ইসলামপূর্ব “আইয়ামে জাহেলিয়াত” যুগের সমস্ত চিহ্ন মুছে দিয়ে ইসলাম সভ্যতার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছিল ইসলামী জিহাদ, যার মূলে ছিল জবরদস্তি ধর্মান্তরকরণ। খাইবারের ইহুদিদের ওপর প্রথম শুরু হয়েছিল এই জিহাদি প্রক্রিয়া এবং তারপর ভারতের মাটিতেও আছড়ে পড়েছিল জিহাদ জিঘাংসা।
এই জিহাদের মাধ্যমে ভারতের হিন্দু জনসংখ্যাকে কৌশলে কমিয়ে দিয়ে অপরদিকে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
আমাদের আলোচনায় এই মতের সপক্ষে প্রমাণ হাজির করেছেন লেখক এম.এ. খান তাঁর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে “Islamic Jihad : A Legacy of Forced Conversion Imperialism and Slavery” by M. A. Khan.
বাংলাদেশের ঢাকা বদ্বীপ প্রকাশন, কনকর্ড এম্পোরিয়াম, কাটাবন থেকে এর বাংলা অনুবাদ বেরিয়েছে, নাম—“জিহাদ : জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার” , লেখক : এম . এ. খান।
৭টি অধ্যায়ে বিভক্ত ৪৭০ পাতার এই গ্রন্থে রয়েছে জিহাদ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা। দাসত্ব দিয়েই শুরু করা যাক ।
মুসলমানরা ভারতের সিন্ধুদেশ থেকে সোমনাথ, যেখানেই আক্রমণ করেছে, সেখানেই হিন্দু পুরুষদের হত্যা করেছে এবং তাদের নারী ও শিশুদের বন্দি করেছে।
এর ফলে একদিকে হিন্দু পুরুষদের যৌনসঙ্গী হিসেবে নারীদের দূরে সরিয়ে রেখে হিন্দুদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, হিন্দু মেয়েদের যুদ্ধের “গণিমতের মাল” হিসেবে গণ্য করে তাদের ধর্ষণ করে মুসলমান সন্তানের জন্ম দিয়ে জনসংখ্যা বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। (তথ্যসূত্র : জিহাদ–এম.এ. খান, পৃ: ১২৪)
এর ফলে জন্মানো শিশুদের মুসলমান জিহাদি হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের লাগানো হয়েছে হিন্দু নিধনের কাজে।
জিহাদের এই কৌশলী নীতির নীটফল দাঁড়ায় হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস এবং মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি। আর দ্রুত বেড়ে যাওয়া এই মুসলমান জনসংখ্যার ভরণপোষণ চলেছে অমুসলমান “কাফের” “জিম্মি”-দের ওপর জিজিয়া-খামস্-খরাজ নামের বিভিন্ন অপমানজনক করের অর্থে।
ভারতের হিন্দু জনসংখ্যার ভারসাম্যটা চিরতরে বদলে দিতেই শুরু হওয়া ইসলামী জিহাদের ফলে ভারত আজ তিন টুকরো হয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ—দুটি ইসলামী রাষ্ট্র দিয়ে ঘেরা।
শুধুমাত্র ভারত নয়, বিশ্বের বহু রাষ্ট্রেই এই ইসলামী জিহাদের প্রভাবে সেখানকার জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। যেমন, একসময়ের খ্রিস্টান প্রধান রাষ্ট্র লেবানন, বেথহেলেম, সারাজেবো, নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টান জনসংখ্যা কমেছে এবং ইরাক, মিশরে বেড়েছে মুসলমান জনসংখ্যা।
ভারতে অনুপ্রবেশকারী ইসলাম হানাদারদের হাতে এদেশের হিন্দু , বৌদ্ধ, জৈন, শিখ প্রভৃতি ধর্মের বহু প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে, লুঠ করা হয়েছে সেখানকার ধনভাণ্ডার, হত্যা করা হয়েছে সেখানকার মানুষদের এবং সেইসব ভাঙা মন্দিরের মালমশলা দিয়ে সেখানেই তৈরি হয়েছে মসজিদ।
ভারতের দিল্লিতে এভাবেই এলাকার ১৭ টি মন্দিরের মালমশলা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে “কোয়াৎ-উল্-ইসলাম” নামের মসজিদ। ” কোয়াৎ-উল্-ইসলাম” মানে “ইসলামের ক্ষমতা।” এভাবেই জিহাদ যুদ্ধে ইসলামের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
আমির খসরু, সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকসহ অন্যান্য অনেকের লেখায় মন্দিরের পুরোহিত ও সাধুসন্তদের সাধারণত হত্যা করা হতো বলে জানা যায়। ( তথ্যসূত্র : জিহাদ –এম. এ. খান, পৃ:২৪৭)
মরক্কোর পর্যটক ইবন বতুতা জানাচ্ছেন, সামুদ্রার মতো ছোট নগররাজ্যে মুসলমানরা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের বিধর্মীদের বিরুদ্ধে শুরু করে দেয় নির্মম নিষ্ঠুর জিহাদ। ( তথ্যসূত্র : জিহাদ : এম. এ. খান, পৃ: ১৭২)
আজকের ভারতীয় মুসলমানের অনেকেই এই ইসলামী জিহাদের ফলে “গণিমতের মাল” হিন্দু নারীর গর্ভজাত সন্তানের যে উত্তরাধিকারী তা এম. এ. খানের সাম্প্রতিক লেখায় প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে। আজকের ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্মের শিকড় রয়েছে হিন্দু নারীর গর্ভেই। মুসলমানরা কীভাবে “মুসলমান” হলেন, এখানেই তা স্পষ্ট।
বাঙলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির উঁচু-নিচু জাত এবং বাঙালি মুসলমানদের রক্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, বাঙালি মুসলমানরা আসলে বাঙালি হিন্দুদের সমগোত্রীয়। মিসেস ম্যাকফারলেন, রবীন্দ্রনাথ বসু, মীনেন্দ্রনাথ বসু , শশাঙ্কশেখর সরকার, অনিল চৌধুরী, মাখললাল চক্রবর্তী প্রমুখ কয়েকজন বিশিষ্ট গবেষক জানিয়েছেন, বাঙালি একটি সঙ্কর জাতি। ড: ম্যাকফারলেন বলেছেন, বর্ণ, বর্ণেতর ও অস্পৃশ্য বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে যে রক্ত-বৈশিষ্ট্য রয়েছে, বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও তাই রয়েছে। সুতরাং, বলা যায়, বাঙালি মুসলমানরা আসলে বাঙালি হিন্দুদেরই সমগোত্রীয়।
(তথ্যসূত্র : বাঙালীর ইতিহাস, আদি পর্ব : নীহাররঞ্জন রায়, দে’জ , কলকাতা, ৭ম সংস্করণ, পৃ: ২৯ )
সিন্ধু সভ্যতায় যে আর্য ভারত তৈরি হয়েছিল, নানা সমাজ ও ধর্মবিশ্বাসে বিভক্ত হয়ে তা আজকের সময়কাল পযর্ন্ত বিস্তৃত। কিন্তু বিভক্ত হয়েও সমগ্র ভারতবাসী একটি ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ, যার নাম—ভারতীয়তা ।
ভারতের অপর নাম হিন্দুস্থানে বসবাসকারী প্রতিটি অধিবাসীই হিন্দু , কিন্তু মুসলমান-শিখ-মারাঠি-রাজপুত-রাজবংশী-বৌদ্ধ-জৈন-খ্রিস্টান-ব্রাহ্ম-শৈব-শাক্ত-সৌর-গাণপত্য প্রভৃতি বিভিন্ন ধর্মে তারা নানাভাবে বিভক্ত।
(তথ্যসূত্র : ধর্ম ও জীবন—রণজিৎ কুমার সেন, গ্রন্থনিলয়, কলকাতা, ১৯৮৮, পৃ:১৪)
আসলে “হিন্দু” শব্দটি মোটেও ধর্মসূচক শব্দ নয়, এটি একটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রসূচক শব্দ। আজ “হিন্দুইজম” বা হিন্দুয়ানি বলতে যা বোঝায়, প্রাচীন ভারতে তার মধ্যে কোনোরকম ধর্মের যোগ ছিল না। প্রাচীন ভারতে যা ছিল তা হলো বৈদিক আর্যধর্ম। আর সেটাকে বাদ দিয়ে হিন্দুত্ব নিয়ে চলছে অর্থহীন লড়াই।
তাই আজ আমরা বৈদিক ঋষিদের ভাবনায় সনাতন ধর্মকে “আর্যধর্ম” আখ্যায়িত করে তাঁদের প্রচারিত “অমৃতস্য: পুত্রা” নামেই পরিচিত হতেই পারি ।