সূচনা হতে আমরা যদি দেখি তবে উপলব্ধি করতে পারব যে , দীর্ঘ সময় ধরে বামপন্থী মনস্ক বুদ্ধিজীবী, বিদ্বদজন অর্থাৎ যাঁরা হলেন তথাকথিত ভাল শিক্ষিত সুশীল সমাজের একাংশ , দীর্ঘকাল ধরে তারা নিরপেক্ষতা ,সর্বধর্মসমন্বয়ের মুখোশ পরে , ক্রমাগতভাবে কেবল ও কেবলমাত্র হিন্দু সামাজিক রীতিনীতি, আচার আচরণ , প্রথা , পূজা , উপাচার ও উৎসবকে কেন্দ্র করে অপব্যাখ্যা, অপপ্রচার করার প্রবণতা প্রবলভাবে বৃদ্ধি করেছে। সুপরিকল্পিতভাবে তারা সামাজিক মাধ্যম, সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র, নাটক, সাহিত্য, কবিতার মাধ্যমে হিন্দু সমাজকে আক্রমণ করেই চলেছে। বলিউড অর্থাৎ হিন্দি ( উর্দু) চলচ্চিত্র জগৎ উক্ত বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দুর্গাপূজাকে ছোটো করার জন্য তারা বারংবার মা দুর্গার অপব্যাখ্যা করে তাঁকে শ্যাম বর্ণ অসুর হত্যায় লিপ্ত গৌরবর্ণা ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রে তারা নানাভাবে প্রমাণ করার প্রচেষ্টা এখনও করে যায় যে দেবীদুর্গা বর্ণ বিদ্বেষী।এসব নিয়ে তারা JNU ও যাদবপুরে আলোচনা সভা করে হিন্দু দেবীর বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করতেও পিছপা হয় নি।
২০১৯ সালে এক বিশেষ সংবাদ সংস্থা বড় বড় বিজ্ঞাপন হোর্ডিংএ কলকাতা শহর মুড়ে ফেলেছিল এটা বলে যে , দুর্গা স্তোত্র ও অঞ্জলী মন্ত্রে উচ্চারিত ও উল্লিখিত পুত্রান দেহি ব্রাহ্মণ্যবাদী ও নারী বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রের ফল। নারীদের নীচু করতেই এই বৈষম্যমূলক আচরণ। দূর্গা পূজার অঙ্জলী তে কেন পুত্রান দেহি বলা হয়েছে এটা নারীদের সাথে বৈষম্য মূলক আচরণ। কিন্তু পুত্র অর্থাৎ মন্ত্র অর্থে যেকোনো সন্তানকেই বোঝানো হয়েছে , সম্পূর্ণ দুর্গা পূজা ও মন্ত্র যে নারিশক্তির আরাধনা সেসব এইসব বুদ্ধিজীবীরা সম্পূর্ণভাবে সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছে। অন্য নব্যধর্মগুলিতে যে নারীদের প্রতি কতটা অত্যাচার ও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় সেসব নিয়ে তাদের মুখে কোনো শব্দ উচ্চারিত হয় না।
শুধু কি দুর্গা পূজা? উত্তর থেকে দক্ষিণ , পূর্ব থেকে পশ্চিম হিন্দু ধর্মের যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কটাক্ষ, কুযুক্তি, কটূক্তি , অপব্যাখ্যায় রত হয় সুশীল বুদ্ধিজীবী সমাজ। যেমন –
১. কালী পূজা বা দীপাবলিতেই শুধু মাত্র দূষণ হয় বাকি সময় যানবাহনের শব্দ ও ধোঁয়া , মাইকের শব্দ তাদের কানে যায় না । শুধুমাত্র আত্সবাজি জ্বালানোর জন্য দূষণ হয় কিন্তু আগাছা জ্বালানো ও অন্যান্য সমস্ত কারণ যার জন্যে আবহাওয়া দূষিত হয় সেক্ষেত্রে কোনো কথা বলেন না ।
২. দোল উৎসব, বসন্তের উৎসব …. কিন্তু তাকে কামুক উৎসব বলে দেগে দেওয়া বা জল অপচয় নিয়ে নানা কথা বলা এখন ফ্যাশনে পরিণত করার প্রয়াস চালাচ্ছে।
৩. জন্মষ্টমীতে গবাদি পশুর উপর অত্যাচার হয় অথচ নির্বিচারে গোহত্যা নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই । তারা শুধুই কুকুরের জন্য চিন্তিত অন্য পশু মরলে তাকে সযত্নে এড়িয়ে যায়।
৪. বিসর্জন দিলে জল দূষণ হবে কিন্তু বছর ভর নদী নালাতে কারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ ও শহরের নোংরা পরলে যেন কোনো ক্ষতিই হয় না!
৫. করবাচৌথ একটি নারীর প্রতি বৈষম্য মূলক উৎসব ।
৬. ছট পূজা একেবারেই পরিবেশ বিরোধী…. হ্রদ পুকুর তাতে দূষিত হয়। কিন্তু সেই হ্রদ পুকুর বুঝিয়ে যখন বহুতল গজিয়ে ওঠে তাতে কোনো দূষণ হয় না!
এরকম বহু বহু উদাহরণ যেখানে কন্যাদান, হিন্দু বিবাহ প্রথা , জাতপাত কে অপব্যাখ্যা করে অন্য ভাবে হিন্দুদের ভাবাবেগকে আঘাত করে তাদেরকে ছোটো করার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে পুরো হিন্দু সমাজ লজ্জা কুন্ঠা অপরাধ বোধে আর উৎসব অনুষ্ঠান না করে। ধীরে ধীরে আগামী হিন্দু প্রজন্ম যাতে লজ্জায় নিজের উৎসব কে উপেক্ষা করে অন্য ধর্মের উৎসবের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এইসব বুদ্ধিজীবীদের কিন্তু খ্রীষ্টমাসে গাছ কাটা বা ঈদে যথেচ্ছ পশু কাটা ও পশুদের প্রতি পাশবিক ব্যবহার কে নিয়ে বলার সাহস নেই । এসব অকাজ কুকাজে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন হিন্দু সমাজেরই কিছু লোক এব্যাপারে সদা তৎপর ও অত্যন্ত উৎসাহী ।
এব্যাপারে নবতম সংযোজন জেহাদী মনোপ্রবৃত্তি রাখা শাবানা আজমি , যে মুসলিম মহিলাদের দূরাবস্হা নিয়ে কিছুই বলে না বা কোনো রকম ভাবেই সোচ্চার নয় । নবরাত্রি এলেই এদের মত লোকেদের প্রবৃত্তি হয় হিন্দু মহিলাদের সমাজে স্থান ভীষণ নীচে সেটা প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করা। উক্ত মহিলা এবং তার অনুগামীরা এটা বোঝানোর চেষ্টা করে যায় যে , হিন্দু মহিলাদের সাথে প্রতিনিয়ত অত্যাচার , অপমান , বৈষম্য চলছে এবং শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে । সমাজে এসব হচ্ছে এটা নিয়ে সন্দেহ নেই এবং সত্যি এগুলি নিন্দনীয় ঘটনা কিন্তু ঘটনার নিন্দা না করে ধর্মকে জুড়ে ধর্মকে নিচু দেখানোর চেষ্টা করার বিষয়টি সুরকিকল্পিত।
তবে প্রথম বার এদেরকে যোগ্য জবাব দিয়ে একটি টুইট আসে যেখানে বলা হয় যে “ আমরা প্রার্থনা করি যাতে এই ঈদে কোনো আয়েশার ৬ বছর বয়েসে বিয়ে না হয় , কোনো শাহ বানো তিন তালাকের শিকার না হয় , কোনো মীনা কুমারীর হালালা না হয় , কোনো ফাতিমা কারো চতুর্থ স্ত্রী না হয় , কোনো শেয়লা কে বুর্খার অন্ধকারে জীবন না অতিবাহিত করতে হয় , কোনো ঈশরত কে আততায়ী না হতে হয় এবং কোনো মুমতাজ কে ১৪ নম্বর সন্তানের মা না হতে হয় “…. কিন্তু এটি নিয়ে একটি বিবাদ তৈরী হয় অভিনেত্রী কঙ্গনা রানায়তের নাম যুক্ত হওয়ায়। এদিকে শাবানা আজমিও বলেন যে নবরাত্রী নিয়ে তিনি কোনো ট্যুইট করেন নি । এব্যাপারে পরিপুষ্ট তথ্য না থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এরকম এক চোখোমী পক্ষপাত দুষ্ট একপেশে হিন্দু ধর্মকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া অপপ্রচার , অপব্যাখ্যা ও অপমান মূলক বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র সাহিত্য নাটক গান ও অন্যান্য রকম মাধ্যমকে তাদের ভাষায় জবাব দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে । আমাদের বুঝতে হবে সমাজে অসঙ্গতি অসামঞ্জস্য ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু অপপ্রথা ও অনাচার রয়েছে এবং তাদের শেষ করা জরুরী কিন্তু সেটা সব ধর্মেই কম বেশী রয়েছে তাই সেইসব জিনিস কে লক্ষ্য করে তাদের স্হায়ী সামাজিক সমাধান দরকার না কি হিন্দুদের রীতিনীতি উৎসব ও আচার কে একপেশে পক্ষপাত দুষ্টভাবে অপমান করা । তাই পরিশেষে এটাই বলতে হয় বামপন্হীরা যে কোনো হিন্দু উৎসব বামপন্হী সাহিত্যের ( যেখানে মিথ্যার ইতিহাস ও হিন্দুদের কে ছোটো করার সব উপাদান থাকে) ভান্ডার নিয়ে বসে পরেন কারণ তারা শুধু হিন্দুদের কে লক্ষ্য করেন কিন্তু অন্য ধর্মীয় উৎসবের তাদের টিকিটাও পাওয়া যায় না কিংবা হিন্দু উৎসবে বড় বড় সরকারী বিজ্ঞাপন ছাপা হয় “ ধর্ম আমার ধর্ম তোমার উৎসব সবার “ কিন্তু অন্য ধর্মের উৎসবে এসব বিজ্ঞাপন লাগানোর হিম্মত সরকার দেখায় না তাই আমাদের উত্তর দেওয়া আর এদের ভাওতার মুখোঁশ খুলে ফেলা জরুর আর এটা মনে রাখতে হবে যেসব হিন্দুরা নিরপেক্ষ থেকে এসব কুৎসা আর অপপ্রচার করছে তারা নিরপেক্ষ বা পক্ষপাতহীন নয় বরং পর্দার আড়ালে তারা অন্য কোনো স্বার্থসিদ্ধির উৎসাহে নক্কার জনক ও ধ্বংসাত্মক বামপন্হী মনোভাবাপন্নতার শিকার ও তাদের সেবক ।
©অভিজিৎ সেন