হিন্দু ঐতিহ্যের উত্তরসূরী কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ

মমতা ব্যানার্জি কাশ্মীরের আজাদী চান।নন্দনে বসে তিনি এমনই উক্তি করেছেন।এছাড়া আর যারা কাশ্মীরের আজাদী চান তাদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান সরকার,পাকিস্তানের
জঙ্গি সংগঠন লস্করে তৈয়বা,
হিজবুল মুজাহিদীন এবং সারা পৃথিবীর ইসলামি মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলো।একটি স্বাধীন দেশে বাস করে সেই দেশের আরেকটি অংশের স্বাধীনতা চাওয়ার অর্থ কি হতে পারে আশা করি ভেঙে বলার অপেক্ষা রাখেনা।৩৭০ ধারা বাতিলের পর কংগ্রেস বলেছিল ক্ষমতায় আসলে তারা ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে দেবেন।পঃবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন তিনি কাশ্মীরের স্বাধীনতা চান।কিন্তু তিনি কি জানেন না কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।কাশ্মীর ভারতের পাচ হাজার বছরের পরম্পরার এক অগ্নিস্বাক্ষী, হিন্দু ঐতিহ্যের এক লীলাভূমি।এই ভূমি থেকেই গড়ে উঠেছিল হিন্দু নামের একটি জগৎ আলো করা ধর্ম যার আলোকোচ্ছটায় সারা পৃথিবী উদ্ভাসিত হয়েছে।সেই ভূমির পরাজয় কি কোন হিন্দু মেনে নিতে পারে?

সিন্দু নদের অববাহিকায় অবস্থিত কাশ্মীর থেকেই হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল।সিন্দু থেকে হিন্দু জনগোষ্ঠী যার উত্তরসূরী আজকের হিন্দুস্তান বা ভারতবর্ষ।সে সময় সিন্দু অববাহিকায় বসবাসরত বিশাল জনগোষ্ঠীকে বলা হত হিন্দু।অবশ্য হিন্দু বলতে তখন ধর্মকে বুঝাত না।কাশ্মীরের মূল অধিবাসী ছিল কাশ্মীরী পন্ডিতরা।যাদের মনে করা হত ঋষি কাশ্যপের উত্তরসূরী।মহাভারতে কাশ্মীরের উল্লেখ রয়েছে।সম্রাট অশোক খৃঃপৃঃ তৃতীয় শতাব্দীতে কাশ্মীরে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেছিলেন।
১৩৪৬ সাল পর্যন্ত কাশ্মীর ছিল হিন্দু বৌদ্ধ নৃপতিদের শাসনাধীন।

কাশ্মীরকে বলা হত সভ্যতার লীলাভূমি। হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই সিন্দু নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম সভ্যতা।কিন্তু একটি ধর্মের অমোঘ নির্দেশে কাশ্মীর এখন পৃথিবীর অন্যতম নৃশংসতম জনপদে পরিনত হয়েছে।ইসলাম ধর্মশাস্ত্রের নির্দেশ মতো মুসলিম মাত্রেই পৃথিবী দুই বিপরীদ শিবিরে বিভক্ত।দার-অল-ইসলাম ও দার-উল-হারব।দার-অল-ইসলামের অর্থ হল ইসলামের দেশ অর্থাৎ যে দেশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী শাসক কর্তৃক শাসিত হবে।দার-অল-হারবের অর্থ হলো যুদ্ধের দেশ, যে দেশে যুদ্ধ করিয়া ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।ইসলামের বিধান অনুসারে কোন মুসলমান অ-মুসলমানের অধীনে থাকতে পারেনা।অবিশ্বাসী(অমুসলিম)মাত্রকেই ইসলামে ধর্মান্তরিত করিতে হবে।পরিসংখ্যান বলছে ইসলামী জেহাদে এপর্যন্ত সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩৫কোটি মানুষ নিহত হয়েছে এরমধ্যে হিন্দুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশী।অনেক উদার মুসলমান হয়তো জেহাদি হত্যাকে সমর্থন করেন না কিন্ত তারাও ইসলামের প্রতি জেহাদিদের অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।প্রায় ১৩০০বছর ধরে হিন্দুস্তান ইসলামের পৈশাচিক নৃশংস তান্ডবে বিধ্বস্ত।কিন্তু এ পর্যন্ত কোন মুসলমান অতীত বা বর্তমান অমুসলিম হত্যার নিন্দা করেনি।কারণ মুসলমানের পক্ষে জেহাদ ও জেহাদিদের নিন্দা করা অসম্ভব এতে আল্লাহর বিধানকে নিন্দা করা হয়।

কাশ্মীরে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে সিকান্দারের শাসনকাল ছিল ব্যতিক্রমী।কিন্তু পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ থেকে মনে হয় হিন্দু বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে মুসলিম সংখ্যাল্পতাই এই ব্যতিক্রমের কারণ।সিকান্দারের রাজত্বেই প্রথম ভারতের অন্যান্য মুসলিম রাজ্য থেকে দলেদলে মুসলিম কাশ্মীরে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে।যেখানে মুসলমান সেখানেই জেহাদ।ইসলামের এই নির্দেশের প্রথম লক্ষ ছিল মূর্তি ভাঙ্গার মহোৎসব।এমন কোন নগর শহর বন্দর গ্রাম বা অরন্য ছিল না যেখানে হিন্দু দেবালয় ধ্বংস করা হয়নি।তখন সুলতান এক আদেশে মুসলমান ব্যতীত অন্য সকল ধর্মাবলম্বীদের কাশ্মীরে বসবাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল কপালে তিলক কাটা।অনেক ব্রাহ্মণ স্বদেশ ও স্বধর্ম ত্যাগ করা অপেক্ষা বিষ পানে মৃত্যুবরণ করেছেন।অনেকে দেশত্যাগ করেন অনেকে বাধ্য হয়ে ধর্মান্তরিত হন।এইভাবে কাশ্মীর ব্রাহ্মণশূন্য হলে সিকান্দার সকল দেবমন্দির ভেঙে ফেলার অনুমতি দেন।

সুখাভট্ট নামে একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম ছিল হিন্দু পীড়ন ও নির্যাতনের প্রধান।সুখাভট্টের নিষ্ঠুর নিপীড়নে অনেকে দুর্গম পথে দেশত্যাগ কেউ বিষ পানে – কেউ জলে ডুবে — গলায় দড়ি দিয়ে- অগ্নিকুন্ডে প্রান বিসর্জন দিয়েছে।ইতিহাসে সুখাভট্টের একটি স্বীকারোক্তি রয়েছে,তিনি বলেছেন ইসলাম ধর্মের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা বশতই তিনি সব কিছু করেছেন,ব্রাহ্মণদের প্রতি বিদ্বেষপরায়ন হয়ে নয়।

ধর্মান্তরিতদের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে।ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।কিভাবে এবং কত তাড়াতাড়ি নিজেকে একজন ধর্মানুরাগী প্রমান করা যায়। ঠিক সুখাভট্টের ন্যায় কাশ্মীরে নব্বইয়ের দশকে এমন একজন ধর্মান্তরিত মুসলিমের উদয় হয়েছিল যিনি হিন্দু হত্যা ও নিপীড়নে সুখাভট্টের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।তিনি হলেন শেখ আবদুল্লা।শেখ আবদুল্লার পরিবার এক সময় হিন্দু পন্ডিত ছিলেন।পরবর্তীতে মুসলিম হন।বর্তমান কালের বেশির ভাগ কাশ্মীরী মুসলমান ধর্মান্তরিত কাশ্মীরী পন্ডিত।

হরি সিংয়ের রাজত্বের পর কাশ্মীরে যে কয়জন হিন্দু পন্ডিত অবশিষ্ট ছিলেন তাদের এই শেখ আবদুল্লার শাসনামলেই হত্যা গুম নির্যাতন ও নিপীড়নের স্বীকার হয়ে কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারী করে হিজবুল মুজাহিদীন বলেছিল সমস্ত হিন্দুদের কাশ্মীর ছাড়তে হবে।এরপর থেকেই আওয়াজ উঠে পন্ডিতমুক্ত কাশ্মীর চাই।কি বীভৎস অত্যাচার যে পন্ডিতদের উপর নেমে এসেছিল যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।চোখ তুলে নেয়া,মেয়েদের ধর্ষন করা,যৌনাঙ্গ ছিন্নভিন্ন করা,সিগারেটের ছেকা দেয়া,শরীর পুড়িয়ে দেয়া,শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো টুকরো করে কেটে উপত্যকা জুড়ে ছড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি নির্যাতনের কথা ইতিহাস সাক্ষী। বিশিষ্ট কাশ্মীরী শিক্ষাবিদ সর্বানন্দ কাউল যে কপালে তিলক পড়তেন সে কপালে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠুকে হত্যা করা হয়েছিল।এমন সব নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ছিল কাশ্মীর লিবারেশনের জঙ্গিরা।এক বছরের মধ্যেই কাশ্মীর পন্ডিত শূন্য হয়ে পড়েছিল।এ সব কিছুই ঘটেছে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মাটিতে। দিল্লির ক্ষমতায় তখন জাতীয় কংগ্রেস।

এত সব নির্যাতনের কথা ভারতের সেকুলার নেতা,বুদ্ধিজীবীরা ভুলে গেলেও ভারতের আম জনতা ভুলে যায়নি।এত রক্ত দিয়ে যে জাতি উঠে দাড়িয়েছে তাদের পরাভূত করা এত সহজ হবে না।

নারায়ণ দেবনাথ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.