ডঙ্কা শব্দের অর্থ হল জয় ঢাক ।যুগ যুগ ধরে আমরা এই ডঙ্কা র ব্যাবহার দেখে আসছি প্রধানত যুদ্ধক্ষেত্রে।সাধারণত যুদ্ধের শুরুতে সৈন্যদের মধ্যে অদম্য সাহস সঞ্চার করতে এই ডঙ্কা ধ্বনি ব্যবহার করা হত।মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধেও দেখা যায় যুদ্ধা রম্ভে মহারথীদের শঙ্খ ধ্বনি র সাথে সাথে বেজে উঠেছিল ডঙ্কা ধ্বনি ও।এছাড়াও ডঙ্কা ধ্বনি দ্বারা বিভিন্ন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে আমরা বলে থাকি,’ যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো।’ ডঙ্কা র কম্পন একজন যোদ্ধার মনে অদম্য সাহস উৎপন্ন করে।তীব্র রক্তস্রোতে তার দেহে নতুন উর্যার সঞ্চার ঘটে। মায়া,প্রীতি,স্নেহ প্রভৃতি অনুভূতি ভুলে সে কেবল তার লক্ষ্যে স্থির থাকে।অপর কোনো অনুভূতির ধ্বনি সেই ডঙ্কা ধ্বনি কে ছাপিয়ে যোদ্ধার কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে পারে না।ঠিক তেমন ভাবেই যুদ্ধ জয়ের পর জয়ে র উল্লাস প্রকাশেও ডঙ্কা ধ্বনি অন্যতম প্রতীকী হিসবে গণ্য হয়।
বর্তমান সময়ে যুদ্ধক্ষেত্র ব্যতীত অন্য একটি ক্ষেত্রে জয় ডঙ্কা র ব্যাবহার লক্ষ্য করা যায়,সেটি হল পূর্ণ ব্রহ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামী মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠানে।কবি রসরাজ শ্রী তারক সরকার তাঁর রচিত শ্রী শ্রী হরিলীলামৃত গ্রন্থে মাতুয়াদের জয় ডঙ্কা বাজানোর মধ্যে দিয়ে হরিপ্রমে মত্ত হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন।কবি বলেছেন কলি কালে মানুষের মন যখন কলুষিতায় পূর্ণ তখন ধর্ম কর্মে তার একাগ্রতা খুবই কম।এমতকালে সৎ চিন্তা যদিওবা কোনসময় আসে কিন্তু তা খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনা।শুধুমাত্র খোল করতাল সহযোগে ঈশ্বর আরাধনায় পূর্ণ মনোনিবেশ সবসময় সম্পন্ন হয় না,তাই জয় ডঙ্কা সহযোগে মতুয়ারা যখন হরিনাম সংকীর্তণে উম্মত্ত হয়,তখন তাদের মনে এক অদম্য শক্তির সঞ্চার হয়।তারা সকল বাঁধা বিপত্তি অগ্রাহ্য করে,সমস্ত পিছুটান ভুলে কেবলমাত্র শ্রী হরিপ্রেমে নিমজ্জিত হয়।ডঙ্কার ধ্বনি কীর্তনের আসরে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দেয়।যে যুদ্ধ ব্যাক্তির অসৎ চিন্তার সাথে সৎ চিন্তার,যে যুদ্ধ বয়াক্তির আপনাকে জয় করবার।আর তাই ডঙ্কা বাজাতে বাজাতে মতুয়ারা হরি প্রেমে উন্মত্ত হয়ে কুশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ের আনন্দে বাদ্যের তালে তালে নেচে ওঠে।
“বহিঃ মুখী ষোলো শক্তি স্বপক্ষে অনিতে।
জয়ডঙ্কা নিয়ে হবে নামে যে রণেতে।।”
সনাতন হিন্দু ধর্মের বিস্তার সুবিশাল।মতুয়া সম্প্রদায় তার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।আমরা দেখি যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতায় হিন্দুরা উদারতার পরিচয় দিয়ে এসেছে।দুই বাহু প্রসারিত করে তারা সকলকে আপন করেছে।আর তাই অনেকেই হয়তো হিনুদের এই সহনশীলতাকে দুর্বলতা ভেবে মেনে নিয়েছে।কৌশলগত ভাবে হিন্দুর ঐতিহ্যকে ইতিহাস থেকে মুছে দেবার চেষ্টা চালানো হয়েছে।হিন্দু কখনো অন্য ধর্মকে আক্রমন করেনি।ভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে নয় বরং যুগে যুগে অধর্ম তথা বিনাশকারী শক্তির বিরুদ্ধে ধির্মরোখার্তে বারে বারে বেজে উঠেছে যুদ্ধের জয়ডঙ্কা।তাই বিভিন্ন অশুভ শক্তি, যারা সমাজকে বারে বারে কলুষিত করে চলছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর তাগিদে লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।সময় এসেছে সমগ্র হিন্দু সমাজ একত্রিত হবার। ছল এবং ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সমস্ত হিন্দু বাড়িতে প্রতিদিন নিয়মিত বেজে উঠুক জয়ডঙ্কা আর সেই তীব্র কম্পন ধ্বনি সকল মানুষকে নতুনভাবে জয়ের সংকল্পে আবদ্ধ করুক।
ডা.সন্দীপ কির্ত্তনীয়া (Dr. Sandeep Kirtaniya)