কেরলে বাম জমানায় হিন্দু নিধন

২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি সিপিএমের হিংস্র বাহিনীর হাতে ৫২ বছর বয়সী বিজেপি কর্মী সন্তোষকুমার খুন হয়েছিলেন। সশস্ত্র আক্রমণকারীরা কেরলের মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা পিনারই বিজয়নের বিধানসভা কেন্দ্র ধর্মাদমে সন্তোষের বাড়িতে রাত সাড়ে এগারোটায় হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে। সে তার আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির হয়ে লড়েছিল। সিপিএমের ক্যাডাররা কোট্রায়াম জেলার একটা প্রাইভেট স্কুল আক্রমণ করে জানালা, আসবাব তছনছ করে তারা দল বেঁধে আক্রমণ করেছিল। ওই স্কুলে ক্রিসমাসের ছুটিতে আর এস এসের প্রাথমিক শিক্ষাবর্গের প্রশিক্ষণ চলছিল, পুলিশ তাদের আটক করে। এর পরে সিপিএমের লোকেরা থানা আক্রমণ করে জানালা ভাঙে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ও পুলিশের জিপ ভাঙচুর করে বলপূর্বক তাদের আটক হওয়া লোকদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সিপিএমের সরকার, অতএব কোনো সমস্যা নেই।
বিজয়নের ডাকা শান্তি মিটিংয়ের মাত্র দু-মাসের মধ্যে সিপিএম বিজেপির চারজনকে খুন করেছিল। বিজয়ন নিজে ভাদিকাল রামকৃষ্ণাণের খুনের অন্যতম অভিযুক্ত। কানুরে পানু চন্দ্র খুন ও ধারাবাহিক হিন্দু হত্যা এবং তৎপরবর্তী হিংসা চলতে থাকে। তিরুঅনন্তপরুমের ভারতীয় বিচারকেন্দ্রের নির্দেশক পি পরমেশ্বরণ, আর এস এসের দুজন প্রচারক ভাস্কর রাও কালম্বী ও আর হরির সঙ্গে কেরলের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ই কে নয়নার সভার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিচারপতি ভিকে কৃষ্ণ আয়ারও শান্তি পুনরদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। প্রতিবারই সিপিএম সেই। শান্তি প্রচেষ্টা বানচাল করে দেয়। সিপিএমের ভাববাদী নেতা নাম্বুদ্রিপাদ বলেছিলেন, “আর এস এসের বিরুদ্ধে আমরা অস্ত্র ধরব।” যখন পেরুমালার পাম্বা নদীতে তিনজন এবিভিপি কর্মীকে পাথর দিয়ে থেঁতলে মারা হলো তখন বিষয়টা বিধানসভায় উত্থাপিত হয়েছিল। নয়নার মুখ্যমন্ত্রী, তিনি বলেছিলেন, “কেন, তারা কি এবিভিপি কর্মী নয়? এদের সঙ্গে আর কী করতে পারেন আপনারা?” কানুরে একজন নিরপেক্ষ পুলিশ অফিসার সিপিএমের ঘাঁটি থেকে প্রচুর দেশি বোমা উদ্ধার করেছিল। নয়নার খুব হাল্কাভাবে জবাব দিয়েছিলেন যে বিষ্ণু উৎসবের জন্য বাজি মজুত করা হয়েছিল।
বিজয়ন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দুজন মহিলাকে ১৮ মাসের শিশু-সহ জেলে পোরা হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা সাজানো হয়েছিল। একজন মহিলা অটোরিক্সা চালককে নাগাড়ে হুমকি দিয়ে তার বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়; এর্নাকুলামের আয়ুর্বেদ কলেজের ছাত্রী পার্টি কমরেডদের লালসার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে অবর্ণনীয় অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়। আইন কলেজের ছাত্রীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়।
১৯৮০-র দশকে বালগোকুল নামে এক শিশু সংগঠন ঘটা করে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালনের আয়োজন করেছিল। সেই প্রচেষ্টা বানচাল করার সিপিএমের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেলে একটা পাল্টা সংগঠন বালসংগঠন বালগোকুলমের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে বাধা দেয়; তখন তারা একটা সমান্তরাল জন্মাষ্টমী পালনের উদ্যোগ নেয়। গত দু’ বছরে ২০১৫-২০১৭ তারা শোভাযাত্রা বার করে সেখানে সাধু ও সংস্কারক নারায়ণ গুরু ক্রুশবিদ্ধ হচ্ছেন দেখানো হয়। এই জঘন্য প্রতারণার জন্য সারা রাজ্যে তারা নিন্দিত হয়েছিল। এক সময়ে হিন্দুরা কে কেলাপ্পাজির নেতৃত্বে আঙ্গাদিপুরম মন্দিরের পুনর্নির্মাণে তাদের অধিকার আদায় করতে চেয়েছিল। এই সিপিএম মুসলমান ধর্মান্ধদের তোষণ করতে আওয়াজ তুলেছিল, “যে পাথরে কুকুরে প্রস্রাব করেছে তাতে চন্দন মাখানো ছাড়া কেলাপ্পান আর কিছুই নয়”। হিন্দু কমরেডদের ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়িতে গণপতি হোম করা ও ঐতিহ্যপূর্ণ পবিত্র দীপ জ্বালানো চলবে না। এক নববধূর গৃহে বিয়ে উপলক্ষ্যে সেই পবিত্র দীপ জালানো হয়েছিল। কিন্তু পার্টির স্থানীয় সচিব সেই গৃহেনিমন্ত্রিত হয়ে এসেছে তাই দেখে সব ভেঙেচুরে দেয়, বলে, আমাদের পার্টির গ্রামে এইসব কিছুই চলবে না। হিন্দুদের বিয়ে, গৃহপ্রবেশ কোনো কিছুতেই হিন্দু ধর্মীয় আচার পালন করতে দেওয়া হবে না কিন্তু বাকি সব ধর্মের আচার নির্বিঘ্নেই করতে দেওয়া হতো।
ত্রিচুরের অনাবাসী বিখ্যাত চিকেন ব্যবসায়ী একে মঞ্জুর এক সঙ্গে আটখানা পাসপোর্ট রেখেছিল, জেড-৩৩১৫৯৭৯, এম – ২৩০৭৪৩৩, এড – ২৩৮০৬৫, জেড-২০৩৬০২৭, জেড-১৮৩৬৪৭০, জেড-০৩৩৬০০, এফ-৬৬১৬৬৫৫ ও জেড-১৫৮২৮৭৩। পাকিস্তানেও তার দোকান আছে। সে পাকিস্তানে অজস্রবার যায়। সে দুবাই থেকে অবৈধভাবে এই পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ করেছে, আদালতে বয়ান দিয়ে নেদানচেরির অভিবাসন আধিকারিক এই তথ্য দিয়েছে। চেঙ্গামানাড়ের পুলিশ জানিয়েছে তার ব্যাগে সব সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। সে পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত।
ত্রিচূড়ের কেরলবার্মা কলেজে স্বামী চিন্ময়ানন্দজীর উপর ধর্মীয় আলোচনাচক্রের সময় সিপিএম হামলা চালায়। অমৃত ইন্সটিউট অব মেডিকাল সায়ান্সেসের ভবন নির্মাণকালে সিপিএমের মুখপত্র দেশাভিমানীতে অভিযোগ করা হয় যে এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য আমেরিকায় কিডনি বিক্রি করা। স্বামী চিদানন্দপুরীর বেদান্ত ক্লাসেও তারা গোলমাল পাকায়। সেখানে নাকি হিন্দু মৌলবাদ শেখানো হচ্ছিল। সবটাই যে মিথ্যে তা প্রমাণ করা যায়। সেই সময়ে আব্দুল নাজির মাদানি বলে এক মুসলমান হিন্দুবিরোধী ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচার চালানো ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপরাধে জেলে ছিল আর তখন সিপিএম নেতারা তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া ও সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।
হিন্দুবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি আরও দেখা যায় — ওনাম উৎসব পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা, ওনাম উৎসবের সময়ে ফুলের কার্পেট বিছানো ও সরকারি অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যপূর্ণ দীপ জ্বালানো বন্ধ, শবরীমালা মন্দিরে কতদিন পূজো দেওয়া যাবে সব ওরা ঠিক করবে— এর উদ্দেশ্য হিন্দু সমাজে ভাঙন ধরানো। ১৯২১ সালের মোপলা বিদ্রোহে হাজার হাজার হিন্দুর উপর নির্যাতন নেমে আসে—ব্যাপক হত্যালীলা, লুঠ, ধর্ষণ সব চলেছিল। সিপিএম তাকে ‘কৃষক বিদ্রোহ’ বলে গৌরবান্বিত করে। স্বাধীনতার পরে সিপিএম হিন্দুমেধ যজ্ঞের প্রধান হোতা ইন্ডিয়ান মুসলিম লিগকে সাদরে থালায় সাজিয়ে মন্ত্রিত্বের পদ উপহার দেয়।
স্বাধীনতার আগে তারা যুক্তি দেয় যে ভরত একটা জাতি নয় আর মুসলমানরা ভয় পায় যে স্বাধীন ভারতে তারা হিন্দু আধিপত্যের শিকার হবে, তাই পাকিস্তানের দাবি যথার্থ ও গণতান্ত্রিক। স্বাধীনতার পরে মালাঙ্গুরমকে মুসলমানদের জেলা বলে ঘোষণা করেন সিপিএমের নাম্বুদ্রিপাদ— কোন যুক্তিতে তা কেউ ব্যাখ্যা দিতে পারবেন? ২০০৩ সালে মারাদে আটজন হিন্দু মৎস্যজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করে মুসলমানরা আর সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেই অপরাধের সিবিআই তদন্ত বন্ধ করে দেয়।
মুসলিম সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে যদি প্রমাণ হয় যে অযোধ্যার বিতর্কিত স্থানে মন্দির ছিল তাহলে তারা ওই জমি হিন্দুদেরকে ছেড়ে দেবে। কিন্তু যে পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই খননকার্য চালিয়েছিল তার সদস্য কেকে মহম্মদ বলেছেন যে বামপন্থী ইতিহসবিদ ইরফান হাবিব তাদের সেই অবস্থান বদল করতে রাজি করিয়েছিলেন। সিপিআই/ সিপিএম সঙ্ঘের শাখার মাঠে ভাঙা কাচ ও কাঁটা ছড়িয়ে রাখত। নয়নারের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে উত্তরাঞ্চলের ডিআইজি কুমারস্বামী একটা সার্কুলার জারি করে, তাতে ছিল, “যেসব আর এস এসের কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে আমার প্রাতরাশের আগে আমাকে তাদের তালিকা দাও”।
২০১৭ সালে নৈয়াত্তিপুরম গুঞ্জন ভক্তিপ্রস্থান পাদন কেন্দ্রম দ্বারা আয়োজিত কর্মশ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেওয়ার কথা ছিল বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা তেনালা বালকৃষ্ণ পিল্লাইকে কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই পুরস্কার প্রদান করতে উপস্থিত হননি, কারণ সেখানে কেরল রাজ্য বিজেপি সভাপতি কুম্মানম রাজশেখরন উপস্থিত থাকবেন বলে কথা ছিল। তার আগের বছর রাজশেখরনের ওই পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল তিনি বিধানসভা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকায় পুরস্কার নিতে পারেননি। এই সিপিএমের ভি এস অচ্যুতানন্দন ১৯৯৮ সালের কোয়েম্বাটোর বিস্ফোরণ কাণ্ডের অপরাধে দণ্ডিত আসামি আব্দুল নাসের আল মাদানির সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
কেরলের বাম সরকার ১৮৫০ জন। বিভিন্ন অপরাধে দণ্ডিত বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আদেশে সই করতে পাঠালে রাজ্যপাল সদাশিবম তা করতে অস্বীকার করেন। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা ধর্ষণ, ড্রাগচালান, মহিলা ও শিশুদের উপর অত্যাচার প্রভৃতি জঘন্য অপরাধে অপরাধী।
সুদীপনারায়ণ ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.