নকল হতে সাবধান—অতি পরিচিত এই বাক্যবন্ধটা এখন আপেক্ষিক। আমাদের সমাজে আসলে-নকলে গলাগলি সর্বক্ষণের। স্বঘোষিত সাধু, বাবা এবং সর্বোপরি বাপুদের নানা ঘৃণ্য অপরাধের অভিযোগে দেশজুড়ে বিভ্রান্তির বাতাবরণটা এতটাই বেড়ে উঠেছে যে, কে প্রকৃত ধার্মিক আর কেই বা অধার্মিক, সেই ভেদাভেদটা বড়ই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ডেরা সচ্চা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিমের মতো সেলিব্রিটি বাবারাও ধর্ষণের অভিযোগে জড়িয়েছেন। নাবালিকা ধর্ষণে অভিযুক্ত আসারাম বাপুর কেচ্ছার আখ্যান লিখেও শেষ করা যাবে না। দক্ষিণের এক অভিনেত্রীকে নিয়ে নিত্যানন্দ পরমহংসের সেক্স ভিডিও তৈরির কেচ্ছা এখনও যথেষ্ট ‘হট টপিক’। হরিয়ানার পঞ্চকুলাতে বছর কয়েক আগে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত কবিরপন্থী বাবা রামপালের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল।
পুরো একটি দিন পুলিশের সঙ্গে সমানে টক্কর দেয় রামপালের সমর্থকরা। হায়দরাবাদে তরুণী পশু চিকিৎসকের গণধর্ষণ ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত চার যুবকের পুলিশি এনকাউন্টারে মৃত্যু নিয়ে সারা দেশে যখন তর্ক-বিতর্কের আগুন জ্বলছে, তখন স্বভাবতই এই প্রশ্ন উঠেছে ধর্ষণ ও যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত প্রভাবশালী এই ধর্মগুরুরাই বা কঠিন শাস্তি থেকে বাদ পড়লেন কেন! ভারতের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ‘বাবা’ অথবা ‘বাপু’ অথবা ‘গডম্যান’রা বরাবরই খুব ক্ষমতাশালী। তাই কি তাঁদের শাস্তির প্রক্রিয়া এত বিলম্বিত?
আসারাম-রাম রহিম-নারায়ণ-রামপাল থেকে নিত্যানন্দ—সাম্প্রতিককালের এমনই কিছু গডম্যানদের অধ্যাত্মিক মোড়কের আড়ালে কালো কুৎসিত মুখটা চলুন দেখেনি।
আসারাম বাপু
‘ঈশ্বরের বার্তাবাহক’বা ’উদ্ধারক’—নিজের এই পরিচয়ই দিয়েছিলেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু। লাইমলাইটে আসেন ১৯৭০ সালে। ‘মহাজ্ঞানী’ পুরুষ হিসেবে নাম ছড়াতে শুরু করে গোটা দেশে। ভক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় কয়েক হাজারে। দেশে-বিদেশে প্রায় চারশো আশ্রম তৈরি করে ভক্তদের মনে পাকাপাকি একটা জায়গা তৈরি করে ফেলেন আসারাম। এমন ‘ধার্মিক’ সাধুর গায়ে ভণ্ডের তকমা লাগে ২০১৩ সালে। ইনদওরে নিজের আশ্রমে দুই নাবালিকা বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ৭১ বছরের ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে।
তোলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে। দেশের অন্যান্য জায়গায় আসারামের তৈরি আশ্রম থেকেও একের পর এক যৌন কেলেঙ্কারির খবর সামনে আসে। আসারামের এক ঘনিষ্ঠ শিষ্যই সাক্ষী দেন, ২০০৩ সালে পুষ্কর, ভিওয়ানি আর আহমেদাবাদের তিনটি আশ্রমে মেয়েদের যৌন নির্যাতন হতে দেখেছিলেন তিনি। এ সব কাজে আসারামকে নাকি আশ্রমেরই তিন মহিলা ভক্ত সাহায্য করতেন। ধর্ষণের ফলে কোনও মহিলা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে আসারাম ঘনিষ্ঠ ওই তিন মহিলাই নাকি গর্ভপাতের ব্যবস্থাও করতেন।
১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সুরাত ও আহমেদাবাদের আশ্রমে দুই নাবালিকা বোনকে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আসারামের বিরুদ্ধে। ওই দুই নাবালিকার পরিবার দাবি করে, নারকীয় নির্যাতন চালানো হয়েছিল তাঁদের মেয়েদের উপর। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আসারাম বাপুকে ধর্ষণ, আশ্রমের মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন-সহ একাধিক অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসারামের বিরুদ্ধে চার্জশিটে তার স্ত্রী লক্ষ্মীবেন, কন্যা ভারতী এবং ধ্রুভবেন, নির্মলা, জস্সি ও মীরা নামের চার শিষ্যার বিরুদ্ধে ধর্ষণে মদত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
মামলা চলাকালীন খুন হন এই মামলার দুই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী অখিল গুপ্ত এবং অম্রুত প্রজাপতি। দীর্ঘ শুনানির পর নাবালিকা ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হন আসারাম বাপু। গত বছর এপ্রিলে আসারামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায় যোধপুরের একটি আদালত।
সন্ত রামপাল
নিজেকে সন্ত কবীরের অবতার মনে করতেন রামপাল। ভক্তদের কাছে ছিলেন ‘ঈশ্বরের দূত।’ রামপাল প্রথম নজরে আসেন ২০০৬ সালে। বৈদিক ধর্ম অন্যান্য মতবাদের উপর মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর রচনা ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ কাব্যগ্রন্থের বিরোধিতা করলে রামপালের বিরুদ্ধে সরব হয় আর্য সমাজ। হরিয়ানার কারোন্থায় রামপালের ‘সৎলোক আশ্রম’-এ ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযোগ ওঠে আর্য সমাজের এক সদস্যকে খুন করেছেন রামপাল ও তাঁর ভক্তেরা। গ্রেফতার করা হয় রামপালকে। ২০০৮ সালে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের আধ্যাত্মিক কারবারে মন দেন রামপাল। ২০১৪ সালে ফের একবার লাইমলাইটে চলে আসেন তিনি। অভিযোগ ওঠে আশ্রমের সাধিকাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রয়েছে রামপালের।
ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে হরিয়ানার সন্ত রামপালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিয়মিতই তিনি শয্যাসঙ্গিনী বদল করতেন বলে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে। রামলালকে গ্রেফতার করতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় হরিয়ানা পুলিশকে। প্রায় দু’সপ্তাহ পুলিশ ও ধর্মগুরুর অনুরাগীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। মৃত্যু হয় ৬ জনের। দাঙ্গা, অবৈধ জমায়েত, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও সরকারি কাজে বাধাদানের জন্য রামপাল ও তাঁর ভক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ।
গুরমিত রাম রহিম সিং
গুরমিত রাম রহিম ওরফে বাবা রাম রহিম নিজেকে ‘ঈশ্বরের বার্তাবাহক’ বা ‘ঈশ্বরের দূত’ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। রমরমিয়ে চলছিল ‘আধ্যাত্মিক’ কারবার। কিন্তু বাধ সাধল সেই একই ধর্ষণের অভিযোগ। বহু রকম ভাবে মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে এক ভয়ঙ্কর দিন দেখতে হয়েছিল। গুরমিত রাম রহিম সিংহকে আদালত অপরাধী সাব্যস্ত করতেই তীব্র হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল। রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল নেমেছিল। বিপুল অঙ্কের সম্পত্তিহানি হয়েছিল। এর পর রোহতক জেলে বসে আদালতের বিশেষ সেশন। সেখানে ২০ বছরের কারাদণ্ড হয় গুরমিতের।
শুধু ধর্ষণ নয়, সিরসার এক সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতিকে খুনের অভিযোগও ওঠে রাম রহিমের বিরুদ্ধে। সাংবাদিক দেখিয়েছিলেন ‘বাবা’র ডেরা সচ্চা সৌদাতে ধর্মীয় কাজ নয় বরং রমরম করে চলে মধুচক্র। দিনের পর দিন যৌন নিপীড়ণ করা হয় মহিলা ভক্তদের। নিজের পত্রিকা ‘পুরা সচ’-এ গুরমিতের কীর্তি ফাঁস করেই কোপে পড়েন ওই সাংবাদিক। এই তদন্তের ভার গিয়েছিল সিবিআইয়ের হাতে। বাবার ডেরায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে একের পর এক চমক পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। বাবার অট্টালিকায় আসবাবের বহর দেখে চোখ কপালে উঠেছিল। সেলিব্রিটি বাবার অট্টালিকা থেকে গোপন সুড়ঙ্গ চলে গিয়েছিল সাধ্বীদের হোস্টেলে। প্রতিরাতে সেই সুড়ঙ্গপথে মহিলাদের পাঠানো হত বাবার যৌন লালসা শান্ত করার জন্য। অভিযোগ আরও উঠেছিল যে, আশ্রমের পুরুষ ভক্তদের নাকি জোর করে নির্বীজকরণ করাতেন বাবা। ডেরার প্রায় ৪০০ ভক্তকে জোর করে নির্বীজকরণ করানোর অভিযোগ উঠেছিল।
স্বামী প্রেমানন্দ
শ্রীলঙ্কার বাসিন্দা। নিজের ভক্তদের নিয়ে ভারতে ডেরা বাঁধেন ১৯৮৪ সালে। এক সময় তামিলনাড়ুতে এই স্বঘোষিত বাবার প্রতাপ মারাত্মক আকার নিয়েছিল। শয়ে শয়ে ভক্ত, রাজনৈতিক-সামাজিক সব স্তরে বিপুল প্রতিপত্তি। ধাক্কাটা আসে ১৯৯৪ সালে। বাবারই এক শিষ্যা আরুল জ্যোতি অভিযোগ করেন, আশ্রমে মহিলাদের উপর নারকীয় নির্যাতন চালান স্বামী প্রেমানন্দ। তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বছরের পর বছর। তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গর্ভপাতও করানো হয়। আশ্রমের সেবিকারা যাতে মুখ বন্ধ রাখতে পারেন, তাই তাঁদের আশ্রমের গোপন কুঠুরিতে বন্ধ করে রাখা হয়।
১৩ জন শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল স্বামী প্রেমানন্দের বিরুদ্ধে। নাবালিকাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ অজস্র। সাক্ষ্য লোপাটের জন্য নিজের আশ্রমের এক ভক্তকে খুনের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
স্বামী অমৃত চৈতন্য
১৯৯৩ সালে মুম্বই হামলার সময় অস্ত্র রাখার অভিযোগ ওঠে সন্তোষ মহাধাভনের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় পার পেয়ে যান তিনি। জ্যোতিষবিদ হিসেবে পরিচয় হয় পরবর্তী কালে। সন্তোষ মহাধাভন হয়ে ওঠেন স্বামী অমৃত চৈতন্য। কেরলের ইদ্দুকি জেলার মুন্নারে প্রায় ২৫ কোটি টাকার জমি ও সম্পত্তি নিয়ে আশ্রম খুলে আধ্যাত্মিক কারবার শুরু করেন স্বামী অমৃত চৈতন্য। তাঁর আশ্রমে বেআইনি কাজকারবার হয় এমন অভিযোগ আগেই উঠেছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, হাওয়ালা মারফত বিদেশ থেকে টাকা আসে এই স্বঘোষিত ধর্মগুরুর কাছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে তাঁর নিত্য যাতায়াত আছে বলে কানাঘুষোও শুরু হয়। ২০০৯ সাল। নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে স্বামী অমৃত চৈতন্যের আশ্রম। অভিযোগ ওঠে, দুই নাবালিকাকে আশ্রমে পড়াশোনা করানোর নামে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছেন ওই ধর্মগুরু। আশ্রমে তল্লাশি চালাতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যায় পুলিশ। বাবার ঘর থেকেই উদ্ধার করে একাধিক শিশু পর্নোগ্রাফির ভিডিও ও আনুষঙ্গিক নানা আপত্তিকর জিনিস। আশ্রমের কয়েকজন ভক্ত জেরায় স্বীকার করে, কিশোরীদের নিজের ঘরে ডেকে পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখাতেন বাবা। তারপর তাদের উপর যৌন নির্যাতন চালান হত।
বাবা পরমানন্দ
যৌন নির্যাতনের দায়ে উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকির পুলিশ গ্রেফতার করে রাম শঙ্কর তিওয়ারি ওরফে বাবা পরমানন্দকে। অভিযোগ, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার নামে মহিলাদের উপর যৌন নিপীড়ন চালাতেন তিনি। তাঁর বারাবাঁকির আশ্রমে তল্লাসি চালিয়ে পর্ন মুভির সিডি, মহিলাদের অশ্লীল ভিডিও এবং অশ্লীল পত্রপত্রিকা উদ্ধার করে পুলিশ। বারাবাঁকির হরাই আশ্রম থেকে বাবা পরমানন্দকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার সহকারী অরবিন্দ পাঠককেও গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ দাবি করে, নিঃসন্তান মহিলাদের সন্তানপ্রাপ্তির আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ করতেন ওই বাবা। একশোরও বেশি মহিলার উপর যৌন নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আরও ছিল, ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও করে রাখতেন বাবার শিষ্যরা। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হত মহিলাদের।
সন্ত স্বামী ভীমানন্দজী মহারাজ
আসল নাম শিব মুরাত দ্বিবেদী। ভক্তদের কাছে ছিলেন ইচ্ছাধারী সন্ত স্বামী ভীমানন্দ। দিল্লি ও মুম্বইয়ের একাধিক জায়গায় আশ্রম এবং সেখানে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগ ওঠে স্বামী ভীমানন্দের বিরুদ্ধে। মেয়ে পাচার, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ-সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ১৯৯৭ সালে নারী পাচার ও দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা যায়, উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূটের বাসিন্দা শিব মুরাত দিল্লির একটি পাঁচতারা হোটেলে নিরাপত্তরক্ষীর কাজ করতেন। পরে লাজপত নগরে একটি ম্যাসাজ পার্লারে কাজ শুরু করেন। সেখানেও মধুচক্র চালানোর অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁকে। জামিনে ছাড়া পেয়ে নাম বদলে আশ্রম খুলে বসেন। নতুন করে শুরু হয় দেহব্যবসার কাজ।
স্বামী গঙ্গেশানন্দ
কেরলের কোল্লামের পনমনা আশ্রমের স্বামী গঙ্গেশানন্দ ওরফে হরি স্বামীর মুখোশ খুলে যায় ২০১৭ সালে। ধর্মগুরুর যৌনাঙ্গ কেটে নিয়েছিলেন এক তরুণী। ২৩ বছরের ওই আইনের ছাত্রীর অভিযোগ ছিল, তাঁর বাবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। তাঁকে সারিয়ে তুলতে স্বামী গঙ্গেশানন্দের শরণাপন্ন হন তাঁর মা। রোগ সারিয়ে তোলার নামে ওই ‘বাবা’ প্রায়ই তাঁদের বাড়িতে আসতেন। গত আট বছর ধরে তাঁকে বিভিন্ন সময় হরি স্বামী ধর্ষণ করেছেন। তাঁর যখন ১৬ বছর বয়স, তখনই প্রথম বার এই স্বঘোষিত গুরুর ধর্ষণের শিকার হতে হয় তাঁকে। বছরের পর বছর এই যন্ত্রণা আর সইতে না পেরে একদিন গর্জে ওঠেন তরুণী। হরি স্বামী ফের তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে ধারালো ছুরি দিয়ে তাঁর যৌনাঙ্গ ছিন্ন করে দেন তরুণী।
স্বামী বিকাশানন্দ
জব্বলপুরের বেশ প্রভাবশালী ধর্মগুরু বিকাশ জোশী ওরফে স্বামী বিকাশানন্দ। যৌন নির্যাতন, পর্ন সিনেমা বানানো-সহ একাধিক অভিযোগে ২০০৬ সালে ধরা পড়েন তিনি। ২০১৬ সালে জব্বলপুরের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। এখনও তিনি জেলেই রয়েছেন।
স্বামী নিত্যানন্দ
নিত্যানন্দ নিজেকে তামিলনাড়ুর মাদুরাই অধিনাম মঠের প্রধান বলে দাবি করেন। অপহরণ, যৌন কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ আছে নিত্যাননন্দের বিরুদ্ধে।
২০১০ সালের এপ্রিল মাসে হিমাচল প্রদেশের সিমলার ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম থেকে যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল নিত্যানন্দকে। গত বছর জুন মাসেও কর্ণাটকের গডম্যান স্বামী নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে চার্জ গঠিত হয়েছিল। অপহরণ ও আমদাবাদের শিশুদের বেআইনি ভাবে আটকে রাখার অভিযোগও উঠেছে তাঁর ও তাঁর কয়েক জন অনুগামীর বিরুদ্ধে। সেই সূত্রে প্রাণপ্রিয়া ও প্রিয়তত্ত্ব নামের দুই মহিলাকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এক তামিল নায়িকার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ভিডিও সামনে আসায় তাঁকে নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়।
জনার্দন শর্মা নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী গুজরাত হাইকোর্টে অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে তাঁদের চার মেয়েকে ভর্তি করেছিলেন নিত্যানন্দর বেঙ্গালুরুর শিক্ষায়তনে। তখন তাদের বয়স ছিল সাত থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। পরে তাঁরা শুনতে পান, মেয়েদের বেঙ্গালুরু থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা নাকি এখন আমদাবাদে যোগিনী সর্বজ্ঞপীঠম নামে এক শিক্ষায়তনে আছে। একথা শুনে তাঁরা মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমেদাবাদের শিক্ষায়তনের কর্মকর্তারা দেখা করতে দেননি। পরে পুলিশের সাহায্যে তাঁরা দুই নাবালিকা কন্যাকে ফেরত পান। কিন্তু বড় দুই মেয়ে তাঁদের সঙ্গে আসেনি। তাদের এক জনের নাম লোপামুদ্রা (২১), অপর জনের নাম নন্দিতা (১৮)। গুজরাত হাইকোর্টে ওই দম্পতির অভিযোগ, লোপামুদ্রা ও নন্দিতাকে আশ্রম কর্তৃপক্ষ দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আটকে রেখেছে। এমনকি তাঁদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগও ওঠে। এই তদন্ত শুরু পরেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান নিত্যানন্দ। শোনা যাচ্ছে, ইকুয়েডরের কাছে একটা দ্বীপ কিনে নিত্যানন্দ তার নাম দিয়েছেন ‘কৈলাস।’ সেখানেই নতুন করে আশ্রম ফেঁদে বসেছেন তিনি।