তিন মাস বকেয়া বেতন না মেলায় আজ ১৫ এপ্রিল থেকেই কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ন্যাশনাল অ্যাভিয়েটরস গিল্ডের (ন্যাগ) প্রায় হাজারেরও বেশি পাইলট। রবিবার রাত থেকেই কর্মবিরতিতে চলে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই। তবে দিন শুরু হতেই বিরতি তুলে নেন সাময়িক ভাবে। জেটের পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ার মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার চাকরি বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইতিমধ্যেই লিখিত আবেদন জানিয়েছে ন্যাগ।
গতকাল থেকে দোলাচলে রয়েছে এই বিমান সংস্থা। পাইলটদের অভিযোগ, জেট চালু রাখতে ১,৫০০ কোটি টাকা ঢালার কথা ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের। সেটা তো আসেইনি, পাশাপাশি ডিসেম্বর অবধি বকেয়ার ৮৭ শতাংশ মেটালেও সিংহভাগই এখনও বাকি। কর্তৃপক্ষের সে ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই। অভিযোগ জানাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও গিয়েছিল জেট কর্মী ইউনিয়ন।
জেট অবশ্য বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিল, লিজের টাকা না ঢোকায় উড়ানসূচীতে আরও ১০টি বিমান বসিয়ে দিয়েছে তারা। মাস কয়েক আগেও আকাশ দখলের জন্য লড়াই করত যে সংস্থার ১২৩টি বিমান, সরকারি ভাবেই তার সংখ্যা নেমে এসেছে ৯টিতে। নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা চালানোর জন্য এ দেশে বিমান পরিবহণ সংস্থার হাতে অন্তত ২০টি বিমান থাকা জরুরি। সেটা এই মুহূর্তে জেটের হাতে নেই। এ দিকে সোমবার পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আমস্টারডাম, প্যারিস এবং লন্ডনগামী জেটের সমস্ত উড়ান। পাশাপাশি, নতুন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কলকাতা-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতও আপাতত থাকবে জেটের উড়ান মানচিত্রের বাইরে। মুম্বই-কলকাতা, কলকাতা-গুয়াহাটি, দেহরাদূন-গুয়াহাটি-কলকাতাগামী উড়ানও আপাতত বাতিলের তালিকায়।
মার্চ মাসে স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে লোনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল জেট। চুক্তি অনুযায়ী ১৫০০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কথা এই বিমানসংস্থার। পাশাপাশি জানা গিয়েছিল, স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন ঋণদাতাদের গোষ্ঠী (এসবিআই, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, কানাড়া ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক, ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক)-র সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছিলেন সংস্থার কর্তৃপক্ষেরা। ৭ মের পরে নতুন লগ্নিকারীর নাম জানা যাবে। তত দিন কী ভাবে এই টাকা ব্যবহার করা হবে তার সবিস্তার পরিকল্পনা ব্যাঙ্কের কাছে জমা দিতে হবে জেটকে। ব্যাঙ্ক সন্তুষ্ট হলে টাকা দেওয়া হবে। তা দিয়ে পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও সংস্থার অন্য কর্মীদের বকেয়া বেতনের একাংশ মেটানো হবে বলে ধারণা।
সূত্রের খবর, জেটের রাশ ফের হাতে নিতে শুক্রবার আগ্রহপত্র জমা দিয়েছেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গয়াল। ২৫ মার্চ যখন ডুবতে থাকা জেটের সিংহভাগ শেয়ার স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম হাতে নেয়, তখন নরেশের হাতেই ছিল ৫১% শেয়ার। কিন্তু ২৫ মার্চের পরে তা কমে হয় ২৬%। ঋণ নিতে যা আবার পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখেছেন তিনি। প্রায় ২০ হাজার কর্মীর চাকরি বাঁচানোর জন্য ওই টাকা তিনি অংশীদার কেনার পিছনেই ঢালবেন কিনা, সেটাই এখন দেখার।