“ইসলাম ধর্মাবলম্বী-বাঙালি” আর “সোনার-পাথরবাটি” একই !
একই সাথে কেউ কি করে ‘ইসলামে’ এবং ‘বাঙালিয়ানায়’ বিশ্বাসী হতে পারে– যেখানে ‘বাঙালির ডিএনএ-র’ সাথে ‘আরবীয় দর্শনের’ বিন্দুমাত্র যোগ নেই !
বাঙালির ধর্মের উৎপত্তি এই দেশের মাটিতে – তার বৃদ্ধিও এই আকাশেই !
মরু-ঝড় তাকে ছিন্নমূল করে উড়িয়ে দিতে পারেনি !
‘বাংলাভাষী’ যে কেউ হতেই পারে, কিন্তু বাংলাভাষী মানেই তো আর – ‘বাঙালি’ হয়ে যাওয়া না !
বাঙালির ধর্ম – ‘এই মাটির ধর্ম’ … বাঙালির —
তুলসী তলা থাকবে, লাল পাড় সাদা শাড়ি থাকবে, সন্ধ্যেবেলার শাঁখ থাকবে, বাঙালি – মায়ের অকাল বোধন উদ্বযাপন করবে, বাঙালি মনসা-টুসু-ভাদু পুজো করবে, বাঙালির বাড়িতে দুগ্ধবতী গাভিকে বাড়ির ছোট বাচ্ছাটি আদর করে খড় খাওয়াবে, বাঙালির বাড়িতে নবান্নের আলপনা থাকবে, বাঙালি কালীপুজোয় পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া বলির পাঁঠার মাংস খাবে, নবমীতে কচি পাঁঠার(খাসির মাংস নয়) ঝোল খাবে, বাঙালি – “দশমীর দিন সিঁদুর খেলবে”, ভাইফোটায় বোনের সাথে খুনসুটি করবে, বাঙালি সরস্বতী পুজোতে হলুদ শাড়ি, পাঞ্জাবী পড়ে প্রেম করতে বেরোবে, বাঙালির পৌষে পিঠে থাকবে, অষ্টমীতে লুচি থাকবে !
সর্বোপরি বাঙালির নাম বাংলায় হবে, আরবীতে নয় !
হ্যা ডিএনএ একই ! কেউই আরব থেকে উড়ে এসে এখানে পড়েনি বা কারোর বাড়ির লোকও সেই সময়ে আরবে যায়নি ! সবার পূর্বপুরুষ এই বাংলার মাটিতেই জন্মেছিলেন এবং ‘সনাতনী’ হয়েই জন্মেছিলেন ! তারপরে তাদের কেউ কেউ ধর্ম পরিবর্তন করেছেন — নানা কারনে।
যারা ধর্ম পরিবর্তন করেছেন — ‘ঈদ’ একান্তই তাদের প্রধান উৎসব, কোনভাবেই “বাঙালির নয়” !
তাদের বর্তমান ধর্ম – বাঙালির উৎসবের যে দর্শন, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য আছে, তাকে মান্যতা দেয়না !
সেই ধর্ম বাঙালির ন্যায় যতো মত ততো পথের কথা বলেনা, তারা একেশ্বরবাদের কথা বলে !
সুতরাং, যিনি বাঙালির দর্শন, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে অস্বীকার করতে চান — তিনি তাঁর নিজের ডিএনএকেই অস্বীকার করতে চাইছেন ! আর ডিএনএকে অস্বীকার করে তিনি ‘নিজেকে – ভূমিপুত্র’ বলে দাবী করতে পারেন না !
যদি নিজেকে ভূমিপুত্র বলে দাবী করতে হয়, সেক্ষেত্রে তাকে মেনে নিতে হবে ‘ইসলাম’ তাঁর স্বাভাবিক ধর্ম নয়, ধর্মান্তরনের কারনে তিনি ইসলামের অনুসরণ করছেন মাত্র, কিন্তু তাঁর ডিএনএ অর্থাৎ শিকড় এই ধর্মের দর্শন, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত নয় – তার যোগ হিন্দু ধর্মেরই সাথে, তাই তাকে আবার নিজের শিকড়ের সাথে সংযুক্ত হতে হবে – নচেৎ তিনি “বাঙালি” বা “বাংলার ভূমিপুত্র” দুটোর কোনটিই হতে পারেন না !!
লেখনীঋণ : দীপ্তাস্য যশ