সময় ঠিক দুপুর দুটো।
স্থান: সার্কাস এভিনিউ (Circus Avenue), পার্ক সার্কাস (Park Circus)।
মেঘাছন্ন পরিবেশ, সামান্য হিমেল হাওয়া বইছে। প্রকৃতির হিমেল হাওয়া নিমেষেই উষ্ণ হয়ে গেলো ” জয় হিন্দু সংহতি ” তুমুল গর্জনে। আশে পাশের অনেকেই হকচকিয়ে যান।
আজ দুপুর দুটো নাগাদ হিন্দু সংহতির একটি বিশাল মিছিল আসে পার্ক সার্কাস এর সার্কাস এভিনিউতে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের (Office of Bangladesh Deputy High Commission) সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে ও বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারকে সম্প্রতি বাংলাদেশে যে হিন্দুদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার হচ্ছে সেই বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য।
কিন্তু এই পরিকল্পনায় বাধ সাধে পুলিশ। একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে বাধা দেয় তারা।
বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারের অফিসে যাওয়ার আগেই বিশাল পুলিশ বাহিনী আটকে দেয় হিন্দু সংহতির প্রায় শ’খানেক সভ্যবৃন্দকে।
শুরু হয় পুলিশের সাথে তুমুল ধস্তাধস্তি, ফলে আহত হয় হিন্দু সংহতির সমর্থকরা , যাদের মধ্যে দুইজন মহিলাও আছেন।
সংবাদ সংগ্রহ করতে এসে আহত হন দুই একজন সাংবাদিকও। সার্কাস এভিনিউতে, পুলিশ কমপক্ষে ৩০ জন হিন্দু সংহতির সভ্য সমর্থককে গ্রেফতার করেছে।
এর আগে প্রান্তিক, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সবাই এই দক্ষিণপন্থী সংগঠনের ছায়াতলে পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি হিন্দুর স্বার্থরক্ষায় ব্রতী হিন্দু সংহতির উদ্যোগে আজ বাংলাদেশে হিন্দু গণহত্যার বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ শুরু হয় শিয়ালদহ থেকে।
সাংকেতিক ভাবে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর থেকে সংগঠনের সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে হাজার খানেক সদস্য শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শুরু করে, কারণ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় শিয়ালদহ স্টেশন হলো ইসলামিক মৌলবাদীদের কলকাতায় প্রবেশের দ্বার।
পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় অবস্থা সামলাতে কারণ হিন্দু সংহতির সদস্যদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। ভট্টাচার্য্য ও সংগঠনের অন্যান্য বরিষ্ঠ নেতা শান্তনু সিংহ , সুজিত মাইতি সহ আরো অনেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের নির্মমতা ও লাঠিচার্জে আহত হয় বহু সদস্য। পুলিশের বাধার শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারের অফিস পর্যন্ত যেতে না পারলেও সংগঠনের আরেক দল সদস্য সেখানে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশ তাদেরকেও গ্রেফতার করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।
কেন এই দিনটিকে বেছে নেয়া হলো প্রতিবাদের জন্য?
শান্তনুবাবু তাঁর ফেসবুক পেজে লেখেন, “লাল বাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে বসে আছি। অবাক লাগে। এই পুলিশই আমাদের ধরে নিয়ে এলো। আগামী বছর পশ্চিমবাংলায় লক্ষীপুজো করতে গেলে বাংলাদেশের হিন্দু বাঙালির ভবিতব্য না হয়, তার জন্য আমাদের এই আন্দোলন। একটু ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেই। এই কোজাগরী পূর্ণিমার দিন ১৯৪৬ এ আজকের বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায় হিন্দু বাঙালি বাড়ির কয়েকশো মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছিল। “
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়ার কিছুক্ষন আগে দেবতনুবাবু বলেন, “বাঙালির ধন, সমৃদ্ধির দেবী মা লক্ষীর পুজোর দিনে বাংলাদেশের নোয়াখালীতে যে নির্মম হিন্দু গণহত্যা ঘটেছিলো আজ থেকে ৭৫ বছর আগে বাঙালির স্মৃতিপটে তা অম্লান হয়ে আছে ও থাকবে চিরকাল। সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের প্রতিরূপ দেখা গেলো বাংলাদেশে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গা পুজোর সময়এবার। এই প্রজন্মের দুই বাংলার হিন্দু বাঙালিদের কাছে এটাই উপযুক্ত সময় ইসলামীয় মৌলবাদের কণ্ঠরোধ করে রক্তাক্ত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি রুখে দেয়ার। সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার কাজে আমরা ব্রতী। আমরা সঙ্গত কারণেই লক্ষীপূজোর দিন বেছে নিলাম প্রতিবাদের জন্য।”