কৃষ্ণনগর,৮ ই সেপ্টেম্বর।কৃষি ভারতের ভিত্তি,শিল্প ভারতের ভবিষ্যৎ।কৃষি দেবতা বলরামজীর দেখানো পথে ভারতের কৃষক সমাজ এগিয়ে চলেছে।মহাভারতের যুদ্ধে সবাই যখন যুদ্ধ ভূমিতে উপস্থিত হয়েছে তখন বলরামজী সে ভূমি ত্যাগ করে কৃষিকাজ করতে চলে গেলেন কারণ খাদ্য ভান্ডারে খাদ্যশস্য মজুত রাখতে হবে।দুষ্মন্ত পুত্র ভরতের ভারত কৃষি ও ঋষির দেশ।কৃষক মাটি কর্ষণ করে জমিতে ফসল ফলান আর ঋষি মনোভূমি কর্ষণ করে মানসিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করেন।এই দু’য়ের প্রচেষ্টাতেই ভারত একসময় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আসন অলংকৃত করেছিল।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভারতের কৃষকদের অবস্থা চরমভাবে শোচনীয় হয়েছে।দুই-একটি রাজ্য ছাড়া কৃষির সাথে যুক্ত মানুষদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের দুর্দশার কথা স্মরণ করে বছরে সর্বোচ্চ ছ’হাজার টাকা ‘সাম্মানিক’ হিসেবে দিচ্ছে।কিন্তু তাতে খুব বেশি সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।কৃষকভাইরা উৎপাদিত ফসল লাভে বিক্রি করতে পারলে তবেই তাদের সমস্যার সমাধান হবে।আর সেই দাবিতেই আজ নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর তথা সারা ভারতব্যাপী সমস্ত জেলা শাসকদের মাধ্যমে ভারতবর্ষের আদরণীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘দাবি সনদ’ প্রদান করল ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘ।এদিনের কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘের নদীয়া জেলার সম্পাদক মিলন খামারিয়া,জেলা সহ-সম্পাদক অর্ণব রায় ও জেলা যুব-প্রমুখ অশোক বিশ্বাস মহোদয়;মৃন্ময় বিশ্বাস ও আরও অনেকে।
এদিন সকাল ১১ টায় নদীয়া জেলার কিষাণ সঙ্ঘের বিভিন্ন স্তরের কার্যকর্তারা ‘খাদ্য ভবন’-এর সামনে উপস্থিত হন।তারপর তারা তাদের দাবি গুলো জানিয়ে স্লোগান দেন।তারা ‘জেলা শাসক’ মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবিদাওয়া জানান।তাদের দাবি গুলো সংক্ষেপে এরূপ -১)উৎপাদিত ফসল লাভকারী মূল্যে বিক্রির বন্দোবস্ত কেন্দ্রীয় সরকারকেই করতে হবে।২)কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত নূন্যতম সহায়ক মূল্যে ফসল বিক্রির বন্দোবস্ত কেন্দ্রীয় সরকারকেই করতে হবে।৩)কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত নূন্যতম সহায়ক মূল্যের নিচে কোনো ক্রেতা/ ব্যাবসায়ী যদি কৃষকভাইদের থেকে ফসল কেনে তাহলে তার যথাযথ শাস্তির বন্দোবস্ত করতে হবে।
এছাড়াও তারা জেলা শাসক মহোদয়কে অনুরোধ করেন সবজি বা মাছ বাজার গুলোর আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির জন্য;পাটের দাম ৯০০০ টাকা থেকে কমে ৫০০০ টাকায় নেমে যাওয়া,কিষাণ সম্মাননিধির টাকা পেতে অসুবিধা,সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত বিষ প্রয়োগ ইত্যাদির সমস্যার সমাধান করার বিশেষ উদ্যোগ নিতে।জেলা শাসক মহোদয় কিষাণ সঙ্ঘের কার্যকর্তাদের দাবি গুলো সঙ্গত বলে জানান এবং তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয় গুলি জানাবেন বলে আস্বস্ত করেন।
আজকের কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলা সম্পাদক মিলন খামারিয়া জানান যে,-” আমরা সবাই কৃষকভাইদের উৎপাদিত ফসল খেয়ে বেঁচে আছি কিন্তু সেই অন্নদাতাদের মুখেই আজ অন্ন নেই।তারা ঋণ করে চাষ করছেন কিন্তু ফসল বিক্রি করে সেই টাকাও তুলতে পারছেন না।তাই অনেক কৃষক প্রতিবছর আত্মহত্যা পর্যন্ত করছেন।সেইজন্য অন্নদাতাদের লাভকারী মূল্যে ফসল বিক্রির বন্দোবস্ত করে তাদের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে হবে।আর আত্মনির্ভরশীল ও সমৃদ্ধ কৃষক সমাজই পারে দেশকে ‘পরম বৈভবশালী রাষ্ট্র’-এ পরিনত করতে।”
ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘের দাবি অবশ্যই সঙ্গত।আমাদের দেশে জুতো বিক্রি হয় এসি শো-রুমে আর যা খেয়ে আমরা বেঁচে আছি সেই সবজি বা খাদ্যসামগ্রী বিক্রি হয় ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।কৃষি বা কৃষকদের সমস্যা থেকে বের করার জন্য বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি নতুন ‘কৃষি আইন-২০২০’ পাস করলেও মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তা স্থগিত হয়ে আছে।যদিও ভারত সরকার ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার জন্য বদ্ধপরিকর তবে নতুন কৃষি আইন তার আইন’ই জটিলতা কাটিয়ে কৃষকদের সমস্যা কবে সমাধান করে,সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সমগ্র কৃষক সমাজ।
কৃষকদের বক্তব্য হল -‘দেশের খাদ্য ভান্ডার আমরা ভরে তুলবো কিন্তু মূল্য পুরো নেব।’ কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাক।অন্যান্য খরচ কমিয়ে আমরা যদি কৃষকদের ফসল একটু বেশি দামে কিনে খায় তাহলে তাদের উন্নতি হবার পাশাপাশি দেশও উন্নত হবে।সমাজের সব মানুষ কৃষকদের প্রতি একটু দৃষ্টি দিক,তাহলেই কিষাণ সঙ্ঘের উদ্দেশ্য সফল হবে।