করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই আত্মনির্ভরতার ছিল : প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারত এবার জয়লাভের পথে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভারতে সূচনা হয়ে গেলে করোনাভাইরাসের টিকাকরণ অভিযান। শনিবার সকাল ১০.৩০ মিনিট নাগাদ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকাকরণ অভিযানের সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টিকাকরণ অভিযানের সূচনালগ্নে সমস্ত দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ”বিগত কয়েক মাস ধরে দেশের প্রতিটি শিশু, বৃদ্ধ, যুবক সকলেই জিজ্ঞাসা করছিলেন কবে থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, ভ্যাকসিন এখন এসে গিয়েছে। এই দিনের অপেক্ষাতেই ছিলেন সমগ্র দেশবাসী। দেশের সমস্ত নাগরিককে অভিনন্দন। স্বাভাবিকভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করতে অনেক বছর লাগে, কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে শুধুমাত্র একটি নয়, দু’টি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ভ্যাকসিন তৈরির কাজও দ্রুততার সঙ্গে চলছে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের টিকাকরণ অভিযান অত্যন্ত মানবিক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। যাঁদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন, তাঁদের সর্বাগ্রে করোনা-টিকা দেওয়া হবে। আমি এই কথা ফের মনে করিয়ে দিতে চাই, করোনা-ভ্যাকসিনের দুই ডোজ ভীষণ জরুরি। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মাঝে, প্রায় এক মাসের অন্তরাল থাকবে। দ্বিতীয় ডোজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর আপনার শরীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি বিকশিত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী এদিন জানান, “ভারতের ইতিহাসে এত বড় স্তরে টিকাকরণ অভিযান এর আগে কখনও হয়নি। বিশ্বের ১০০-রও বেশি দেশের জনসংখ্যা ৩ কোটিরও কম। আর ভারত টিকাকরণ অভিযানের প্রথম দফাতেই ৩ কোটি মানুষকে টিকা দেবে। দ্বিতীয় দফায় এই সংখ্যা ৩০ কোটিতে নিয়ে যেতে হবে। যাঁরা বৃদ্ধ, গুরুতর রোগে ভুগছেন, তাঁদের দ্বিতীয় দফায় টিকা দেওয়া হবে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, বিশ্বে ৩০ কোটির বেশি জনসংখ্যার মূলত তিনটি দেশ-ভারত, চিন ও আমেরিকা।” জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য অনুমোদন পেয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ এবং ভারতীয় সংস্থা ভারত বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাক্সিন’। এই দু’টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ”আমাদের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা যখন দু’টি মেড ইন ইন্ডিয়া ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ও প্রভাব সম্পর্কে আশ্বস্ত হন, তখনই জরুরীকালীন ভিত্তিতে প্রয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এজন্য গুজব থেকে দূরে থাকা উচিত দেশবাসীর। ভারতের ভ্যাকসিন বিজ্ঞানী, আমাদের মেডিক্যাল সিস্টেম, ভারতীয় যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে গোটা বিশ্বে বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে।”প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “করোনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আত্মবিশ্বাস এবং আত্মনির্ভরতার ছিল। এই কঠিন লড়াইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমরা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করিনি, এমন মনোভাব সমস্ত দেশবাসীর মধ্যে দেখা গিয়েছে। ভারতীয় ভ্যাকসিন বিদেশী ভ্যাকসিনের তুলনায় অনেক সস্তা এবং প্রয়োগও সহজ। বিদেশে তো কিছু ভ্যাকসিনের একটি ডোজের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং যা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফ্রিজে রাখতে হয়। এই দু’টি ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতকে জয়ী করবে।” দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সঙ্কট যত বড় হোক না কেন, দেশবাসী কখনওই নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারাননি। ভারতে যখন করোনা এসেছিল তখন দেশে করোনা-টেস্টিংয়ের একটি পরীক্ষাগার ছিল। নিজেদের সামর্থ ও বিশ্বাসে বর্তমানে দেশে ২,৩০০-রও বেশি নেটওয়ার্ক আমাদের কাছে রয়েছে। ২৪ ঘন্টা সতর্ক থেকে, সমস্ত ঘটনার দিকে নজর রেখে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ৩০ জানুয়ারি ভারতে করোনার প্রথম আক্রান্ত রোগী মিলেছিল, তারপর দু’সপ্তাহের মধ্যে ভারতে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। জনতা কারফিউ, করোনার বিরুদ্ধে আমাদের সমাজের সংযম ও অনুশাসনের পরীক্ষা ছিল, যাতে দেশবাসী সফল হয়েছিলেন। জনতা কারফিউ মনস্তাত্ত্বিকভাবে দেশবাসীকে লকডাউনের জন্য প্রস্তুত করেছিল। ভারতে করোনার বিরুদ্ধে যেভাবে লড়াই করেছে, গোটা বিশ্ব তা মেনে নিয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, স্থানীয় সংস্থা, সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান কীভাবে একত্রে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, গোটা বিশ্বকে তা দেখিয়ে দিয়েছে ভারত। ভারত ভ্যাকসিন তৈরি করার পর নতুন আশা নিয়ে ভারতের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে বিশ্ব।”চিকিৎসক, পুলিশি-সহ ফ্রন্টলাইন কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকেল স্টাফ, এম্বুলেন্স চালক, আশা কর্মী, সাফাই কর্মী, পুলিশ কর্মী এবং ফ্রন্টলাইন কর্মীরা মানবতার প্রতি নিজেদের দায়িত্ব অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সেই সময় নিজেদের সন্তান, পরিবারের থেকে দূরে ছিলেন।’ টিকাকরণ অভিযান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টিকাকরণ অভিযান এখন অনেক দিন পর্যন্ত চলবে। টিকা এসে গিয়েছে মানে এই নয় যে, এবার থেকে সুরক্ষার সঙ্গে খামখেয়ালিপনা করা হবে। এখন আমাদের নতুন ব্রত নিতে হবে-ওষুধও, কঠোরতাও।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.