লাগাতার তিন-চার বছর ধরে আজহারকে খুঁজছিল পুলিশ। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গি সংগঠনের অসম মডিউলের অন্যতম মাথা সে। অসমেরই বাসিন্দা। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে ছিল তার অবাধ বিচরণ। ডেরা বদলে বদলে এতদিন পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আসছিল আজহার। মঙ্গলবার বরপেটা থেকে তাকে পাকড়াও করে পুলিশ।
বরপেটা জেলা পুলিশ সুপার রবিন কুমার জানিয়েছেন, ২৫ বছরের আজহার আলি বরপেটার রাউমারি পাথার গ্রামের বাসিন্দা। লুকিয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে আসছে আজহার এমন খবর দেয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআই)। সতর্ক করা হয় পুলিশকে। রাতের অন্ধকারে আজহারের বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে আজহারের যোগ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এনআইএ সূত্রে খবর, আজহারের অনেক নাম। ডেরা বদলালে, নামও বদল করে ফেলত। নিজের গ্রামে তার পরিচয় ছিল আজহার আলি নামে। তাছাড়া কখনও আজহারউদ্দিন আহমেদ আবার কখনও আজহারউদ্দিন আলি নামে আত্মগোপন করেছিল সে। বুধবার আজহারকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
গতমাসেই চেন্নাই থেকে জেএমবি জঙ্গি আসাদুল্লাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। গোয়েন্দারা জানান, আসাদুল্লা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের চেন্নাই মডিউলের চাঁই। তার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের নিত্যানন্দপুর-ডাঙাপাড়ায়।তাকে জেরা করেই দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জেএমবি জঙ্গিদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। এর আগে অগস্টে গয়ার বুনিয়াদগঞ্জ থানার পাঠানটোলিতে ধরা পড়ে জেএমবি-র ‘আমির’ বা চাঁই ইজাজ আহমেদ। ইজাজকে জেরা করেই আসাদুল্লার খোঁজ পায় পুলিশ।
গোয়েন্দারা জানান, আজহার আলির প্রথম জানা যায় ২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সময়। তারও কয়েক বছর আগে জেএমবি-তে নাম লিখিয়েছিল সে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে সংগঠনের কাজ দেখভাল করত। পরে অসম মডিউলের অন্যতম মাথা হয়ে ওঠে। শীর্ষ জেএমবি নেতা কওসর ওরফে জহিদুল ইসলামের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
ভারতে জাল বিস্তারের নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে জেএমবি সংগঠন এমন তথ্য আগেই দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। এনআইএ জানিয়েছে, বিহার, মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্নাটকে জেএমবি জঙ্গিদের কার্যকলাপ বহুগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড (এটিএস) এবং স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর প্রধানদের এ বিষয়ে সতর্কও করেছে এনআইএ। খাগড়াগড়-কাণ্ড এবং বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের ঘটনার পর জেএমবি কী ভাবে ভারতে জাল বিস্তার করেছে, তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি, এনআইএ-র অভিযানে একের পর এক জঙ্গি ধরা পড়ছে। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কওসরের বেশ কয়েক জন সঙ্গী। তারা কওসর গ্রেফতার হওয়ার পর জেএমবি-র ভারত শাখার সংগঠন আরও শক্তিশালী করছিল।