কর্ণাটকের মানুষ বিশ্বাসঘাতকদের
শাস্তি দিয়েছে। গোপনে ছল করে পিছনের দরজা দিয়ে সরকার গঠনকারীদের শিক্ষা দিয়েছেন
বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী। তিনি আরও বলেন, কংগ্রেস কখনই জোট
রাজনীতি মেনে চলে না। তারা দুর্নীতির জন্য যে কোনও পর্যায়ে যেতে পারে। ঝাড়খণ্ডের
জনগণের উচিত তাদের ভবিষ্যতের জন্য কর্ণাটকের ফলাফলগুলো মনে রাখা। যারা
বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করছেন তাদের জন্য একটি বার্তা, তারাও এখানে কংগ্রেস এবং তাদের মিত্রদের পরাজিত করবে।
সোমবার হাজারিবাগের বরহীর
রসোইধমনা ময়দানে বিজেপি প্রার্থী মনোজ যাদবের সমর্থনে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য
রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে ভারতের জয়ধ্বনি উঠেছে। আমেরিকা, কানাডা, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া সব জায়গাতেই ভারতকে জয়জয়াকার। এর কারণ কী?
জনতার কাছ থেকে মোদী-মোদীর রব ওঠা সম্পর্কে
বলেন, এটি ভুল। এটা আপনার কারণে সম্ভব হয়েছে। আপনারা
দেশকে স্থায়ী এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারকে ক্ষমতা দিয়েছেন। এ কারণে বিশ্বে
ভারতের সম্মান বেড়েছে। লোকসভা নির্বাচনে
সমস্ত জল্পনার অবসান করে ঝাড়খণ্ড থেকে ১৪ টি আসনের মধ্যে ১২ টি আসন দিয়েছে।
এক দেশ এক আইন
এদিন মোদী তাঁর বক্তব্য
ভারত মাতার জয় বলে শুরু করেন। মা ছিন্নমস্তাকে আমার প্রণাম। তিনি বলেন, এই মাটি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে জরুরি
অবস্থা পর্যন্ত দেশনায়কদের দেখেছিল। ঝাড়খণ্ড দেশকে বাবু রাম নারায়ণ সিংয়ের মতো
যোদ্ধা দিয়েছে। তিনি এক দেশে এক আইন প্রতিষ্ঠিত করতে নিজেকে উৎসর্গ করে কাজ
করেছিলেন।
কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে
রামজন্মভূমি মামলা ঝুলিয়ে রেখেছিল
প্রধানমন্ত্রী বলেন,
রাঁচির উল্লাসের জন্য আপনাদের প্রয়োজন
ঝাড়খণ্ডে একটি স্থায়ী সরকার গঠন করা। আপনদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে ঝাড়খণ্ডকে
ধ্বংস হতে দেবেন না। এই কংগ্রেস, যারা রামজন্মভূমি
বিরোধকে দীর্ঘকাল ধরে তাদের ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য ঝুলিয়ে রেখেছিল। তিনি
আরও বলেন, আপনার ভালবাসার জন্য শ্রদ্ধা জানাই। স্বাধীনতার
সময় থেকে পৃথক ঝাড়খন্ডের দাবি ছিল, কিন্তু কংগ্রেস
নিজের রাজনৈতিক স্বার্থপরতার কারণে কয়েক দশক ধরে এটি ঝুলিয়ে রেখেছিল। দিল্লিতে
অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার গঠিত হওয়ার পর ঝাড়খণ্ডের জন্ম হয়েছিল।
পূর্ণাঙ্গ ভাবে ভারতীয়
সংবিধান কার্যকর করা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর
থেকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর করা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে।
হাজারিবাগের সুপুত্র বাবু রামনারায়ণ সিংকে কপটতার সাহায্যে একাধিকবার হেনস্থা
করেছে কংগ্রেস। ৭০ বছর আগে তিনি বলেছিলেন যে কংগ্রেস পাকের জন্ম দেবে। বর্তমানে
যার সাক্ষী আমরা। জনসভায় বিপুল জনসমাগমে আপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন,
এই জন সমাগম ঝাড়খন্ডের মানসিকতা ব্যক্ত করছে।
মানুষের মনে উন্নয়নের প্রতি যে বিশ্বাস রয়েছে এর থেকে তা প্রমাণিত। জনগণের
বিশ্বাসের যোগ্য মর্যাদা দিয়েছে বিজেপি।
কোডরমা, হাজারিবাগ, বরকাকানা থেকে
রাঁচি পর্যন্ত রেল লাইন সংযোগের কাজ চলছে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী জানিয়েছেন, কোডরমা, হাজারিবাগ, বরকাকানা থেকে
রাঁচি পর্যন্ত রেল লাইন সংযোগের কাজ চলছে। ফ্রেন্ট করিডর গড়ে তোলার কাজ চলছে। এমন
উন্নয়ন কংগ্রেস এবং তাদের জোটসঙ্গী কোনওদিনও করতে পারবে না। এখনও পর্যন্ত ১০ লক্ষ
পরিবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে উপকৃত হয়েছে। যারা এখনও মাথার তোলায় ছাদ
পায়নি, তাদের সেই স্বপ্ন ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর
পূর্তি উপলক্ষ্যে পূরণ হবে। দিল্লি এবং রাঁচিতে ডবল ইঞ্জিন সরকার থাকার ফলে উন্নয়ন
এখন মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শৌচালয় থেকে
প্রসূতি মহিলাদের খেয়াল রাখছি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী জানিয়েছেন, বিজেপি ক্ষমতায় আগে
ঝাড়খন্ডে যে সব সরকার ছিল তারা দিল্লি থেকে আসা টাকা গরিব মানুষ পর্যন্ত পৌঁছতে
দিত না। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতা আসার পর রাজ্যজুড়ে উন্নয়নের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল।
সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চিন্তার সমাধানে গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি সরকার। বিদ্যুৎ,
স্বাস্থ্য, শৌচালয় থেক প্রসূতিদেরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
পাঁচ বছরে ৬০ হাজার
আদিবাসীকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন,
স্বাধীনতার এতগুলি বছর পরও ঝাড়খন্ডে মাত্র ১৯
হাজার আদিবাসীরা পাট্টা পেয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছরে ৬০ হাজার
পরিবারকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। ইভিএমে পদ্ম ফুটিয়ে বিরোধীদের যোগ্য জবাব দেওয়ার
আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস লুঠের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সময় হয়েছে কংগ্রেস
ও তাদের বিরোধী দলগুলিকে যোগ্য জবাব দেওয়া।
সাধারণ শ্রেণীর দরিদ্রদের
জন্য দশ শতাংশ সংরক্ষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, আমরা সাধারণ
শ্রেণীর দরিদ্রদের জন্যও দশ শতাংশ
সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। দিল্লি বা রাঁচি যেখানেই থাকুক বিজেপি সরকার আপনাদের জন্য
সবমসময় চিন্তা করে। যাতে আপনাদের
সমস্যা একটু কম হয়, তার জন্য আমরা দিনরাত
কঠোর পরিশ্রম করি। তবে কংগ্রেস, জেএমএম, আরজেডি–র ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকতা ও দুর্নীতিরর ইতিহাসে পরিপূর্ণ।
ঝাড়খন্ডের ডাকে বিজেপিকে
স্লোগান দিয়েছে
নরেন্দ্র মোদী “ঝাড়খণ্ড পুকারা
ভাজপা দোবারা” স্লোগান দিয়ে তার
বক্তব্য শেষ করলেন। তিনি ভারত মাতার
জয়ধ্বনি করে সভায় উপস্থিত লোকদের বলেন,
এখানে ঝুমরি তিলাইয়াও আছে আবার
বরকট্টা রয়েছে। বনও আছে, ঝর্ণাও আছে। আমরা পর্যটন মানচিত্রে ঝাড়খণ্ড–কে রাখার জন্য
সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শুধুমাত্র একবার আপনারা সবাই হাত উঠিয়ে
প্রতিশ্রুতি দিন যে, পদ্ম ফুলে বোতাম টিপে
আবারও ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকার গঠন করবেন। ভোটগ্রহণের দিন, বিপুলসংখ্যক লোককে তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিতে বলুন।
লুটপাট ও সন্ত্রাসের
সমাপ্তি : রঘুবর দাস
মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস
বলেন, বিজেপি সরকারের আমলে ঝাড়খণ্ডে প্রচুর
উন্নয়নের কাজ হয়েছে। ৩০ লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। লুটপাট ও
সন্ত্রাস খতম করা হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে
১৪.৫ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে । রাজ্য সরকার দুর্নীতি পুরোপুরি দূর করে দিয়েছে । বিজেপি
রাজ্যে জল, বন ও জমি নিয়ে চিন্তিত।
আমরা দারিদ্র্যের অবসান করার সংকল্প নিয়েছি। প্রতিটি মানুষ এতে অবদান রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ঝাড়খণ্ডের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের সমস্ত
কোষাগার খুলে দিয়েছে । এই পাঁচ বছরে আমরা যেভাবে জনসাধারণের সেবা করেছি সেভাবে
আমাদের আরও সেবা করার সুযোগ দিন | এখানে মাত্র এক
টাকায় মহিলাদের নামে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার সম্পদের রেজিস্ট্রি করা হয় । মোদী সরকার
বিগত পাঁচ বছরে ঝাড়খণ্ডের উন্নয়নের জন্য তিন লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে। দরিদ্রদের
জন্য বহু প্রকল্প চালু করা হয়েছে। রাজ্যের গরিব মহিলারা সখী মণ্ডল থেকে সাহায্য
পাচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে আমরা মা ও বোনদের জীবনযাত্রার
মানোন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় দরিদ্ররা পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে
চিকিত্সা পাচ্ছেন। যাদের বাড়ি নেই তাদের ঘর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী । বিজেপি
ঝাড়খণ্ডে একটি কলঙ্কহীন সরকার দিয়েছে। উন্নয়নের গড়ি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি । পাঁচ
বছরের ডাবল ইঞ্জিন সরকার রাজ্যজুড়ে সড়ক সম্প্রতিসারণের কাজ করেছে ।
এদিনের সভায় বিজেপির
প্রার্থী মনোজ যাদব বলেন, ঝাড়খণ্ডের
বিজেপি সরকার প্রতিটি গ্রামকে বদলে দিয়েছে। বিজেপি সরকার সাবকা সাথ সাবকা বিকাশের
স্লোগানকে বাস্তবায়িত করেছে । দিল্লি থেকে রাঁচি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এবং
মুখ্যমন্ত্রী মিলে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন করেছেন। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন
সাংসদ অন্নপূর্ণা দেবী, জয়ন্ত সিনহা, জেপি প্যাটেল সহ বিজেপির একাধিক নেতা।