চলে গেলেন ‘কোহিনুর’ বিচারপতি মুরলীধর, অভূতপূর্ব বিদায়ী অনুষ্ঠান দিল্লি হাইকোর্টে

উপচে পড়ছে আইনজীবীদের ভিড়। দাঁড়ানোর জায়গা নেই দিল্লি আদালতের সিঁড়িতে। যেদিকে চোখ যায়, দেখা যায় কালো কোট। প্রত্যেকেই বিষণ্ণ। কারণ সেখান থেকে চলে গেলেন দক্ষতম এক বিচারপতি এস মুরলীধর।

তাঁর বদলি হয়েছিল আগেই৷ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ফেয়ারওয়েল হল৷ চোখের জলে বিচারপতিকে বিদায় জানাল দিল্লি৷ দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিএন পাটিল এই ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘যে কোনও বিষয়ে ওঁর অবাধ চলাচল ছিল৷ আমরা একজন বিখ্যাত বিচারককে হারাচ্ছি৷” তাঁর মতো করেই একই সুরে বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সম্পাদক অভিজিৎ বলেন, “আমরা আদতেই এক কোহিনুর হিরেকে হারাচ্ছি৷ হাইকোর্ট থেকে একশো কিলোমিটার দূরে চলে যাচ্ছেন তিনি৷”

Image result for murlidhar farewell

শুধু তাই নয়, দিল্লি সরকারের আইনজীবী রাহুল মেহরা প্রথা ভেঙে গেয়ে উঠলেন ‘একলা চলো রে’। তার পরে উর্দুতে শের শোনালেন, ‘ম্যায় আকেলা হি চলা থা জানিব-এ-মঞ্জিল মগর লোগ সাথ আতে গয়ে অউর কারবাঁ বনতা গয়া’। এক অভূতপূর্ব বিদায় অনুষ্ঠানের সাক্ষী হল দিল্লি হাইকোর্ট।

গোটা আদালত জুড়ে সার বেঁধে মুরলীধরকে শ্রদ্ধা জানানোর ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই বলছেন, দিল্লি হাইকোর্ট এমন ফেয়ারওয়েল আগে দেখেনি। মুরলীধর যে বিচারপতি হিসেবে কতটা দক্ষ ছিলেন এবং অন্যদের ভরসার জায়গা ছিলেন, তা এই ছবিই বলে দেয়।

Image result for murlidhar farewell

এদিন নিজের ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানে আবেগী ও সুন্দর বক্তব্য রাখেন মুরলীধর নিজেও। জানান, ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে কার ক্ষমতা বেশি, তা বিচার করতেই হবে। সমান ন্যায় করতে দুর্বলের দিকেই ঝুঁকে থাকতে হবে। তিনি বলেন, “যখন সুবিচারের জয় নিশ্চিত, তখন তা কেউ আটকাতে পারে না। সত্যের সঙ্গে থাকুন, সুবিচার জিতবেই।”

সূত্রের খবর, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মুরলীধরের বদলির আদেশ আসে৷ তিনি জানিয়ে দেন, কোথাও যেতে সমস্যা নেই তাঁর৷ কিন্তু দিল্লি হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা তীব্র আপত্তি করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, মুরলীধর একজন নিষ্ঠাবান বিচারপতি। তাঁকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলি করা হলে বিচারব্যবস্থার মধ্যে নেতিবাচক বার্তা যাবে। এমনকী কর্মবিরতি পালনের হুমকিও দিয়েছিলেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। কিন্তু তার পরেও কলেজিয়ামের সেই সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতি শিলমোহর দেন ও বদলির নোটিফিকেশন জারি করে দেয় সরকার।

Image result for murlidhar farewell

এর পরেই দিল্লিতে শুরু হয় সংঘর্ষ। বহু মানুষ মারা যান, জখম হয় কয়েকশো। একের পর এক বাড়ি জ্বলে যায়। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে বারবার।

দিল্লির হিংসা নিয়ে মাঝরাতে জরুরি আদালত বসান মুরলীধর। তিনি বলেন, দিল্লি পুলিশের হাল দেখে তিনি রীতিমতো দুঃখিত৷ এই সংঘর্ষের পেছনে নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুরলীধর৷ এর পরেই রাতারাতি তাঁর বদলি হয়ে যায়৷ প্রবল আলোচনাও শুরু হয় এই বদলি নিয়ে৷ যদিও পরে দাবি করা হয়, এটা রুটিন বদলি ছিল।

বিরোধী শিবিরের অনেকের মতে হাইকোর্টের এই বিচারপতির অনেক পর্যবেক্ষণ ও রায়ে খুশি নন শাসক শিবির। সে কারণেই তাঁকে বদলি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.