নির্মমতার রাজ্যে মালদহে ধর্ষিতা দুই বোন।
নির্মমতার রাজ্যে এম্ব্যুলেন্সের মধ্যে ধর্ষিতা যুবতী।
নির্মমতার রাজ্যে গণ ধর্ষনের বিচার না পেয়ে সুপ্রীম কোর্টে মামলা দায়ের তিন মহিলার।
নির্মমতার রাজ্যে উলঙ্গ করে গ্রামে ঘোরানো হোল মহিলাকে।
নির্মমতার রাজ্যে নর্দমায় উদ্ধার কিশোরীর দেহ। সন্দেহ ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।
এই হেডলাইনগুলো কোন কাগজে দেখেছেন? শুনেছেন কোন চ্যানেলে এই নিয়ে টক শো?
শোনেনি। শুনবেনওনা। কারন মিডিয়া এই রাজ্যে “বিজ্ঞাপনের লোভে শুয়ে পরেছে”। তাই তাদের কাছে উত্তর প্রদেশ থুড়ি যোগীরাজ্য বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক ধর্ষন হয়ে গেলেও হুশ ফেরেনা।
আর বুদ্ধিজীবীরা, তারা তো এখন “নো ভোট টু” প্রতিযোগীতার পুরষ্কার গোছাতে ব্যস্ত। তাই এসব ঘটনার কথা তারা হয়ত জানেনইনা।
কয়েকদিন আগে ফেসবুকেই দেখলাম বাংলাদেশের এক অভিনেত্রী সেদেশের প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন তিনি বিপন্ন। তাকে ধর্ষণ এবং খুনের চেষ্টা করা হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষমেশ বিচারের আশায় নিজের প্রধানমন্ত্রীকে মা বলে চিঠি লিখে তাকে বিচার পেতে হয়েছে। ভাবুন একবার, একজন নামী অভিনেত্রীর যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সেদেশের বেঁচে থাকা বাকী সাধারন সংখ্যালঘু মানুষদের কি অবস্থা। তাদের খোলা চিঠি তো আর এভাবে ভাইরাল হয়না। আর এবার এর সাথে তুলনা করুন আপনার নিজের রাজ্যের অবস্থা।
এখানেও পুলিশ, প্রশাসন আর আমাদের কথা শোনেনা। আমাদের মেয়েরা ধর্ষিতা হলে তাদের কথা না শুনে বরং তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয় যাতে তারা মুখ না খোলে। বিচারের আশায় শেষমেশ তাদের সুপ্রীম কোর্টের দরজা খটখটাতে হয়। নচেৎ তাদের কথা কেউ শুনবেইনা। সংবাদ মাধ্যম তো এখন সাংসদ অভিনেত্রী বিয়ে করেছেন নাকি লিভ ইন। অভিনেত্রীর দিদির কেন ডিভোর্স কেন হোল এই নিয়েই ব্যস্ত। এবার তাহলে বলুন ওপারের সাথে এপারের কি তফাত রইল?
কোন তফাতই নেই তাই না। একই ভাষা, “আমাদের” প্রতি একই মনোভাব। দুই জায়গাতেই আমরা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক। আমাদের জমির অধিকার নেই। আমাদের ভাষার অধিকার নেই। এমনকি চাকরিতেও এখন আগে “ওদের” অধিকার, পরে “আমাদের” অধিকার।
অথচ দেশ যখন ভাগ হোল তখন আমরা একটু ভালো থাকার আশায়, নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্য বাঁচানোর আশাতেই এই পশ্চিমবাংলাতে এসেছিলাম। তাই না? পশ্চিমবঙ্গের ৭৪ বছরে এসে কি আমরা আবার ইতিহাসের দোরগোড়াতেই দাঁড়িয়ে আছি? আপনি চান বা না চান, এই প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু আপনাকে ভাবতেই হবে।
হতে পারে আপনি বুদ্ধিজীবী, হতে পারে আপনি সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু আপনার জমি, আপনার মাটি যদি আপনার না থাকে তাহলে কাল আপনার কোন মূল্যই থাকবেনা। আজ যা কিছু আপনার মূল্য সে ঐ আজ থেকে ৭৪ বছর আগে ১৯৪৭ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নামে একটি মানুষের লড়াইয়ের ফলে এই দুই তৃতীয়াংশ জমি থেকে সরে আসতে বাধ্য হওয়ার পরে এই এক টুকরো জমিতে মাথা গোঁজার ঠাই পেয়েছিলেন বলেই। আপনার মাটি নেই মানে আপনার শিকরও নেই। আর তাহলে আপনার ভাষা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য কোন কিছুরই দাম নেই। সবই হারিয়ে যাবে। যেমন হারিয়ে গেছে আপনার পূর্ব পুরুষের শিকড়। আপনি হয়েছেন ছিন্নমূল।
কাল পশ্চিমবঙ্গ দিবস। ২০শে জুন ১৯৪৭ সালে এই দিনেই পশ্চিমবঙ্গ অর্থাৎ বাঙালি হিন্দুর হোমল্যান্ড তৈরির দাবীতে শিলমোহর পরেছিল। তাই কাল আরেকবার ভাবুন, আপনার পূর্বপুরুষ কি এই জন্যই ওপারে নিজের বাড়ির তুলসীতলা, দুর্গামন্ডপ, ধানের ক্ষেত, পুকুর পাড়ের গাছগাছালি, নদীর চড় ছেড়ে এপারে এসেছিল যে আজ আবার “আমাদের” মেয়েদেরও ভাগ্য পরীমনীদের মতো হবে? একবার ভাবুন। ভাবা বড্ড জরুরী হয়ে পরছে কিন্তু দিনে দিনে। নেতারা তো আসবেন যাবেন। কিন্তু এই মাটিতে থাকতে হলে আপনাকেই কিন্তু এই মাটিতে নিজের অধিকার বজায় রাখতে হবে। সেটা কিন্তু আপনার হয়ে আর কেউই করে দেবেনা। তাই কাল একবার এক মিনিটের জন্য হলেও ভাবুন, কেন “আমরা” আমাদের নিজভূমে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকব?
দীপ্তাস্য যশ