রাসের জন্যই চেনেন সবাই । তবে শান্তিপুরের আনাচে কানাচে কিন্তু ছড়িয়ে রয়েছে আরও নানা পুজোর ইতিহাস। সূত্রাগড়ের জগদ্ধাত্রী পুজোর কথাই ধরা যাক।
থিম, আলোর কারিকুরি, বিশাল উন্মাদনা এত কিছু হয়তো নেই। কিন্তু শুধুমাত্র ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বেই এখনও উদ্ভাসিত সূত্রাগড়ের জগদ্ধাত্রী পুজো। একদিনেই পুজো সারা হয় এখানে। বিসর্জন পরের দিন। দু’দিনই ভক্তের ঢল নামে। শান্তিপুরের গোস্বামী বাড়ির সদস্য সত্যনারায়ণ গোস্বামী জানান, শান্তিপুরের সূত্রাগড়ের জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস বহু পুরনো। এই পুজোর সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির। রাজবাড়ির লোকজন যাতে সূত্রাগড়ের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে পান তাই কৃষ্ণনগরে যেদিন প্রতিমা বিসর্জন হয় তারপরের দিন বিসর্জন হয় এখানে । এখান থেকেই মা জগদ্ধাত্রীর আবির্ভাব। শান্তিপুরের হরিপুরের ব্রাহ্মণরাই তাঁর প্রথম উপাসক।
কথিত আছে, একবার দুর্গাপুজোর সময় বিহারের মুঙ্গের জেলে বন্দি ছিলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। বিজয়া দশমীর দিন ছাড়া পাওয়ার পর নৌকা নিয়ে কৃষ্ণনগরে আসার পথে ভাগীরথী নদীর তীরে দেবীর বিসর্জন দেখে তাঁর মনখারাপ হয়ে যায়। বাড়ি আসার পর সেই রাতেই স্বপ্নাদিষ্ট হন। নির্দেশ পান কার্তিক মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে পুজো করার। এরপরেই রাজসভার পণ্ডিতদের কাছে বিষয়টি জানান তিনি।
তাঁর রাজসভায় সেই সময়ের অন্যতম ছিলেন শান্তিপুরের হরিপুরের চন্দ্রচূড় চূড়ামণি তর্কবাগীশ। রাজা তাঁকেই ডেকে এই ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। রাজার আদেশ পেয়ে পঞ্চবটী আসনে ধ্যানে বসেন চন্দ্রচূড় তর্কবাগীশ। সেখানেই জগদ্ধাত্রীর আসল রূপ তিনি দেখেন এবং প্রাচীরের দেওয়ালে সেই অবয়ব এঁকে দেন। তারপরের দিন থেকে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণের কাজ। কার্তিক মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে দেবীর বোধন হয়। সেই থেকেই এই পুজো হয়ে আসছে এখানে।
নয় নয় করেও এই পুজোর বয়স প্রায় ৫০০ বছর বলে জানালেন সত্যনারায়ণ গোস্বামী। একসময় দেড়শো ঘরের মতো ব্রাহ্মণদের বসবাস ছিল এই সূত্রাগড়ে। শোনা যায়, একটা সময়ে হঠাৎ করে কলেরা রোগ দেখা দেয়। সেই কলেরা রোগে মড়ক লাগার পর থেকেই এখান থেকে সরে যান ব্রাহ্মণরা। লাগোয়া এলাকার মানুষজনই এখন ধরে রেখেছেন এই পুজোর ঐতিহ্য। জৌলুস হারালেও ধর্মের টানে এখনও প্রচুর মানুষ আসেন জগদ্ধাত্রী দর্শনে। ভক্তিতে তাঁরা ঢিল বাঁধেন পঞ্চবটী গাছে। সব জায়গায় চারদিনের পুজো হলেও এখানে দেবী পুজিতা হন দু’দিন। নবমী আর দশমীতে।