দ্য ওয়াল ব্যুরো: যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী ফি-বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-আন্দোলন করতে গিয়ে পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁদের আর কোনও সুযোগ দেওয়া হবে না। এমনটাই জানিয়ে দিলেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত মাস থেকেই জেএনইউ উত্তাল হয়েছিল হস্টেলের ফি বৃদ্ধির ইস্যুতে। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, প্রান্তিক অংশের ছাত্রছাত্রীরা যাতে পড়তে না পারে, সে কারণেই ৪০ শতাংশ ফি বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদেই আন্দোলনে নামেন পড়ুয়ারা।
চাপের মুখে পড়ে অবশ্য হস্টেল ফি কিছুটা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাকে আইওয়াশ বলে আরও জোরালো করে বিক্ষোভ। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক তিন সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু এখনও কিছুই সমাধান হয়নি।
গত কয়েক বছরে বারবার ছাত্রআন্দোলনের কারণে শিরোনামে এসেছে জেএনইউ। কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলাও রুজু হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি।
এই অবস্থায় বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের উপর কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিলেন কর্তৃপক্ষ। আন্দোলন করতে গিয়ে পড়াশোনার দিকে কোনও খামতি থাকলে আগামী সেমেস্টার রেজিস্টার করতে দেওয়া হবে না পড়ুয়াদের, সাফ জানিয়ে দেওয়া হল। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পড়ুয়াকেই পরীক্ষা দিতে বাধা দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। এই অবস্থায় অনন্ত সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি তাঁদের।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র বলেন, “ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের জন্য সুষ্ঠু পরীক্ষার ব্যবস্থা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। পরীক্ষার নির্ঘণ্ট তৈরি করে তা ওয়েবসাইটে দিয়েও দেওয়া হবে। কিন্তু কেউ পরীক্ষা না দিলে তাঁর জন্য বারবার সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।’’
এর মধ্যেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে তোলপাড়ের জেরে সেমেস্টার বয়কট করার ডাক দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা।ছাত্র বিক্ষোভের আঁচ এতটাই বেড়েছে যে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে পঠনপাঠন। এমন পরিস্থিতিতে দিন তিনেক আগে জেএনইউ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, পরীক্ষা নেওয়া হবে হোয়াটসঅ্যাপে অথবা ইমেলে। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ার যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য আপাতত এইভাবেই পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানান তাঁরা।
বলা হয়, এমফিল, পিএইচডি এবং এমএ-র ফাইনাল সেমেন্টারে যাঁরা দেবেন তাঁদের পরীক্ষা নেওয়া হবে হোয়াটসঅ্যাপে অথবা ইমেলে। প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ছাত্রছাত্রীদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন তাঁদের অধ্যাপক, অধ্যাপিকারা। ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই উত্তরপত্র পাঠাতে হবে শিক্ষকদের কাছে। উত্তর পাঠানো যাবে ইমেলে, অথবা উত্তরপত্রের ছবি তুলে স্ক্যান করে পাঠানো যাবে হোয়াটসঅ্যাপে। তাছাড়াও পড়ুয়ারা ব্যক্তিগত ভাবে শিক্ষকদের কাছেও উত্তরপত্র পাঠাতে পারেন।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে খারিজ করে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাওয়ার কথা বলেছেন জেএনইউ শিক্ষক সংগঠন (জেএনইউটিএ) ও ছাত্র সংগঠনের (জেএনইউএসইউ) সদস্যরা। তাঁদের দাবি, পরীক্ষা নেওয়ার এই পদ্ধতি ‘অবাস্তব’ ও ‘হাস্যকর’। এই সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে অন্য রণকৌশল স্থির করা হবে।
এই অবস্থায় ফের কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করলেন পরীক্ষা বয়কটকারীদের আগামী সেমেস্টারে সুযোগ না দেওয়ার কথা। ফলে পরিস্থিতি যে আরও খারাপের দিকে এগোবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই শিক্ষা মহলের।