শত্রু শিবিরের অবস্থান জানতে অ্যাডভান্সড ইলেকট্রনিক ইনটেলিজেন্স স্যাটেলাইট বা এমিস্যাটের উৎক্ষেপণ সফল। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারে সম্প্রতি যোগ হয়েছে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসকারী ‘অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল’ ASAT। মহাকাশ-সাফল্যে আরও একবার নিজেদের প্রমাণ করতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। আরও নির্ভুল ভাবে শত্রুশিবিরের উপর নজরদারি চালাতে এ বার মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছে ভারতের এই বিশ্বস্ত ‘গুপ্তচর’ রিস্যাট-২বিআর১ উপগ্রহ।
আগামী ২২ মে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে মহাকাশে পাড়ি দেবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই নজরদারি উপগ্রহ। পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকলে (PSLV-C46) চাপিয়ে মহাকাশে প্রেরণ করা হবে সেটি। সীমান্তের ও-পারে শত্রুপক্ষের সেনাঘাঁটি বা জঙ্গিদের গোপন ঘাঁটির খুঁটিনাটি থেকে ভারত মহাসাগরে বাড়তে থাকা চিনের উপদ্রব—সবকিছুই পাকা গোয়েন্দার মতো ভারতের হাতে তুলে দেবে এই উপগ্রহ। মহাকাশবিজ্ঞানীদের কাছে তাই রিস্যাট পর্যায়ের এই নয়া উপগ্রহ এক কথায় মহাকাশে ভারতের ‘গোপন চোখ।’
এর আগে রিস্যাট সিরিজের চারটি নজরদারি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে ইসরো। তাদের মধ্যে রয়েছে রিস্যাট-১ ও রিস্যাট-২। রিস্যাটের পুরনো সিরিজের উপগ্রহের পাঠানো ছবি ও তথ্যের ভিত্তিতেই ২০১৬-য় হয়েছিল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। চলতি বছরে পুলওয়ামা হামলার প্রত্যাঘাত হিসেবে পাকিস্তানের বালাকোটে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবিরে যে বিমান-হানা চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা, সেটাও ওই রিস্যাটের পাঠানো ছবির ভিত্তিতেই। ইসরোর বিজ্ঞানীদের কথায়, পুরনো রিস্যাটের থেকে নতুন রিস্যাট প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা সম্পন্ন।
রিস্যাট-২বিআর১ উপগ্রহে রয়েছে রিস্যাট এক্স-ব্যান্ডের সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (SAR) যা দিন ও রাতে নির্ভুল ছবি তুলতে সক্ষম। মেঘ ফুঁড়ে ভূমির যে কোনও ছবি, শত্রু শিবিরের অবস্থান, সন্ত্রাসবাদীদের গোপন গতিবিধি, তাদের যোগাযোগের মাধ্যম সবকিছুরই তুরন্ত ছবি তুলে পাঠাতে পারবে এই উপগ্রহ। এমনকি পাশাপাশি এক মিটার দূরত্বের ‘অবজেক্ট’ নির্ভুল ভাবে চিহ্নিত করতে পারবে এটি। শুধু শত্রদের গতিবিধি নয়, এর সিন্থেটিক অ্যাপারচার সেন্সর আবহাওয়ার তথ্যও দেবে সঠিক ভাবে। মহাকাশবিজ্ঞানীদের মতে, এর রাডারে ধরা পড়া ছবি দেখে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার জন্য আগাম পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
এপ্রিলেই মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে নজরদারি উপগ্রহ এমিস্যাট (EMISAT)। মাত্র ৪৩৬ কিলোগ্রাম ওজনের এই উপগ্রহটি পৃথিবী থেকে ৭৬৩ কিমি দূরত্বের কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি সীমান্ত পারের যে কোনও জায়গায় জঙ্গি শিবিরে কড়া নজরদারি চালাবে এই নয়া উপগ্রহ। শুধু তাই নয়, এই ইলেকট্রনিক স্যাটেলাইট সহজেই বলে দেবে শত্রু শিবিরে কী কী গ্যাজেট সক্রিয়। জানুয়ারিতে ৭৪০ কিলোগ্রাম ওজনের একটা উপগ্রহকে কাঁধে চাপিয়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল’ বা পিএসএলভি-সি-৪৪। ‘মাইক্রোস্যাট-আর’ নামে এই উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল সেনাবাহিনীর গবেষণামূলক কাজের জন্যই। যেটি রাতের পরিষ্কার ছবি তুলে পাঠাতে সক্ষম। ইসরো জানিয়েছে, আরও একগুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। মে মাসের মাঝামাঝি মহাকাশে পাড়ি দিতে পারে রিস্যাট-২বি উপগ্রহ। জুনে পাঠানো হবে কার্টোস্যাট-৩। এই বছরই চন্দ্রযান-২ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে ইসরো।