বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনা জঙ্গি ঘাঁটি ভাঙার কয়েক ঘন্টা পরই জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা কমানোর পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেছিলেন, ইসলামাবাদ যুদ্ধের পক্ষে নয়। আলোচনার পক্ষে। সেই সঙ্গে ইমরান এও দাবি করেন, তিনি নাকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মোদী তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাননি।
উত্তেজনার পরিস্থিতিতে সে দিন নয়াদিল্লি ইমরানের বক্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কিন্তু সরকারের শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে সাউথ ব্লকে কোনও ফোন আসেনি ইসলামাবাদ থেকে। সাউথ ব্লকের কর্তাদের কথায়, এ ধরণের পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লিতে পাক মিশনের তরফে আগে বিদেশ মন্ত্রকে বা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার পর ফোন লাইন কানেক্ট করা হয় দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে। কিন্তু সে দিন তেমন কোনও প্রস্তাব ইসলামাবাদ বা নয়াদিল্লির পাক মিশনের তরফে আসেনি।
বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকদের কথায়, ইমরান আসলে তাঁর নিজের সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করতে চাইছেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যখন জঙ্গি দমনে কঠোর বার্তা দিচ্ছেন, তখন ইমরান কৌশলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে নিজেকে শান্তির দূত হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন। সে কারণেই সে দিন মিথ্যা দাবি করেছিলেন যে, তিনি মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সাড়া পাননি।
ভারতীয় কূটনীতিকদের কথায়, ইমরান আসলে শান্তির মুখোশ পরে রয়েছেন। এমনিতেই তিনি রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল। পাক সেনাবাহিনীর কৃপায় সরকার চালাচ্ছেন। ফলে সে দেশের জেহাদি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করার ক্ষমতাই নেই তাঁর। মাসুদ আজহারের ভাই সহ মঙ্গলবার জইশের যে চল্লিশ জন জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে, তাও স্রেফ লোক দেখানো। আমেরিকা, সৌদি আরব, ইরান সহ দেশগুলির চাপে সেই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু নয়াদিল্লি চায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি ভাঙুক ইসলামাবাদ। ইমরান কেন গোটা বিশ্ব জানে, ওগুলি ভারত বিরোধী সন্ত্রাসের আঁতুরঘর। ফলে সে ধরনের কোনও পদক্ষেপ না করলে নয়াদিল্লি কোনও ভাবেই সন্তুষ্ট হবে না।
সাউথ ব্লক সূত্রে এ দিন আরও একবার জানিয়ে দেওয়া হয়, নয়াদিল্লি সবরকম ভাবে প্রস্তুত থাকছে। এবং এ ব্যাপারে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ সমস্ত শক্তিধর রাষ্ট্রগুলিকে ডশিয়ার দিয়ে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে যে, ফের কোনও সন্ত্রাসবাদী বা জঙ্গি কার্যকলাপ হলে তার জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত। এ ব্যাপারে কোনও চ্যূতি হবে না।
সূত্রের খবর, ওয়াশিংটনকে নয়াদিল্লির তরফে এও জানানো হয়েছে যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সামরিক হামলা চালিয়েছিল। যে হেতু ভারতীয় বায়ুসেনা সতর্ক ছিল তাই কোনও ক্ষতি তারা করতে পারেনি। ভারতীয় বায়ুসেনার সুখোই ৩০ বিমান পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান হানা রুখে দিয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ রেখার নিকটবর্তী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক প্রতিষ্ঠান (ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার, বাটালিয়ন হেড কোয়ার্টারে) আঘাত হানার লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু তা ভারতীয় এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা সতর্ক থাকার কারণেই তা লক্ষ্যে হিট করতে পারেনি। রাজৌরি সেক্টরে গিয়ে পড়েছে। তাতে এক জন ভারতীয় আহতও হয়েছে।