করোনার প্রথম সিজেনে ভারত বিশ্বের অনেক দেশকে অষুধ চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করেছিল, যার মধ্যে শত্রু দেশ চীন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশকেও ভারত চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ পাঠিয়েছে এবং পরে ভ্যাকসিনও দিয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় সিজেনে ভারতকে সাহায্য করতে পৃথিবীর তাবড় তাবড় দেশ এগিয়ে এসেছে প্রায় সব রেপুটেটেড দেশ ভারতকে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্ল্যান্ট ভেন্টিলেটর আরো অনেক কিছু জিনিস দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে।
এখানে বলা যায় ভারত সরকারের বিদেশনীতি ও উদারতা সম্পর্ক ভালো কাজ করেছে।
এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ অনুদানটি এসেছে কেনিয়া থেকে, কেনিয়া সম্পর্কে যারা জানেন না তারা জেনে রাখুন আফ্রিকান কন্টিনেন্টে দূর্বল দেশ গুলির মধ্যে একটি হলো কেনিয়া, যাদের সাথে আমরা ২০০৩ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে সেমিফাইনাল খেলেছিলাম। তারা ভারতের বিপদের দিনে জমির ফসল ১২ টন খাদ্যসামগ্রী চা কফি বাদাম কোভিড যোদ্ধাদের জন্য পাঠিয়েছে। চা কফি এগুলো আমাদের দেশে যথেষ্ট আছে আমরাই এক্সপোর্ট করি অন্য দেশে। তবুও আর্শীবাদ স্বরূপ এগুলো আমরা গ্রহণ করেছি।
আর এতেই ভারতেরই কিছু মানুষের সেন্টিমেন্টে লেগেছে যে ভারত এমন আত্মনির্ভরশীল যে কেনিয়ার থেকে সাহায্য নিতে হচ্ছে, ভারতের আর্থিক অবস্থা বর্তমানে খুব খারাপ ইত্যাদি বলে অনেকে আঙুল তুলেছেন।
এবার বলি ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন আফ্রিকার চারটি দেশে সফর করে তখন ভারত কেনিয়া সহ আরো তিনটি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সাথে দেখা করেন এবং আফ্রিকান দেশ গুলির আর্থিক সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগের চুক্তি সাক্ষর করেছিলেন । ভারত সেখানে বর্তমানে ভালো কাজ করছে রেলপথ জনমানসের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ফিসিং সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে । দিন কয়েক আগে আফ্রিকার ভেতর একটি আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠে সেই সময় লোকেদের প্রাণ বাঁচাতে ভারত সেনা ইউ এন পিস কিপিং মিশনে নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষ গুলোর প্রাণ বাঁচিয়ে সারা বিশ্বের কাছে প্রসংশা কুড়িয়েছিলো।
আজ ভালো কাজের প্রতিদানে যদি গরীব বন্ধু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সেটাতে অপমানিত হতে হয় না সেটাকে আর্শীবাদ হিসেবে গ্রহণ করা মনুষ্যত্বের ধর্মে বলে অন্তত। দেশটি দূর্বল হতে পারে তাদের মানসিকতা সত্যি অনেক বড় দেশের কূটনৈতিক কার্যকলাপের কাছে হার মানে।
এর সাথে উদাহরণ হিসেবে কেনিয়ার একটি পুরোনো ঘটনার সংগৃহীত বর্ণনা দিয়ে রাখি ~
[ আমেরিকা, ম্যানহাটান, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও ওসামা বিন লাদেনের নাম শোনা নিশ্চয়ই। তবে অধিকাংশ মানুষ হয়তো শুনেননি ‘ইনোসাইন গ্রাম’ যা কেনিয়া ও তানজানিয়া সীমান্তে পড়ে এবং এখানকার স্থানীয় উপজাতি মাসাই।
আমেরিকায় ৯/১১ এর হামলার খবর মাসাইদের কাছে পৌঁছাতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। এই খবর তাদের কাছে তখন পৌঁছায় যখন তাদের গ্রামের নিকটবর্তী শহরে থাকা স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিকেল স্টুডেন্ট কিমেলি নাওমা ছুটিতে কেনিয়া আসে এবং স্থানীয় উপজাতি মাসাইদের ৯/১১ এর ঘটনা শোনান।
কোন বিল্ডিং যে এত উঁচু হতে পারে যেখান থেকে পড়ে গেলে মানুষ মারা যায় এটা কুঁড়েঘরে বসবাসকারী মাসাইদের জন্য অবিশ্বাস্য ছিল তবুও তারা আমেরিকানদের জন্য দুঃখ অনুভব করেন এবং সেই মেডিকেল স্টুডেন্ট এর মাধ্যমে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে মার্কিন দূতাবাসে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠি পড়ার পর মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ উইলিয়াম ব্রাঙ্গিক প্রথমে বিমানে তারপর কয়েক মাইল ভাঙ্গা রাস্তা পার করে মাসাইদের গ্রামে এসে পৌঁছান।
গ্রামে পৌঁছাতেই মাসাই উপজাতিরা একত্রিত হয় ১৪ টি গরু কে নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চীফ এর কাছে পৌঁছায়। তাদের মধ্যে একজন গরুর গলায় দড়ি ডেপুটি চীফ এর হাতে দিয়ে একটি বোর্ডের দিকে ইশারা করেন। জানেন ওই বোর্ডে কি লেখা ছিল? লেখা ছিল -“এই দুঃসময়ে আমেরিকার মানুষদের সাহায্যার্থে আমরা এই গরু গুলো দান করছি”। হ্যাঁ ,সেই চিঠি পড়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ দেশের রাষ্ট্রদূত ১৪ টি গরুর দান নিতে শত শত মাইল পথ অতিক্রম করে আসেন।
গরু পরিবহনের অসুবিধা ও আইনি বাধ্যবাধকতায় গরু কে নিয়ে যেতে না পারায় মাসাইরা গহনা কিনে ৯/১১ মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে রাখার প্রস্তাব দেয়। যখন এই ঘটনাটা আমেরিকার সাধারণ নাগরিকের কাছে পৌঁছায় তখন কি হয়েছিল জানেন?
তারা তখন গহনার পরিবর্তে গরু নেওয়ার জন্য জেদ ধরেন। অনলাইন পিটিশন সাইন করা হয় যে তাদের গহনা নয় গরুই চাই। সরকারের কাছে ইমেইল পাঠানো হয় আর আমেরিকা বাসীরা মাসাই উপজাতি আর কেনিয়ার জনগণকে তাদের অভূতপূর্ব ভালোবাসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান।
১২ টন শস্য প্রশস্ত মনে গ্রহণ করুন। দান নয়, দাতার হৃদয় দেখুন, পাথরের আকার নয় পাথর উঠিয়ে সেতুতে দেওয়া কাঠবিড়ালির শ্রদ্ধা দেখুন।]
কিছু মানুষ যতোই নিজের দেশটাকে ছোট করে দেখার চোখ রাখুক কিন্তু চোখ খুললেই মানবতার বিচারে ভারত পৃথিবীর সেরা দেশ গুলির মধ্যে অন্যতম।