মমতা অনেক ভেবে চিন্তে একটা দল এনাউন্স করেছেন । এ যেন অলিম্পিক্স-এ ভারতীয় দল । নিজের গাছের তৈরি হওয়া ঢ্যাঁড়স তিনি কি ভাবে তুলবেন, কি ভাবে রান্না করবেন তাঁর ব্যাপার । এতে আমার কোন উৎসাহ নেই ।
আমার আগ্রহ একটা বিষয় নিয়ে । এক শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যমের এই বিষয়ে আদিখ্যেতা নিয়ে । সন্ধ্যে বেলা বাংলার ৬ টি চ্যানেল আজ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলাম । anchor রা কি করবেন, কি বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না । প্রোডিউসাররা একবারও এঁদের বলছিলেন না – সংযত হও । তোমার কাজ হল তুমি সূত্রধর । তুমি প্রশ্নকর্তা । তুমি কোন দলের ব্যাটসম্যান নও । তোমাকে কালীঘাটের কেউ ব্যাট করতে নামায়নি । তুমি সঞ্চালনা করতে গেছ । তুমি অপ্রিয় প্রশ্ন কর । বার বার কর । দর্শক সেটা দেখুক, শুনুক । যে যার মত করে বুঝে নিক কোনটা ঠিক কোনটা ভুল ।
উল্টে কি দেখলাম ?
সায়নী ঘোষকে মমতা যুব সভাপতি করাতে একজন সঞ্চালিকা খুব গদগদ । আহা মরি, আহা মরি ভাব । তরুণ দল, তরুণ দল বলে ত্রাহি ত্রাহি চেঁচাচ্ছেন ।
তিনি যেখানে প্রশ্নটা ছুঁড়তে পারতেন – ইনি যে সভাপতি হলেন ইনি তো একদিন ধর্মতলায় মমতার সরকারকে যা পেরেছিলেন তাই বলেছিলেন । ইনি তো সেই মহিলা যিনি শিবলিঙ্গ নিয়ে বাংলার সুধী সমাজকে কি যেন শুনিয়েছিলেন । আজ তেমন একজনকে যুব সভাপতি করাতে ভুল বার্তা গেল না কি ? কি বলবেন আপনি ?
প্রশ্নটা তো করা যেতে পারতো তৃণমূল বক্তাকে । করেন নি এঁরা কেউ ।
কুণাল ঘোষ রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন । বেশ করেছেন মমতা । যেমন গাছ তেমনি ঢেঁড়স । বলার কিছু নেই ।
সঞ্চালিকা তো প্রশ্ন করতে পারতেন – আচ্ছা যে মানুষটা একদিন বলেছিলেন সারদা চিটফান্ডের ১১ টি মিডিয়ার সমস্ত বেনিফিট নিয়েছেন মমতা, যে কুণাল ঘোষ একদিন মমতাকে এরেস্ট করার জন্য চিৎকার জুড়েছিলেন সেই জেল ফেরত মানুষটা কি ভাবে কোন যুক্তিতে ঐ পদ পেলেন ? কুণাল ক্ষমা চেয়েছেন না নেত্রী ক্ষমা ঘেন্না করে দিয়েছেন ? কি বলবেন ?
প্রশ্নটা করা যেত তৃণমূল প্রতিনিধিকে । করলেন না ।
রাজ্য তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি করা হল ঋতব্রত ব্যানার্জীকে । অনেক গুণের গুণধর । হয়েছেন বেশ হয়েছেন ।
সঞ্চালিকা র পক্ষে প্রশ্নটা রাখাই যেতে পারত – আচ্ছা ঋতব্রত কবে কোন কারখানার গেট পর্যন্ত গেছেন ? ঋতব্রতর বিরুদ্ধে নন বেলেবেল মামলাগুলো কি প্রত্যাহার করে নেত্রী ওকে এই পদে বসিয়েছেন ?
প্রশ্ন গুলো অনায়াসে করা যেত । একটু সোজা হয়ে বসে । চোখে চোখটা রেখে । করলেন না কেউ একজনও । কেন ? কি কারণে ? কেউ চটে যাবেন বলে ? এমন অনেক প্রশ্ন ছোঁড়া যেত । গোলা গুলির মত । অবিশ্রান্ত । জমে যেত ডিবেট ।
শাসককে প্রশ্ন করলেই তবে তো গণতন্ত্রের ভীত পাকা হয় । বোঝেন না কি এঁরা কেউ ?
আলবাত বোঝেন । বুঝেও এঁরা কেমন যেন শিরদাঁড়াহীন সরীসৃপ হয়ে থাকেন । প্রোডিউসার ওভার হেড ফোনে অনবরত এই সঞ্চালিকাদের নির্দেশ দিতে থাকেন – না না কঠিন প্রশ্ন করোনা । আর নয় । একদম নয় । এবার থাম, প্লিজ ।
সঞ্চালিকা বোঝেন, প্রোডিউসারও বোঝেন – দিদি বাড়ি ফিরে সবগুলোর রি টেলিকাস্ট দেখেন । তাছাড়া নবান্নে সরকারি পয়সায় বেশ কিছু কর্মী বসে থাকেন কোন চ্যানেলে কে কবে anti দিদি কথা বলেন দেখার জন্য । নোট নেন । আর তাঁর নজরে গেলেই পরের সকালে কিম্বা সেই রাতেই ফোন কিম্বা টেক্সট মেসেজ ঢোকে সংবাদ মাধ্যমের চালকের ফোনে ।
মাঝে মাঝে মনে হয় এঁরা কেউ করন থাপারকে কি দেখেছেন ? শুনেছেন ? ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের দর্শকদের যিনি প্রথম শিখিয়েছিলেন প্রশ্ন কর্তা হতে । অনুগৃহীত জীব হতে একদমই নয় । কারণ করণ থাপর ইন্ডিয়া টুডের এক সাক্ষাৎকারে বহুদিন আগে বলেছিলেন – চারটে পা নয়, দুটো পা নিয়ে বসতে হয় সঞ্চালনার চেয়ারে । মানসিক ভাবে ” বিশেষ ভাবে সক্ষম ” হলে তো বসতেই নেই ওই চেয়ারে ।
কে বোঝাবে আজ এই আপ্ত বাক্য এই সঞ্চালিকাদের ? এই প্রোডিউসারদের ? এই চ্যানেলগুলোর পরিচালকদের ?
কেউ আছেন ? সত্যি জানি না ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)