কলকাতার দমদমে সকেট বোমা ব্লাস্ট আর ‘ফিল গুড’ এপার বাংলা

২০১৮ সালে কলকাতার দমদমে বিকট বোমা ব্লাস্ট হয়, প্রাণ হারায়, আহত হয় কিছু মানুষ । মনে পরে ? কাগজে পড়েছিলাম স্কটল্যান্ডিয়ার স্কোয়াডের সম ক্ষমতাধারী এপার বাংলার গোয়েন্দা দফতর বলেছিলো ওটা ছিল সকেট বোমা । সকেট বোমা ব্লাস্টে সিদ্ধ হস্ত জে এম বি আর আনসারুল্লা বাংলা । এই দুই জঙ্গি গোষ্ঠীর পীঠস্থান ওপার বাংলা । এপার বাংলার ‘ফিল গুড’ সরকারের গোয়েন্দা দফতর দমদমের বোমা ব্লাস্টে কেমন যেন জে এম বি-আনসারুল্লা বাংলা সম্পৃত্ততার গন্ধ পেয়েছিলো । পাশের বাড়ি পুড়লে, নিজের বাড়িতেও আঁচ লাগে !

বেশ কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে ‘আইইডি’ বিষ্ফোরণ কান্ডে ঘটনাস্থলেই যে দুজন মারা যায় [শাকিল গাজি ও সুবহান সেখ] তারা ছিল বংলাদেশের ‘জামাতুল মুজাহিদিন বংলাদেশ’ [জেএমবি]-র সদস্য। এই ঘটনার সঙ্গে জেএমবি’ই শুধু নয়, এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিলো ভারতের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী জেহাদি সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদ’ ও ‘জমিয়ত-উল-মুজাহিদিন’, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আই.এস.আই এবং অন্তর্দেশীয় আরো কিছু জঙ্গি সংগঠনেরও । তদন্তে মারাত্মক যে তথ্যটি উঠে এসেছিল যে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠেছে কিছু মাদ্রাসা যেখানে মূলতঃ জেহাদি তৈরী করা হয় । এ রকম দুটি মাদ্রসাকে চিহ্নিত করা গেছিল- বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের ‘শিমুলিয়া মাদ্রাসা’ ও মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলার ‘মকিমনগর মাদ্রাসা’। মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গকে তাদের একটা ঘাঁটিতে পরিণত করে তুলতে সক্ষম হয়েছে । বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো ভারতে ঢুকে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম করার জন্যে পশ্চিমবঙ্গকে তাদের সেফ করিডর হিসেবে ব্যবহার করে| বাম সরকারের আমলে সব কিছু জেনেও তা আটকানোর জন্যে কার্যতঃ কোনো ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয় নি। সরকার নির্লিপ্ত থাকতো মুসলিম মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট রাখতে । এ দেশে সব রাজনৈতিক দলগুলোই ভাবে যে মোল্লা-মুফতি-ইমামরা চটে গেলে মুসলমানরা ভোট দেবে না, বামফ্রন্টও তাই ভাবতো। মোল্লা-মুফতিদের সন্তুষ্ট করতে বামফ্রন্ট সরকার তাদের বহু অন্যায় দাবীর কাছে বারবার মাথা নত করেছে । তসলিমা ইস্যু, মাদ্রাসা ইস্যু, অনুপ্রবেশ ইস্যু – সব ইস্যুতেই সরকার মাথা নত করে রাখতো । সরকার তসলিমার বই নিষিদ্ধ করেছিলো, তাঁর মাথা কেটে নেওয়ার যারা ফতোয়া দিয়েছিলো তাদের মহাকরণে লাল কার্পেট অভর্থনা জানিয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত তসলিমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়িতও করেছে । বাংলাদেশের জেহাদিরা ভারতে জেহাদি কর্মকান্ড চালানোর জন্যে পশ্চিমবঙ্গকে করিডর হিসেবে অনায়াসে ব্যাবহার করছে । এ দেশের মুসলিম মৌলবাদীরা সরকারকে সর্বদা চাপে রাখে আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জেহাদি সন্ত্রাসবাদীরা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় অবাধে ঢুকে সারা দেশে তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেয়। ব্যাপারটা কি নেহাতই কাকতালীয় ? না কি রাজ্যের মুসলিম মৌলবাদীদের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদীদের গূঢ় সম্পর্ক আছে ?

পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন হঠাত এই প্রসঙ্গ কেন ? কারণ আছে । আমরা সকলেই বাংলাদেশের মুক্তচিন্তকদের ধারাবাহিক হত্যার কথা অল্প বিস্তর জানি । স্বল্প কিছু মানুষ, আমরা যারা এবাংলায় বসে লেখালিখি করি, আমরা কি চাপাতি বা বন্দুকের আক্রমনের থেকে একেবারেই নিরাপদ ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই প্রসঙ্গ সম্মন্ধে লিখতে বসলাম । আসুন আরেকটু খতিয়ে দেখি । ২০১১ সালে তৃনমূল ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম মৌলবাদীদের তোষণ আরো কয়েকগুণ বেড়েছে ! এর ফলে মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের গতিবিধি এ রাজ্যে যে আরো বৃদ্ধি পাবে তা জানাই ছিল !! পশ্চিমবঙ্গ যে করিডর থেকে ঘাঁটিতে পরিণত হয়ে যাবে সেটা আমরা অনেকেই ভাবতে পারি নি । ‘জামাত-ই-ইসলাম’ আর পশ্চিমবঙ্গের সরকার মহলের কিছু মাথার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা জানতেও পারতাম না যদি জঙ্গিদের ক্ষণেকের ভুলে বা অসতর্কতায় খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কান্ডটি না ঘটতো । রাজ্য সরকার কখনো বলেছে সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের ঘটনা তো কখনো বলেছে দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বোমাবাজির ঘটনা !! যে আইইডিগুলি ঘটনাস্থলে তখন মজুত ছিলো সেগুলি সবকটা ফাটিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে । দু-একটি নমুনা রাখা হলো না কেন ? এর মধ্যে বিশেষ কোনো অভিসন্ধি নেই তো ? এন.আই.এ যাতে তদন্ত না করতে পারে তার জন্যে প্রমান লোপাট করা হয়েছিল ? ‘ফিল গুড’ এপার বাংলার সরকার কী কিছু লুকাতে চায় ? এবাংলার মুসলিম সমাজের ধর্মগুরু ও বুদ্ধিজীবীদের কাছে জনগণের এটাই প্রত্যাশা যে তাঁরা সব থেকে বেশী মুসলিম জঙ্গিদের নিন্দা করবেন, জেহাদি কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাদ্রাসাগুলির বিরুদ্ধে সরব হবেন এবং জঙ্গি মোকাবিলায় সরকারের পাশে দাঁড়াবেন ! মোল্লা-মুফতি-ইমামরা বিষ্ফোরোণ কান্ড ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিন্দা না করে , ঘুরিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও মিডিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছিল যে এটা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর তাঁদের এই ষড়যন্ত্রের গল্প প্রচারিত হয়েছিলো আহমেদ হাসান ইমরানের ‘কলম’ পত্রিকায় । সিদ্দিকুল্লাহর বক্তব্য: ‘মাদ্রাসা কোনও দিন সন্ত্রাসের শিক্ষা দেয় না । … মাদ্রাসায় যারা কুরআন-হাদিস পড়ছে তারা শান্ত । কুরআন-হাদিসের কোথাও সন্ত্রাসবাদীদের স্থান নেই । … ধর্মের সঙ্গে জেহাদকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে|’ ত্বহা সিদ্দিকির বক্তব্য:’আজকে মুসলিম সমাজের উপর মিডিয়া আক্রমণ শুরু করেছে । আমাদের হয়ে কথা বলার মতো কোনও শক্তিশালী মিডিয়া নেই । রয়েছে একমাত্র ‘কলম’। এই কলমকে বন্ধ করার জন্য সম্ভবত চক্রান্ত ।’ আহমেদ হাসান ইমরান : “হঠাৎ আমাদের মাদ্রাসাগুলি সম্পর্কে অপপ্রচার শুরু হয়েছে । হঠাৎ সন্ত্রাসবাদের তকমা দেওয়া হচ্ছে মাদ্রাসাগুলোর উপর ।”

বিষ্ফোরণ কান্ডের ১৭ দিন পর ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের সংগঠন সভা করে খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ ও জিহাদি কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছিল । ১৭ দিন সময় কেন লেগেছিল মুখ খুলতে ইমামদের ? সভাটি হয়েছিলো মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর শহরের অখ্যাত একটি জায়গা বরজে । এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা কলকাতায় না করে এত মফস্বল ও একটি অখ্যাত জায়গায় করা হয়েছিল ? সভায় ইমামদের চেনা কোনো মুখকে দেখা যায়নি । শিমুলিয়া ও মকিমনগর মাদ্রাসার পর আর একটা জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারখানা তথা ডেরা তথা মাদ্রাসার খোঁজ পাওয়া গেছে বীরভুম জেলার বোলপুরে । বোলপুর শহর লাগোয়া মুলুক গ্রামে এই মাদ্রাসাটি গড়ে তোলা হয়েছিলো । সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বর্ধমান শহরে প্রকাশ্য সভায় মুসলমানদের বলেছিলো তারা যেন মাদ্রাসায় তদন্ত করতে ঢুকতে না দেয় কিংবা তদন্তকারী দলের সদস্যদের দেহ তল্লাশী করে তবে ঢুকতে দেয়! আরো বলেছিলো যে, ধরা পড়া জঙ্গিদের হয়ে মামলা লড়বে । তাহলে কি জঙ্গিদের সঙ্গে সত্যিই কোনো যোগসূত্র রয়েছে সরকার ঘনিষ্ঠ এই ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ? এখন আবার সাথে যোগ হয়েছে রোহিঙ্গা ভাই বেরাদাররা…….!

ওপার বাংলার মুক্তচিন্তক আর এপার বাংলার মুক্তচিন্তক, সকলেই এক তিমিরে বন্ধু ! চাপাতির কোপে বা বন্দুকের গুলিতে, যদি এবার এপার বাংলার কোনো মুক্তচিন্তকের মৃত্যু হয়, তবে এই মুসলিম ধর্মীয় জঙ্গিদের ক্ষমতার প্রবলতা সমগ্র বাংলা জুড়ে প্রমানিত হবে । পাঠক, দমদমের সকেট বোমা ব্লাস্ট কি তারই প্রস্তুতি ?

রাজর্ষি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.