নুন আনতে পান্তা ফুরোনো বা পাঁচতারা হোটেলের গরম স্যুপে আমেজি চুমুক, যেখানেই আপনি অভ্যস্ত হোন না কেন, নুন তো দৈনন্দিন চাহিদার মধ্যে পড়ে। এই নুনই বিষ হয়ে আপনার শরীরের ঢুকছে, আপনি টেরও পাচ্ছেন না। মঙ্গলবারই মুম্বইয়ের একজন সমাজকর্মী এ বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। আমেরিকার একটি ল্যাবে সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা ভারতীয়রা যে ব্র্যাণ্ডেড নুন রোজ খাই, তাতে মারাত্মকভাবে কার্সিনোজেন, পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইডের মতো বিষাক্ত মারণ যৌগ রয়েছে।
গোধাম গ্রেন অ্যাণ্ড এএমপির চেয়ারম্যান শিবশক্তি গুপ্তা বলছেন, আমেরিকান ওয়েস্ট অ্যানালিটিকাল ল্যাবরেটরি যে পরীক্ষা করেছে, তাতে বলা হচ্ছে সম্বর রিফাইনড নুনে এক কেজিতে ৪.৭১ মিলিগ্রাম, টাটা নুনে এক কেজিতে ১.৮৫ গ্রাম এবং টাটা সল্ট লাইটে এক কেজিতে ১.৯০ গ্রাম করে পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড রয়েছে। যা দিন দিন মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশুদ্ধ নুন মানুষ খাবেন, এই সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন শিবশক্তি গুপ্তা। কিন্তু বাস্তব ব্যবস্থা দেখে তাঁর মাথায় হাত। তিনি বলছেন, “দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সরকার এবং অসাধু নুন ব্যবসায়ীদের জন্য সাধারণ মানুষ মরছেন রোজরোজ। বিশুদ্ধ নুনের মোড়কের বিজ্ঞাপনের আড়ালে নুনে থাকা এই বিষাক্ত যৌগগুলো ছাড়পত্রও পাচ্ছে বাজারে। শুধু নুন কেন, যে কোনও খাবারের ক্ষেত্রেই এই পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইড থাকা ঠিক না। তাঁর মতে যেসব রাঘব বোয়ালরা নুন উৎপাদন শিল্পের সাথে যুক্ত, তারা অন্য শিল্প থেকে বর্জ্য হিসেবে যে বিপজ্জনক আয়োডিন এবং সায়ানাইড আসছে, সেগুলোকে রিপ্যাকেজ করে প্যাকেটজাত বিশুদ্ধ নুন হিসেবে বাজারে বিক্রি করছে! আর এগুলো থেকে ক্যান্সার, হাইপারথাইরয়েডিজ়ম, উচ্চরক্তচাপ, ওবেসিটি, কিডনির অসুখ ইত্যাদি নানা সমস্যা বেড়ে চলেছে। ”
যে কোম্পানিগুলো এই নুন বাজারে এনেছে, তাদের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে, নইলে মানুষ মারা পড়বে। তাঁর মতে নুনে তো এমনিতেই আয়োডিন থাকে, তাহলে আর আলাদা করে বাইরে থেকে আয়োডিন মিশিয়ে বেশি বেশি শুদ্ধতার বিজ্ঞাপন করে মানুষের মারণকল তৈরি করার কী দরকার! তিনি বলেন, দেশের প্রাকৃতিক লবণ শিল্প – গুজরাটের কচ্ছ, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান জুড়ে রয়েছে। কিন্তু দিনের পর দিন সেখানকার সরকারের উদাসীনতায় এবং অবহেলায় ‘আয়োডাইজ়ড সল্ট’ তৈরি করা হচ্ছে সেখানে। এতে নুন শিল্পের রাঘব বোয়াল এবং সেই রাজ্যের সরকার ছাড়া আর কোনও লাভ কারোরই হচ্ছে না।
গুপ্তা আরও যোগ করেন, “স্বাধীন ভারতের ক্ষেত্রে যেসব স্ক্যাম বা দুর্নীতির কথা শোনা যায়, আমি বলব এই লবণ দুর্নীতি তার মধ্যে অন্যতম। কারণ প্রাকৃতিকভাবে যে জায়গাগুলোতে এত স্বাস্থ্যসম্মত নুন পাওয়া যেত, সেই জায়গাগুলোতে শুধুমাত্র নিজেদের পকেট ভরাতে টাকার কুমীররা কার্যত গলা টিপে খুন করেছে এই শিল্পকে, তার সাথেই মারা গেছেন এই শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকরাও। ” তিনি আরো বলছেন, সরকার ও ব্যবসায়ীদের মিলিত শোষণ হয়ে চলেছে এই শিল্পে। প্রচুর দাম দিয়ে রাসায়নিক এই নুন কিনে বাড়ি ফিরছেন ভোক্তারা। ফলে মার খাচ্ছে সমগ্র এই শিল্প আর ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
সরাকার কী করে এই বাজে মানের নুনগুলো বাজারে ছাড়ছে , তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট থেকে জানা যাচ্ছে কোনও নুনের কোম্পানিই নুনের মান ঠিক করে পরীক্ষা করায় না FSSAI বা ফুড সেফটি অ্যাণ্ড স্ট্যাণ্ডার্ডস অথরিটি অফ ইণ্ডিয়ার কাছে। এমনকি এ বিযয়ে কোনও লাইসেন্সের আবেদনও করা হয় না। দেশের যে ল্যাবগুলোতে খাদ্যের গুণমান পরীক্ষা করা হয় সেগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিও তথৈবচ! তাই সেখানে নুনে থাকা সায়ানাইডের পরিমাণও তো পরিমাপ করা যায় না। তারপরেও বাজার থেকে ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে এই নুনই!
নুন কোম্পানিগুলো এই অভিযোগের ব্যাপারে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। জানালে আমরা এই খবরে আপডেট করে দেব।