নিরাপত্তারক্ষীদের হাত থেকে বাঁচতে একটি বাড়িতে ঢুকে বাড়ির সদস্যদের বন্দি করেছিল দুই লস্কর ই তইবা জঙ্গি। কোনও রকমে বাকিরা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতে পারলেও পারলো না ১২ বছরের আতিফ। জঙ্গিরা পালাবার আগে গুলি করে মারলো আতিফকে। তাদের কানে গেল না, মায়ের কাকুতি, গ্রামের লোকদের আবেদন। আর এই ঘটনার পর কাশ্মীরিরাই প্রশ্ন তুলছেন, ‘এটাই কি জেহাদ?’ নাকি এটা অশিক্ষা, গোঁড়ামি আর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ঘটনাটি বৃহস্পতিবারের। শ্রীনগর থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরে উত্তর কাশ্মীরের হাজিন এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, দুই লস্কর জঙ্গি আলি ও হুবাইব পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আতিফ মীরদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সেখানে তারা বাড়ির একমাত্র মেয়ের ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু বাড়ির লোক কোনও রকমে তাকে বের করে দেয়। এই ঘটনায় রেগে গিয়ে বাড়ির সবাইকে মারধর শুরু করে ওই দুই জঙ্গি।
আশেপাশের লোকেরা বাড়ির মধ্যে থেকে এই চিৎকার শুনে পুলিশে খবর দেয়। দুই জঙ্গির খোঁজে নিরাপত্তারক্ষীরা তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। তাঁরা বুঝতে পারেন, দুই জঙ্গি ওই বাড়িতে লুকিয়ে আছে। বাড়িটিকে ঘিরে ফেলেন তাঁরা। এই অবস্থায় নিজেদের বাঁচানোর জন্য বাড়ির সবাইকে বন্দি বানানোর চেষ্টা করে আলি ও হুবাইব।
বাড়ির সবাই কোনও রকমে বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ১২ বছরের আতিফ ও তার কাকা হামিদ মীর বেরাতে পারেননি। ভিতরে দুজন আটকে থাকায় নিরাপত্তারক্ষীরাও বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারছিলেন না। এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, “আমরা বুঝতে পারছিলাম একজন ছেলে ও তার কাকা ভিতরে আটকে আছে। তাই আমরা গ্রামবাসীদের কাছে আবেদন করি, তাঁরা যেন জঙ্গিদের কাছে আবেদন করেন, দুজনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।”
জানা গিয়েছে, তারপরেই গ্রামের প্রধান কাশ্মীরিতে দুজন জঙ্গির উদ্দেশে বলেন, “বাচ্চাটিকে ছেড়ে দাও। তোমরা যেটা করছ, তাকে জেহাদ বলে না, বলে জাহালত ( অশিক্ষা, গোঁড়ামি, অজ্ঞতা )।” হামিদের স্ত্রী ও আতিফের মা জঙ্গিদের সামনে আবেদন করেন, যাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিছুক্ষণ পরে হামিদকে ছেড়ে দেয় জঙ্গিরা। কিন্তু তাঁর গোটা শরীরে মারের চিহ্ন ছিল। হামিদ বলেন, “আমি আতিফকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাদের কাছে অনেক আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আমার কোনও কথা তারা শোনেনি। আমাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।”
শেষ পর্যন্ত আতিফকে গুলি করে খুন করে দুই লস্কর জঙ্গি। তারপর তারা পালানোর চেষ্টা করে। সেই সময় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে দুই জঙ্গিই নিহত হয়েছে বলে খবর। পুলিশ সূত্রে খবর, দুই লস্কর জঙ্গির মধ্যে আলি অনেকদিন আগে থেকেই এই এলাকায় সক্রিয় ছিল। এক বিএসএফ জওয়ান ও এক সাধারণ মানুষকে খুন করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
এই ঘটনার পরেই কাশ্মীরিদের তরফ থেকেই জঙ্গিদের এই কাজের সমালোচনা করা হয়েছে। অনেকেই টুইটারে এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। সবার বক্তব্য, জঙ্গিরা যে জেহাদের কথা বলে, তা একটা ১২ বছরের বাচ্চাকে খুন করে পাওয়া যায় না। পুলিশ সূত্রে খবর, আগে কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিরা যেভাবে স্থানীয় মানুষদের সাহায্য পেত, সেটা দিনদিন কমছে। ফলে গত কয়েকমাসে বেশ কিছু জঙ্গি নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে নিহত হয়েছে।