সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা, পর্নসাইটে তালা, কোনও কিছুতেই শিশু পর্নোগ্রাফির উপর লাগাম টানা যাচ্ছে না। দেশেরই নানা প্রান্তে রমরমিয়ে চলছে শিশুদের নিয়ে নীল ছবির ব্যবসা। কেরলে শিশু পর্নোগ্রাফির বড় চক্র ফাঁস করল রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টিম। গ্রেফতার করা হল ৫৮ জনকে। কেরল পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের যোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে। পাকিস্তান ও ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে এই পর্নসাইটের অ্যাডমিনরা। অন্তত পাঁচ লক্ষ মেম্বার রয়েছে এই গ্রুপের।
কেরল পুলিশের অ্যাডিশনাল ডেপুটি জেনারেল মনোজ আব্রাহামের নেতৃত্বে ‘পি-হান্ট অপারেশন’ চালায় কেরল পুলিশের বিশেষ দল। এই দলের তত্ত্বাবধানে ছিলেন ডিজিপি লোকনাথ বেরা। তিনি জানিয়েছেন, যে সমস্ত ওয়েবসাইটের সঙ্গে শিশু পর্নোগ্রাফির যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলি খতিয়ে দেখা শুরু করেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। খোঁজ মেলে এমন একটা গ্রুপের যার সদস্য সংখ্যা অন্তত পাঁচ লক্ষ। এই গ্রুপের শাখা ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। গ্রুপের অ্যাডমিনরা মূলত পাকিস্তান ও ইউরোপের নানা দেশের বাসিন্দা। কেরল থেকে এই পর্নোগ্রাফি সাইট চালাত ১২৬ জনের একটি টিম। তাদের মধ্যে ৫৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদের খোঁজ চলছে।
এডিজিপি মনোজ আব্রাহাম বলেছেন, এই অ্যাডমিনদের কয়েকজন ভুয়ো নাম ও পরিচয় দিয়ে লুকিয়ে রয়েছে দেশেরই কোথাও। যাদের মধ্যে অধিকাংশই পাকিস্তানি। গত শনিবার থেকে কেরলের ২১টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে কেরল পুলিশের ‘কাউন্টার চাইল্ড সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন ইউনিট’ ও ইন্টারপোল। অসংখ্য ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, মডেম, হার্ড ডিস্ক এবং মেমোরি কার্ড উদ্ধার হয়েছে যার মধ্যে শিশুদের আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ঠাসা। শুধু পর্নোগ্রাফি ভিডিও নয়, শিশুদের হেনস্থা, ধর্ষণ-গণধর্ষণের মতো ভিডিও রয়েছে এই ল্যাপটপ, মোবাইল ও হার্ড ডিস্কে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই গ্রুপের অধীনে অসংখ্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম ও ফেসবুক প্রোফাইল রয়েছে যেগুলি পর্নোগ্রাফি ভিডিও ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে। চলতি মাসেই আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত সাতজনকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সিবিআইয়ের ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ কোঅপারেশন সেলের (IPCC) সঙ্গে এই চক্রের মাথাদের খুঁজতে হাত মিলিয়েছিল জার্মান পুলিশ। সিবিআই জানিয়েছিল বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অদ্ভুত ধরনের কথাবার্তা চলছে, যা যথেষ্ট সন্দেহজনক। তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পারে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শিশু পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত আলোচনা চলে। আদানপ্রদান হয় শিশুদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও। এই চক্রের চাঁই এক জার্মান ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে।
শিশুদের নিয়ে তৈরি পর্নোগ্রাফির চাহিদা হু হু করে বাড়ছে এ দেশে। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে ওই ধরনের পর্নোগ্রাফির অনলাইন সার্চ ক্রমবর্ধমান। চাহিদা বাড়লে জোগান বাড়ানোরও চেষ্টা চলে। সুতরাং শিশু পাচার বাড়ে, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ বাড়ে।