২০২১-এই মুখোশ খুলে যাবে মমতার মন্তব্য কৈলাসের

তিনটি উপনির্বাচনেই হার হয়েছে বিজেপির। কিন্তু, হারের পরেই তৃণমূলনেত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। প্রতিটি কেন্দ্রেই বুথ দখল করে ভোটে জিতেছে ফল প্রকাশের পর এমনই বিস্ফোরক উক্তি করলেন এই বিজেপি নেতা।

২০২১ সালে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই ফল কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই মত কৈলাসের। এই বিধানসভা নির্বাচনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোশ খুলে যাবে বলে মন্তব্য করেন এই হেভিওয়েট বিজেপি নেতা।

বৃহস্পতিবার সকালে ভোট গণনা শুরু হতে দেখা যায় তিনটি আসনে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু, বেলা যত গড়িয়েছে পদ্মকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে এসেছে তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবধান ক্রমেই বেড়েছে। গণনা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গেই হাসি চওড়া হয়েছে তৃণমূল নেতাদের।
এই উপনির্বাচনে বিজেপির পরীক্ষা ছিল এনআরসি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে লোকসভার সাফল্য ধরে রাখা। আর তৃণমূলের লড়াই ছিল লোকসভার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর । তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনের পরীক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল শুধু পাশই করে নি, ফুল মার্কস নিয়ে ক্ষমতায় ফিরল তাঁরা। তিন কেন্দ্রেই কার্যত বয়ে গেল তৃণমূল ঝড়। অন্য দিকে, উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের ফলে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গেল পদ্ম শিবির।

মাত্র ছ’মাস আগে কিন্তু অন্যরকম ছবি ছিল। আর এই ছ’মাসের ব্যবধানেই ছবিটাই পাল্টে গেল তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। তিনটি কেন্দ্রেই অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু অন্য ছবি বিজেপির। তাঁদের শুধু খারাপ ফলই হয়নি, গেরুয়া শিবিরের হাতছাড়া হল দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের জেতা আসনও। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে কালিয়াগঞ্জ ছিল কংগ্রেসের দখলে। এ বছর লোকসভায় ওই কেন্দ্রেই বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বিজেপি। খড়গপুর সদর কেন্দ্রে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। চলতি বছরের লোকসভাতেও এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু দুই কেন্দ্রেই সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে জয় পেল তৃণমূল। প্রথম বার কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুরের দখল পেল তারা। একই ছবি ধরা পড়েছে করিমপুরেও। ওই কেন্দ্রে জয়ের ব্যবধানও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

এই উপনির্বাচনে খড়গপুর সদর কেন্দ্র ছিল বিজেপির ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে যাওয়া আসন জিততে মরিয়া ছিল বিজেপি। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন দিলীপ। জয়ের ব্যবধান ছিল ৬ হাজার ৩০৯। ওই বছরের মে-জুনে মাসে লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হন তিনি। জিতে সাংসদ হয়েছেন দিলীপবাবু। লোকসভার নিরিখে খড়গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে দিলীপবাবু এগিয়ে ছিলেন ৪৫ হাজার ১৩২ ভোটে। কিন্তু সেই কেন্দ্রেই কার্যত ধরাশায়ী হল বিজেপি। রাজ্য সভাপতির জেতা আসনও ধরে রাখতে পারল না পদ্ম শিবির। এ বার ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জিতেছেন ২০ হাজার ৮১১ ভোটে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। নিজের গড় হাতছাড়া হলেও এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

অন্য দিকে চলতি বছরে লোকসভা ভোটে গোটা উত্তরবঙ্গে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল তৃণমূলকে। উত্তরবঙ্গের আটটির মধ্যে সাতটই ছিল বিজেপির দখলে। একটি কংগ্রেসের। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে জিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। এই রায়গঞ্জের অন্তর্গত কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার নিরিখে দেবশ্রী চৌধুরী এগিয়ে ছিলেন ৫৬ হাজার ৭৬২ ভোটে। তার আগে ২০১৬ সালে এই বিধানসভা কেন্দ্রটি অবশ্য কংগ্রেসের দখলে ছিল । এ বার সেই দুর্গেও ফাটল ধরিয়েছে তৃণমূল। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তপন দেব সিংহ জয়ী হয়েছেন ২ হাজার ৪১৮ ভোটে । দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকার।

বিজেপির জমি হারানোর ছবি ধরা পড়েছে নদিয়ার করিমপুরেও। উপনির্বাচনের দিন ওই কেন্দ্রের ৩২ নম্বর বুথের সামনেই দুষ্কৃতীদের হাতে নিগৃহীত হন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। লাথি মেরে তাঁকে ঝোপে ফেলে দেওয়া হয়। এই নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। ওই কেন্দ্র থেকে জয় আসবে না জেনেও ভোট ব্যবধান কমবে বলে আশা করেছিল বিজেপি। কিন্তু ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায় বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছেন ২৪ হাজার ৭৩ ভোটে। ৩২ নম্বরের ওই লাথি কাণ্ডের বুথ থেকে মাত্র দু’টি ভোট পেয়েছেন জয়প্রকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.