মাসুদ আজহারের ভাই মুফতি আবদুর রউফ ও ছেলে হাম্মাদ আজহারকে মঙ্গলবার আটক করল পাক কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আটক করা হল আরও ৪২ জইশ জঙ্গিকে।
কিন্তু সেই আটকের খবর ঘোষণা করলেন কে?
পাক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা তহরিক ই পাকিস্তানের নেতা শহরিয়ার খান আফ্রিদি। যিনি পাকিস্তানে নির্বাচনের আগে খোলা মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন, “তহরিক ই পাকিস্তান ক্ষমতায় থাকলে কৌই মাই কা লালের ক্ষমতা নেই জেহাদিদের অনিষ্ট করবে।”
এর পরেও কি ইসলামাবাদের পদক্ষেপকে বিশ্বাস করতে পারে নয়াদিল্লি!
না। করছে না। বরং সাউথ ব্লকের কর্তারা, মনে করছেন, জঙ্গিদের নিরাপত্তা দিতেই ‘আটক’ নামক নাটকটি করা হচ্ছে। ইসলামাবাদের ভয় রয়েছে ওদের নিরাপত্তা রয়েছে। ইমরান প্রশাসনের এও আশঙ্কা রয়েছে, মাসুদের পরিবারের উপর হামলা হলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও মৌলবাদী শক্তি নাশকতা ঘটাতে পারে। তাই এই পদক্ষেপ করল।
অতীতে ২০০৮ সালে মুম্বই সন্ত্রাসের পরেও এই নাটক করেছিল ইসলামাবাদ। আমেরিকা তথা আন্তর্জাতিক কূটনীতির চাপে পড়ে লস্কর ই তৈবা নেতা হাফিজ সঈদকে গৃহবন্দী করেছিল। তার পর যে কে সেই। কয়েক সপ্তাহে বাদেই ছাড়া পেয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে ওই লস্কর নেতা।
বস্তুত পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর থেকেই কৌশলগত ভাবে সাদা পায়রা ওড়ানোর চেষ্টা করছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি এমন একটি ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাইছেন যে ইসলামাবাদ শান্তির পক্ষে, আলোচনার পক্ষে এবং নয়াদিল্লিই খুঁচিয়ে ক্ষত তৈরি করতে চাইছে। এমনকি গতকাল সোমবার পাক মিডিয়ার কর্তা ব্যক্তিদের তাঁর বাসভবনে ডেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে ‘অফ রেকর্ড ব্যাকগ্রাউন্ড ব্রিফিং দিয়েছেন ইমরান’। পাক প্রধানমন্ত্রী নাকি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁর জমানায় এ হল ‘নয়া পাকিস্তান’। যে পাকিস্তান এ বার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে প্রস্তুত।
কিন্তু সে কথা শুনে নয়াদিল্লির কূটনীতিকরা ঘরোয়া আলোচনায় পাল্টা কটাক্ষ করছেন। তাঁরা বলছেন, নয়া পাকিস্তান এ বার নয়া অ্যাকশন করে দেখা যাক। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি শিবিরগুলি ভেঙে দেখাক। তবে বোঝা যাবে পাঠানের দম আছে।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামায় হামলার ঘটনার পর ইসলামাবাদকে ভারত যে ডসিয়ার দিয়েছিল তাতে নাম ছিল রউফ ও হাম্মাদের। তবে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র সচিব আজম সুলেমান খান অবশ্য এ দিন বলেন, এমন নয় যে ওই ডসিয়ারের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে বেশ কিছু সময় ধরেই ব্যবস্থা নিচ্ছিল। এই প্রক্রিয়া অব্যহত থাকবে।
কূটনীতিকদের অনেকের মতে, এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলেও ইমরান প্রশাসন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন ঠিকই। বিশেষ করে জইশ ই মহম্মদ চিফ মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জে যখন প্রস্তাব পেশ হয়েছে, তখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা সেখানেও দিতে চাইছে ইসলামাবাদ। তবে বাস্তব হল, ইসলামাবাদের এই পদক্ষেপে নয়াদিল্লি, প্যারিস, ব্রিটেন বা ওয়াশিংটনও খুশি নয়। নয়াদিল্লির তরফে কূটনৈতিক স্তরে এই সব শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গেও দৌত্য চালানো হচ্ছে। যাতে ‘মিনিংফুল অ্যাকশন’ তথা সদর্থক পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয় ইসলামাবাদ।