এক টুকরো ঘটনা…..
এক চোর চুরি করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় এক যুবকের কাছে। রাস্তাতে চোরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে থাকে, “চোর ! চোর ! চোর !” বলে। চোর তাকে বারবার বলতে থাকে ছেড়ে দেবার জন্য। চোর হুংকার দিয়ে বলে আমায় না ছাড়লে তারও পরিণতি ভালো হবে না। বারবার বলবার পরও ঐ যুবক চোরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে সকলকে ডাকতে থাকে। বেগতিক দেখে চোরও তখন সব জিনিস ফেলে ঐ যুবককে জড়িয়ে ধরে চোর, চোর বলে চিৎকার শুরু করে। পরস্পরের চোর ! চোর চিৎকারে লোকজন বেড়িয়ে এসে দেখে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে চোর চোর চিৎকার করছে। সকলেই বুঝে উঠতে পারে না আসল চোর কে !! তাদের জিজ্ঞেস করলে পরস্পর একই কথা বলে চলে, “ও চুরি করে পালাচ্ছিল আমি ধরেছি।” বিব্রত জনসাধারণ তাদের জিজ্ঞেস করতে থাকে সত্যি করে বলতে কে চোর ! তারা একই কথা বলে চলে। অগত্যা সকলে মিলে পুলিশকে ডেকে তাদের তুলে দেয় পুলিশের হাতে। পুলিশ তাদের কোর্টে চালান করে দেয়।
পরদিন কোর্টে তাদের বিচার শুরু হলে বিচারক জানতে চান প্রকৃত ঘটনাটা। পরস্পর একই কথা বিচারককে বলতে থাকে। বিচারক আইনের নানান ধারার ভয় দেখালেও কেউ আর অন্য কথা বলছিল না। এবার বিচারক নিজেও বিব্রত হয়ে বাধ্য হন তাদের দু’জনকেই সাজা দিতে। বিচারক সাজা দিয়ে বলেন, “এখান থেকে দু’মাইল দুরে একটি মড়া আছে। তোমরা দু’জনেই খালি পায়ে প্রখর রোদে গিয়ে ওই মড়াকে বহন করে কোর্টে আনবে। এটাই তোমাদের সাজা ধার্য হ’লো।” দু’জনকে নিয়ে চললো প্রহরী। গন্তব্যে পৌঁছে সেই মড়াটাকে দেখিয়ে বলে এটা কাঁধে নিয়ে খালি পায়ে রওনা দাও কোর্টের উদ্দেশ্যে। তারা অগত্যা তাই করতে বাধ্য হয়। প্রখর তাপে ও খালি পায়ে পাথরকুচির পথে ওই মড়াকে বহন করতে করতে একজন দুঃখ করে বলে, “ভগবান ! এ তোমার কেমন বিচার ! আমি ভালো কাজ করেও সাজা পাচ্ছি ! চোর তখন বলে ওঠে, “কেন ! তোকে না হাজারবার বললাম আমায় ছেড়ে দে ছেড়ে দে। শুনলি না ! মহৎ হতে চেয়ে আমায় আটকালি। এখন ভোগ ! আমি তো চুরির দায়ে সাজা পেতামই ! তুইও পেলি কথা না শোনার ফলে ! ভালোই হয়েছে !” বলে চোর হাসতে লাগলো।
শেষে এসে ঐ মড়াকে কোর্ট প্রাঙ্গণে নামিয়ে দু’জন বললে; “হুজুর ! এবার আমরা মুক্ত তো ! যেতে পারি হুজুর ?” বিচারক তখন বলেন; “না, তোমাদের বিচার এখনই শুরু হবে !” এই বলেই তিনি ঐ মড়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন; “গয়ারাম ! কে চোর আর কে চোরকে আটকেছিল ?” মড়া তখন লাফ দিয়ে উঠে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে; “হুজুর ! এটা চোর । আর এই ভদ্রলোক চোরকে আটকেছেন !” বিচারক তখন চোরকে আটকে রেখে ঐ ভদ্রলোক কে পুরস্কার দিয়ে মুক্তি দেন।
বিচারটি গল্প নয়, একদমই সত্য ঘটনা ! বিচারক কে ছিলেন জানলে অবাক হবেন সকলে ! বিচারক ছিলেন প্রবাদপ্রতিম ব্যাক্তিত্ব ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি কর্মজীবনে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।
আজ তাঁরই কর্মজীবনের এক টুকরো সত্য ঘটনা বলে তাঁকে আমার প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানালাম।
( সংগৃহীত )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.