শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলা এবং বিদ্যমান ভারতীয় পরিস্থিতি

কিছুদিন আগে শান্তিকামী ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা যে ভয়াবহ জঙ্গিহামলার সাক্ষী থেকেছে তাতে গোটা বিশ্ব বাকরুদ্ধ ও স্তম্ভিত। ব্যাপারটা নিয়ে পশ্চিমি দেশগুলিতে হইচই পড়ে যায়। বেশি হইচইয়ের কারণ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা যে ইসলামিক জঙ্গিহামলার শিকার হয়েছে তাতে বলি হতে হয়েছে শ্রীলঙ্কায় বসবাসরত খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং তাদের উপাসনাস্থল গির্জা। স্বাভাবিক কারণেই পশ্চিমি দেশগুলি তো হইচই করবেই, কারণ তারা খ্রিস্টান এবং শ্রীলঙ্কায় হামলার শিকার হয়েছে খ্রিস্টানরা।
এই প্রসঙ্গে কিছু ঘটনার উল্লেখ করা আবশ্যক। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কা সাক্ষী থেকেছিল ভয়াবহ এক দাঙ্গার। ঘটনাটির। সূত্রপাত হয় যখন মধ্যবয়সী এক সিংহলী ট্রাক চালককে কিছু মুসলমান যুবক প্রকাশ্য। দিবালাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার অপরাধ ছিল এটাই যে তার কারণে একটি মামুলি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আসলে ঘটনাটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। কারণ বিগত দশকে শ্রীলঙ্কার মূল সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। শ্রীলঙ্কায় মুসলমানদের উপর বাড়তে থাকে আরব্য সংস্কৃতির প্রভাব। যেমন ব্যাঙের ছাতার মতো এখানে ওখানে গজাতে শুরু করে মসজিদ যার অর্থ আসে মূলত আরব দেশগুলি থেকে। তাছাড়া মুসলমান মেয়েদের মধ্যেও বাড়তে থাকে আরব সংস্কৃতির প্রভাব। যেমন— বুরকা বা নিকাব পরিধান করা। পালা করে বাড়তে থাকে বিরিয়ানির দোকান। এই সম্বন্ধে একটি ঘটনার উল্লেখ আবশ্যক। ২০১৮ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার আমপাড়া শহরে কিছু বৌদ্ধ যুবক সান্ধ্যভোজনের জন্য একটি রেস্তোরায় যায়। খাওয়ার সময় তারা খাবারের ভিতরে কিছু ট্যাবলেট জাতীয় পদার্থ দেখতে পায়। পরে জানতে পারা যায় ওই ট্যাবলেট জাতীয় পদার্থ আসলে নির্বীজন। বা sterilisation Pill পরে চাপের মুখে পড়ে ওই রেস্তেরার মালিক স্বীকার করে নেয় যে পূর্বকল্পিত ভাবে স্থানীয় সিংহলী বৌদ্ধ যুবকদের নপুংসক বা পুরুষত্বহীন করে মুসলমান সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তারা এই ধরনের কাজে লিপ্ত ছিল। এটা তো গেল ২০১৮ সালের ঘটনা। ২০১৪ সালেও একই রকমের ঘটনা ঘটে। ১২ জুন ২০১৪ সালে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী আয়াগামা সামিথা এবং তার গাড়ির চালককে কিছু মুসলমান যুবক বিনা কারণেশারীরিকভাবে প্রচণ্ড প্রহার করে। আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন শ্রীলঙ্কায় হয়তো মুসলমানদের সংখ্যা যথেষ্ট সেইজন্য তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে মারধর করার সাহস পায়। তাহলে দেখে নেওয়া যাক শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ এবং মুসলমানশতাংশের হিসেবে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে। ২০০৯ সালের গণনা অনুযায়ী শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ (৭০.২ শতাংশ) হিন্দু (১২.৬ শতাংশ); মুসলমান (৯ শতাংশ) এবং খ্রিস্টান (৬.১ শতাংশ)। পরিসংখ্যানগুলো থেকে স্পষ্ট যে শতাংশের হিসেবে মুসলমানদের অবস্থান খুবই নগণ্য। তাহলে সত্তর শতাংশ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর উপরে আক্রমণ হচ্ছে কীভাবে যেখানে আক্রমণকারী মুসলমানদের সংখ্যা নগণ্য। শতকরা হিসেবে মুসলমানদের থেকে তো হিন্দুদের সংখ্যা বেশি। তাহলে হিন্দু ও বৌদ্ধদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে না কেন? কারণটা হচ্ছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দুটি ধর্মেরই মূল ভিত্তি হচ্ছে শান্তি এবং আত্মোন্নতি। দুটো ধর্মেই অসহিষ্ণুতার কোনো জায়গা নেই। সেই ঘটনার পরে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের নেতৃত্বে বোদু বালা সেনা (BBS) নামে একটি সংগঠনের সৃষ্টি হয়। যে সংগঠনের মূল কাজ হলো বৌদ্ধ সংস্কৃতি রক্ষা করা। বোদু বালা সেনার কারণে আজ শ্রীলঙ্কায় ধর্মান্তরকরণ বহু অংশে কমে গিয়েছে, আরব দেশগুলি থেকে অর্থ আসার পরিমাণও কমে গিয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির শক্তিক্ষয় হয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির একটি ব্লক তৈরি হয়েছে। কোনো বৌদ্ধ দেশ হিংসার শিকার হলে অন্য বৌদ্ধ দেশগুলি তার পাশে দাঁড়াচ্ছে। দুঃখজনকভাবে হিন্দুদের জন্য কথা বলার মতো কোনো ব্লক অথবা দেশ নেই। আশাব্যঞ্জকভাবে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী। ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে হিন্দুদের জন্য নতুন রাস্তা খুলে যায়। যদিও এই রাস্তার ইট পেতেছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ কেশববলিরাম হেডগেওয়ার। আমরা দেখেছি পাকিস্তানের আসিয়া বিবি নামে খ্রিস্টান মহিলার জন্য পশ্চিমি দেশগুলো কীভাবে সরব হয়েছিল। কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হিন্দুদের উপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতন যার সাম্প্রতিক সংযোজন হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দু নেতা পলাশ রায়কে জেলের মধ্য পেট্রোল দিয়ে নির্মমভাবে পুড়িয়ে মেরে ফেলা—এর বিরুদ্ধে কথা বলার মতো মানুষ সংখ্যায় খুব কম।
জ্যোতি প্রকাশ চ্যাটার্জি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.