কদম মিলাকর চলনা হোগা

শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মহাপ্রয়াণের আজ 16 ই অগাস্ট দুই বছর আতিক্রান্ত হলো। তাঁর কবিতা দিয়েই তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবো।
बाधाएं आती हैं आएं
घिरें प्रलय की घोर घटाएं,
पावों के नीचे अंगारे, सिर पर बरसें यदि ज्वालाएं, निज हाथों में हंसते-हंसते, आग लगाकर जलना होगा। कदम मिलाकर चलना होगा

পত্রকার থেকে প্রধানমন্ত্রী –এক অবিস্মরণীয় যাত্রাপথ।

আজ শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীজির সেই আলোকময় যাত্রাপথকে আমরা স্মরণ করবো আর বিদগ্ধ বক্তা, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব … অটলজিকে আমাদের প্রণাম জানাবো।
১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের এক সাধারণ স্কুল শিক্ষকের পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। জনজীবনে শ্রী বাজপেয়ীর উত্থান, একই সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং ভারতীয় গণতন্ত্রের মহিমাতেই তা সম্ভব হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পটভূমিতে দশকের পর দশক ধরে তিনি বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন এক নেতা হিসাবে পরিগণিত হয়েছেন, তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গী এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি অবিচল আস্থার জন্য।

শ্রী বাজপেয়ী এক সাংবাদিক হিসাবে তাঁর জীবন শুরু করেন। ১৯৫১ সালে আজকের ভারতীয় জনতা পার্টির পূর্ববর্তী সংগঠন ভারতীয় জনসঙ্ঘে যোগ দিয়ে তাঁর সাংবাদিক জীবন শেষ হয় ও সক্রিয় রাজনীতির আঙিনায় নিজেকে মেলে ধরেন। এই ভারতীয় জনতা পার্টিই জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান শরিক হয়ে ওঠে। পণ্ডিত জনের প্রশংসাধন্য এক কবি শ্রী বাজপেয়ী তাঁর ব্যস্ত জীবন থেকে সময় বের করেও সঙ্গীত উপভোগ করতেন।

জাতীয় রাজনীতিতে শ্রী বাজপেয়ীর প্রথম অভিজ্ঞতা হয় তাঁর ছাত্র জীবনে। ১৯৪২ সালে যে আন্দোলন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তিকে ত্বরান্বিত করেছিল সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি প্রথম রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও আইনের ছাত্র হিসাবে কলেজ জীবনে তিনি বিদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। তাঁর এই আকর্ষণ পরবর্তী সময়ে পরিপূর্ণতা পায় এবং পরে বহু পাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক একাধিক মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে দক্ষতার সঙ্গে তাঁকে তিনি ব্যবহার করেন।

জননেতা এবং স্থিতপ্রজ্ঞ রাজনৈতিক শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ১৯৯৯ সালের ১৩ অক্টোবর পর পর দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট নামে এক নতুন কোয়ালিশন সরকারের প্রধান হিসাবে তিনি এই পদে নির্বাচিত হন। এর আগে, ১৯৯৬ সালেও (মাত্র তেরো দিন) স্বল্প সময়ের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর সময়কাল পর্যন্ত পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর পর তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দু’বারের জন্য জনাদেশ পেয়ে এই পদে আসীন হন।

খ্যাতনামা সংসদবেত্তা হিসাবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন চার দশকের বেশি সময়ের শ্রী বাজপেয়ী লোকসভায় নয় বার নির্বাচিত হন এবং রাজ্যসভায় দু’বার নির্বাচিত হন। এটি একটি রেকর্ড।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বিদেশ মন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, সংসদের বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসাবে তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশ নীতির রূপরেখা নির্ধারণে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন।

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাঁর নিঃস্বার্থ দেশ ও সমাজসেবা, তাঁর প্রথম ও একমাত্র ভালোবাসা ‘ভারত’ – এর জন্য নিষ্ঠাবান কাজের স্বীকৃতিতে তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অ-সামরিক সম্মান ‘পদ্মবিভূষণ’ প্রদান করা হয়েছে।

১৯৯৪ সালে তাঁকে ভারতের ‘শ্রেষ্ঠ সংসদবেত্তা’র পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কারের শংসাপত্রে বলা হয়েছে – তাঁর নামের প্রতি সুবিচারে, অটলজি একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রনেতা, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, নিঃস্বার্থ সমাজসেবী, শক্তিশালী বক্তা, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব … অটলজি জনগণের আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক … তাঁর কাজের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রতি পরিপূর্ণ নিষ্ঠার অনুরণন ঘটেছে।
তাঁর মহাপ্রয়াণের এক বছর অতিক্রান্ত হলো আর সেই মহাশূন্যতায় এক পরম আত্মীয় বিয়োগের বেদনবাঁশি যেন আবার বেজে উঠলো।

সৌমিত্র সেন। কৃষিবিদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.