাউন্সিল’গুলোকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়ার বহুদিনের দাবিকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। ২০১৮তে রাজ্যপালের প্রশাসন ‘লাদাখ হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল ( অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল’ পাস করে এই কাউন্সিলগুলিকে প্রশাসনিক এবং আর্থিক ভাবে আরও ক্ষমতাবান করে তোলে। শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য একটি ক্লাস্টার ইউনিভার্সিটি স্থাপনের দাবিও মেনে নেওয়া হয়েছে। শেষমেশ, এই ফেব্রুয়ারিতে সরকার লাদাখ অঞ্চলের আলাদা জেলার দাবির ও অনুমোদন দেয় এবং জম্মু এবং কাশ্মীর অঞ্চলের মতোই লাদাখও এখন একটি আলাদা প্রশাসনিক অঞ্চল।
আগেই বলা হয়েছে, এই অঞ্চলটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এর অবস্থানের কারণে। সেই জন্য আমাদের নিজেদের স্বার্থেই দরকার যে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা যেন খুশি থাকেন এবং সরকারও তাঁদের সন্তুষ্ট রাখেন যাতে করে তাঁরা আমাদের সীমান্তের রক্ষক ও অভিভাবকের গুরুদায়িত্ব সর্বতোভাবে পালন করেন। লাদাখিদের যে কয়েকটি হাতে গোনা দাবি আছে তা সম্পূর্ণ বৈধ এবং যুক্তিসঙ্গত যার দিকে সর্বাগ্রে নজর দেওয়া দরকার, কারণ তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যাহত করতে পারে। বর্ডার অঞ্চলের মানুষজন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভরকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, তাঁরা বিদেশী শত্রুর নজরের মধ্যে থাকে এবং এই অঞ্চলগুলিতে সমস্যা তৈরি হোক শত্রু শিবির তো সবসময় সেটাই চাইবে। যদি সেখানকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়, শত্রুপক্ষ তার সুযোগ নিয়ে সম্ভাব্য সঙ্ঘর্ষের সময়ে এঁদের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানে আমাদের ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে দিতে পারে। দশ বছর আগে কার্গিল যুদ্ধ জয়ের সময়ে কার্গিলের মানুষেরা পাকিস্তানী সেনাকে উৎখাত করতে ভারতীয় সেনাদের সক্রিয় ভাবে সব রকমের সাহায্য করেছে, যার স্বীকৃতি দিয়েছে স্বয়ং ভারতীয় সেনা।
লাদাখ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ ভাবে সীমান্তের উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। জরুরি হল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকরণ–সরাসরি রেলের সংযোগ, ভাল রাস্তা, যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর দেরী হয়ে যাওয়া দর্চা-পদুম-মীনো-লেহ সড়ক এবং কার্গিলে একটি এয়ারফিল্ড। জম্মুর সঙ্গে কিশতোয়ারের মধ্য দিয়ে লেহ অঞ্চলের সড়ক সংযোগ খুব দরকারি একটি কাজ। কার্গিল-জানস্কার রাস্তার ওপরে খোয়া বিছানো এবং পানিখার-পেহেলগাম রাস্তা খোলাও খুব দ্রুত সম্পূর্ণ করতে হবে। জোজিলা টানেল তৈরি করাও কৌশলগত প্রয়োজন। যতদিন না সারা বছর ব্যবহার্য রাস্তা তৈরি হচ্ছে ততদিন ওখানকার বাসিন্দাদের জন্য, বিশেষ করে শীতের মাসগুলিতে প্লেনের ভাড়ার ওপরে কিছু ছাড় দেওয়ারও দরকার আছে।
নানা ধরনের উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষার পেশাদারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, যার মধ্যে কার্গিলে আলাদা ভাবে প্রস্তাবিত একটি ক্লাস্টার ইউনিভার্সিটি তৈরির কাজ সরকারের কাছে প্রাধান্য পাওয়া উচিত। ভোতী ভাষাকে অষ্টম তফশিলের অন্তর্গত করাটা একটি বহু পুরনো দাবি। কার্গিল এবং লে এই দুটি অঞ্চলকেই ধর্মীয় গবেষণা এবং শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার প্রয়োজন আছে। সিভিল সেক্রেটারিয়েট এবং অন্যান্য সরকারি অফিসে নেওয়ার ব্যাপারে লাদাখিদের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য চলে সেই ব্যাপারেও কিছু করার দরকার আছে। লেহ অঞ্চলের জনতাত্ত্বিক ভারসাম্য ব্যাহত করার যে অপচেষ্টা হচ্ছে তা এখনই বন্ধ হওয়া দরকার, বরং ওই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে। কাশ্মীর-কেন্দ্রিক সরকার বিগতদিনে কার্গিল এবং লে-র মধ্যে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি’ নিয়ে তাদের মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা যে ধরনের কষ্টের জীবন যাপন করেন, বিশেষ করে অসম্ভব শীতের মাসগুলিতে, তাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে এবং যতদূর সম্ভব তাঁদের সাহায্য করতে হবে। সর্বোপরি, কাশ্মীর-কেন্দ্রিক সরকার এই অঞ্চলের মানুষদের ক্রমাগত যেভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে দুর্ব্যবহার করে চলেছে, তার অবসান ঘটাতে হবে।
পর্যটকদের কাছে লাদাখ খুলে দেওয়া হয় ১৯৭৪ সালে। প্রথম দিকে পর্যটন শুধু মাত্র ট্রেকিং এবং পাহাড়ে চড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কাশ্মীর উপত্যকায় চলা ক্রমাগত সমস্যার ফলে, লাদাখ এখন একটি বড়সড় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্থানীয় আর্থিক উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য পরিষেবা ও পরিকাঠামো গড়ে তোলার যেমন দরকার আছে, এই সব উন্নয়ন যাতে পরিবেশের ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এই অঞ্চলে হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ারের সম্ভাবনা প্রচুর এবং এমন একটি পরিবেশবান্ধব শক্তি-উৎসের সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন।
লাদাখ অঞ্চলের প্রশাসনিক পুনর্গঠনও প্রয়োজন, যদিও সেখানকার জনসংখ্যা খুবই কম। কিছু নতুন জেলার গঠন এবং বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্রগুলিকে নতুন ভাবে ভাগাভাগি করাও সরকারের উন্নয়নের নীতির অঙ্গ হওয়া উচিত।