বিচারসভায় প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা হাইলাকান্দিতে নেপথ্যে জমি বিবাদ, গ্রেফতার তিন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রুখতে সতর্ক পুলিশ

যুগশঙ্খ প্রতিবেদন হাইলাকান্দি ও আলগাপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি
সামাজিক বিচারসভায় ডেকে এনে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হল এক ব্যক্তিকে। লোমহর্ষক এই ঘটনা ঘটেছে রবিবার দুপুরে হাইলাকান্দি জেলার মোহনপুরের তুলারথল গ্রামে। এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অভিজিৎ শর্মা মজুমদার নামের বছর তিরিশের এক যুবক। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। নেপথ্যে জমি সংক্রান্ত বিবাদ। আহতেরা সম্পর্কে মৃত অভিজিতের মামা বলে জানা গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। শুরু হয়েছে তদন্ত।
এ দিনের এই রক্তক্ষয়ী ঘটনার সূত্রপাত এক সামাজিক বৈঠককে কেন্দ্র করে। এলাকাবাসীর ডাকা বৈঠকে অভিজিতের সম্পর্কিত মামা প্রতাপ রায়ের জমি সংক্রান্ত বিবাদের নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল। বিচার সভার হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া অভিজিতের সম্পর্কিত মামা প্রভাত রায়ের বয়ানে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে প্রভাত রায় এবং প্রতাপ রায়রা তাঁদের পারিবারিক জমি জনৈক বোবাই মিয়ার কাছে বিক্রি করার জন্য বায়না করেছিলেন। কিন্তু বোবাই মিয়া বায়নার শর্ত অনুযায়ী জমি বিক্রির বকেয়া টাকা না দিয়ে জমির ভোগদখল করছিলেন অনেক দিন ধরে। এনিয়ে বারবার বিচারে নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এভাবে বহুদিন গড়িয়ে যায়। এবারে গ্রামবাসীর মধ্যস্থতায় জনৈক রহিম উদ্দিন প্রভাত রায়ের জমি কিনে নেন। কিন্তু তিনি জমির দখল নিতে গেলেই বিপত্তি ঘটে। বোবাই মিয়ার কাছ থেকে বাধা পেতে থাকেন রহিম উদ্দিন। জমি সংক্রান্ত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য রহিম উদ্দিনের উদ্যোগে রবিবার মোহনপুরের তুলারথল গ্রামে বিচারসভা বসে।
এতে গ্রামের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। বিচার চলাকালীন সময়ে হঠাৎ বোবাই মিয়া এবং তার পক্ষের লোকজন মারমুখী হয়ে হামলা চালায়। এরা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অভিজিৎ শর্মা মজুমদারকে ঘটনাস্থলে হত্যা করে। পিঠে ও মাথার পিছনে ছুরিকাঘাত করে হামলাকারীরা। হামলায় অভিজিতের সম্পর্কিত দুই মামা সহ তিনজন গুরুতর জখম হন। ঘটনায় হতবাক হয়ে যান বিচার সভায় উপস্থিত মানুষ। আহতরা কোনোমতে পালালেও অভিজিতের দেহ সেখানেই পড়ে থাকে। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে চাঞ্চল্য দেখা দেয় গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ তুলারথলে ছুটে গিয়ে অভিজিতের দেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাইলাকান্দির এস কে রায় সিভিল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে আবার মৃতদেহ আলগাপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ঘটনা সঙ্ঘটিত হওয়ায় হাইলাকান্দিতে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে দ্রুত পুলিশ ময়দানে নেমে রহিম উদ্দিন সহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের পাকড়াও করতে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। আহতদের পাঠানো হয়েছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরিস্থিতির খোঁজ নিতে ঘটনাস্থল ছুটে গিয়েছেন হাইলাকান্দির পুলিশ সুপার পবীন্দ্র কুমার নাথ। তিনি বলেন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ডিআইজি দিলীপ কুমার দে-ও হাইলাকান্দি ছুটে এসেছেন। জানা গেছে মৃত অভিজিতের বাড়ি হাইলাকান্দির ভাটিরকুপা তৃতীয়খণ্ড গ্রামে। তিনি একজন সরকারি কর্মী বলেও জানা গেছে। এই ঘটনার জেরে হাইলাকান্দিতে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলেছে। ঘটনার খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বরাক উপত্যকা বিষয়ক ওএসডি শেখর দে হাইলাকান্দি এসপি পবীন্দ্র কুমার নাথ, ডিআইজি দিলীপ কুমার দে-র সঙ্গে কথা বলেছেন খোঁজ নিয়েছেন পরিস্থিতির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.