তামিলনাড়ু (Tamil Nadu) , ভারতের এক মন্দিরময় রাজ্য, যেখানে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর, ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দির গুলির অবস্থান করছে। মন্দিরগুলিতে সারা ভারত থেকে প্রচুর ভক্তদের সমাগম হয়। ফলে, নগদ অর্থাগমও ঘটে। এই প্রচন্ড মহামারীর দিনে এধরনের বড় মন্দিরগুলি বহু পরিমান অর্থ প্রদান করে সাহায্য করেছে সে প্রমাণও আমরা পেয়েছি। তবে, তামিলনাড়ু (Tamil Nadu) রাজ্যের মন্দিরগুলি বারবার সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক উচ্চ-হস্তের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দ্বারা সমস্ত প্রধান মন্দিরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মন্দিরগুলির সুযোগ সুবিধা বিলাসবহুল মানুষজন একচেটিয়াভাবে উপভোগ করে।
তামিলনাড়ুতে সাম্প্রতিক এক ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় অগ্নি প্রজ্জ্বলন করেছে। তামিলনাড়ু রাজ্যের প্রায় ৪৭ টি বড় বড় মন্দিরকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ‘অনুদান’ হিসাবে মোট ১০ কোটি টাকা করে দিতে সরকারের তরফ থেকে হুকুম করা হয়েছে কিন্তু হাস্যকরভাবে কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নয় ! বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের রমজান পালনের জন্য সেই অর্থ দিতে বলা হয়েছে। তামিলনাড়ু এমন একটি রাজ্য , যা কোভিড -১৯ মহামারী রুখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তার ‘একক উৎস’ হয়েছে সেই বিশেষ সম্প্রদায় (তাবলীগী জামাত পড়ুন)।
হিন্দু ধর্মীয় ও চ্যারিটেবল এন্ডোমেন্টস বিভাগের সেক্রেটারি কে পানিন্দ্র রেড্ডি ৪৭ টি মন্দিরের সমস্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন, করোনা মহামারীর কারনে লকডাউন হওয়ার জন্য দরিদ্রদের উদ্দেশ্যে ৩৫ লক্ষ টাকার অনুদানের জন্য। অন্যান্য মাঝারি এবং ছোট মন্দিরগুলিকে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে, একদিকে তামিলনাড়ু সরকার নির্লজ্জভাবে হিন্দু মন্দিরগুলির অর্থ লুট করছে, অন্যদিকে মসজিদগুলি সরকারের নিকট ভ্যানিশ হয়ে গেছে। তাদের অর্থ ও প্রভূত সম্পত্তিতে চোখতো পড়ছেই না উপরন্তু তাদের রমজান মাসে বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে ।
তামিলনাড়ু সরকার রোজার মাসে রাজ্যের ২৯৮৫ মসজিদে ৫৪৫০ টন নিখরচায় চাল বিতরণ করার আদেশ দিয়েছেন, যাতে যারা রোজার রাখছেন তাদের সমস্যা না হয়। এই চাল ২১ টাকা কেজি। চাল বিতরণের জন্য তামিলনাড়ু সরকার থেকে ১১ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর কার্যকর অর্থ হ’ল, তামিলনাড়ু সরকার, হিন্দু মন্দিরগুলিকে নিঃস্ব করে মুসলমানদের সন্তুষ্ট করার জন্য- তাদের ব্যয় বহন করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে।
কিন্তু সরকার দ্বারা এই লুট কেন? কেন করোনা মহামারীর জন্য সাহায্য না নিয়ে কেবল একটি সম্প্রদায়কে খুশি করার প্রচেষ্টা? তাও, যে সম্প্রদায় একটা মহামারীর কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে….কেবলই ভোটব্যাংক নাকি এটাও একটা বামঐসলামিক গজবা – এ- হিন্দের সূক্ষ্ম পদক্ষেপ? হিন্দুদের থেকে টাকা নিয়ে রোজার চাল খাওয়া কি হারাম নয় ?
সোশ্যাল মিডিয়া তামিলনাড়ু সরকারকে নিরাশ করে নি। বিশেষতসুকৌশলে মন্দির লুট করার বিষয় টি যখন এত ভয়াবহ ভাবে সামনে এসেছিল।
যদিও সরকার মন্দির থেকে নগদ অর্থ আদায় করতে পারে, খ্রিস্টান, মুসলমান বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের থেকে সেই অর্থ আদায় করতে পারে না। এটির কারণ গীর্জা, মসজিদ ইত্যাদি গুলি সরকারের অধীনে আসে না এবং এ জাতীয় স্থানগুলি কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে তাদের নির্দেশ দেওয়ার কোনও অধিকার সরকারের নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ধর্মীয় স্থান পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হ’ল সংবিধান দ্বারা হিন্দু মন্দিরগুলিতে এই জাতীয় লুটপাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলি তাদের উপাসনাস্থলগুলি সরকার থেকে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা উপভোগ করে।
উক্ত সাংবিধানিক নিয়মটি আমাদের পরাধীন ভারতের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সময় ব্রিটিশরা যখন যে মন্দির ইচ্ছে হতো উক্ত রূপে অধিগ্রহণ করত। মাদ্রাজ হিন্দু ধর্মীয় ও অনুদান আইন ১৯২৭-এ প্রাথমিকভাবে মুসলিম ও খ্রিস্টানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল, তবে, বিক্ষোভের পরে, তাদেরকে এই বিধিমালার আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্য প্রযোজ্য মন্দিরগুলির উপর সরকার নিয়ন্ত্রণ তৈরি করা হয়েছিল।
তামিলনাড়ু সরকারের সাম্প্রতিক কাজটি সমস্ত হিন্দুদের জাগ্রত হবার আহ্বান হিসাবে কাজ করা উচিত। যাতে হিন্দুরা তাদের মন্দিরের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে এবং তাদের পূর্বের গৌরব ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় করে….
প্রসঙ্গত , আজ আজ ইন্ডিক কালেক্টিভের (Indic Collective) চেয়ারম্যান টিআর রমেশ মাদ্রাজ (TR Ramesh Madras) হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা প্রেরণের জন্য তামিলনাড়ুর সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা জিতেছেন। কেবলমাত্র তাই নয়, তামিলনাড়ু এইচআরসিইয়ের ২০০০০মন্দির কর্মীরা গত ২ মাস ধরে বেতন পায় নি সেই বিষয়টিও উত্থাপিত হয়েছে।