ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা হবে কিনা এই নিয়ে দাবি ও পাল্টা দাবি চলছে বহুদিন ধরেই। পৃথিবীর সব বড় বড় ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজের নিজের দেশ থাকলেও হিন্দুদের নিজের কোনো দেশ নেই – এই অভিযোগ আছে অনেকেরই।
আর এইসব তর্কবিতর্কের মাঝেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে ঘোষণা করলেন যে ভারত ইতিমধ্যে হিন্দু রাষ্ট্রই আছে। একে আলাদা করে হিন্দু রাষ্ট্র করার কিছু নেই।
গত ১৪ই মার্চ আরএসএস-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা – অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার তিন দিনের বৈঠক শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবালে হরিয়ানার পানিপথের কাছে সমলখাতে একটি সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দেন। সেখানেই হিন্দু রাষ্ট্র (হিন্দু জাতি) সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দত্তাত্রেয় হোসাবলে বলেছিলেন যে ভারত ইতিমধ্যেই একটি হিন্দু জাতি। ‘রাষ্ট্র’ এবং ‘জাতি’ দুটি ভিন্ন জিনিস বলেও তিনি জানান।
দত্তাত্রেয় হোসাবলেকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন যে সারা দেশে যেমন ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নিয়ে বিতর্ক চলছে, তাই এ বিষয়ে আরএসএসের দৃষ্টিভঙ্গি কী? তখনই তিনি এই উত্তর দেন। এছাড়াও এই সম্মেলনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং লন্ডনে রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক ভারত-বিরোধী মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন দত্তাত্রেয় হোসাবলে।
তিনি বলেন‚ আরএসএস হিন্দু রাষ্ট্র ইস্যু সম্পর্কে অনেক আগেই বলেছে যে‚ ভারত একটি হিন্দু জাতি। হিন্দুত্ব কোনো ধর্মীয় ধারণা নয়‚ এটি একটি সাংস্কৃতিক ধারণা। আমরা গত ১০০ বছর ধরে বলছি এটা হিন্দু জাতি। আমাদের কোনো হিন্দু জাতি বানানোর দরকার নেই। এটি ইতিমধ্যেই তাই আছে।
‘রাষ্ট্র’ এবং ‘জাতি’ এর পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন যে‚ ‘রাষ্ট্র’ এবং ‘জাতি’ দুটি ভিন্ন জিনিস। ‘রাষ্ট্র’ সংবিধান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। ‘রাষ্ট্র’ একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা। অন্যদিকে ‘জাতি’ একটি সাংস্কৃতিক ধারণা। অতএব, ভারতের ‘জাতি’ একটি হিন্দু জাতি। এর মানে এই যে, এই ভূখণ্ডের সাংস্কৃতিক ধারণাকে আপনি হিন্দু, ভারতীয় বা সনাতন যাই বলুন না কেন তা একটি হিন্দু রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের ধারণা ধর্মগত নয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে‚ অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা (এবিপিএস) হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। ABPS আরএসএস এর বিভিন্ন রাজ্য ইউনিটের ১৪০০ টিরও বেশি প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত, এবং এটি সংগঠনের নীতি, কর্মসূচি এবং কৌশল নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বার্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত করে। ABPS সঙ্ঘের সর্বোচ্চ কার্যনির্বাহী সংস্থা সরকার্যবাহ (সাধারণ সম্পাদক) এবং সেইসাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের নির্বাচিত করে। এবিপিএস সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এবং এর বিভিন্ন অনুমোদিত সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদান করে।এবিপিএস এর বার্ষিক সভা ১২ ই মার্চ থেকে ১৪ই মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত হরিয়ানাতে আয়োজিত হয়েছিল। বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষও এই সভায় অংশ নিয়েছিলেন।
সৌভিক দত্ত